সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৪ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : পদ্মা সেতুতে ঈদ উল ফিতরের আগেই মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দিতে পারে সরকার। এজন্য সেতু মন্ত্রণালয় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের কাছে এ–সংক্রান্ত নথিপত্র পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
পদ্মা সেতু ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের প্রথম দিন রাতেই সেতুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই তরুণ নিহত হয়। এরপর ওই সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
এদিকে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও থেমে নেই পারাপার। মোটরসাইকেল চালকরা ট্রাক-প্রিকআপ ভ্যানে করে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করে সেতু পার হচ্ছেন। এতে করে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অথচ মোটরসাইকেল নিয়ে সেতু পারাপারের টোল মাত্র ১০০ টাকা।
দেশের পশ্চিমাঞ্চলের লাখ মানুষের স্বপ্নের এই সেতু চালু হওয়ার পর ফেরি সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে মোটরসাইকেল চালকরা বিপাকে পড়েন। কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে কিংবা ট্রলারেও পদ্মা পার হয়েছেন।
সেতুতে পুনরায় মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি দিতে দীর্ঘদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাইকার্সরা ঢাকায় জড়ো হয়ে আন্দোলন করছিলেন। তারা যেকোনো শর্ত মেনে সেতুতে মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করতে চান।
এদিকে পদ্মা সেতুতে কেন পুনরায় মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি দেবে না তা জানতে চেয়ে হাইকোর্টে এক আইনজীবী রিটও করেন।
পদ্মা কর্তৃপক্ষের এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে সেতু কর্তৃপক্ষ নিচ্ছেন। এ–সংক্রান্ত নথিপত্র প্রস্তুত করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হচ্ছে। অনুমতি পেলে ঈদুল ফিতরের আগেই পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলতে পারে। মোটরসাইকেল সেতুর দুই প্রান্তের আলাদা দুটি লেন দিয়ে চলাচল করবে বলে ওই প্রকৌশলী জানিয়েছেন।
সেতু উদ্বোধনের পর প্রথম দিনে অন্তত ৪৫ হাজার যানবাহন পারাপার হয়। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ছিল ২৭ হাজার। ফলে বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় হয় সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপার করে।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের ওই প্রকৌশলী আরও জানান, গত সপ্তাহে সেতুর নিরাপত্তা নিয়ে জাজিরার শেখ রাসেল সেনানিবাসে একটি সভা হয়েছে। ওই সভায় সেতু কর্তৃপক্ষ, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সবদিক ভেবে সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের ব্যাপারে লিখিতভাবে সরকারের উচ্চপর্যায়ে তুলে ধরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের টোল প্লাজা ও সংযোগ সড়কের (সংরক্ষণ ও সার্ভিস) নির্বাহী প্রকৌশলী লক্ষ্মীকান্ত বিশ্বাস জানিয়েছেন, সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। সিদ্ধান্তটি সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আসবে। তারা এ–সংক্রান্ত নথিপত্র প্রস্তুত করেছেন। অনুমতির জন্য আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে।
গত বছরের ২৫ জুন ঘটা করেই বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন (২৬ জুন) সকাল ৬টা থেকেই ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। সে সময় অন্য যানবাহনের সঙ্গে ঢল নামে মোটরসাইকেলেরও। পরে ওইদিনই সেতুতে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় দুইজনের মৃত্যু হয়। এরপর ২৭ জুন ভোর ৬টা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরবাইক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার।
সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো হলো পদ্মা সেতু। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। দ্বিতল এই সেতুর এক অংশ মুন্সিগঞ্জের মাওয়া এবং অপর অংশ শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যুক্ত।