শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন
রিয়াদ হোসেন, সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ শীতের প্রাকৃতিক আবহাওয়া ইতিমধ্যে আমরা উপভোগ করতে শুরো করেছি।বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের শীতটা একটু আগে ভাগেই শুরো হয়ে থাকে। সকালের কুয়াশার চাদর ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে মিষ্টি রোদ। চারদিকে পরিযায়ী পাখির কলকাকলি, দূর্বা ঘাসের ওপর স্বচ্ছ টলমলে শিশির বিন্দু, চোখ জুড়ানো শস্যক্ষেত,মাঠে মাঠে শীতের শাক-সবজি সব মিলে শীত ঋতু এক আলাদা অনুভূতি যোগ করে আমাদের জীবনযাত্রায়। পাশাপাশি টাটকা শাক-সবজিতে রসনা তৃপ্তির এ এক অনন্য মাস। এ ঋতুতে রসনা তৃপ্তির জন্য নানা সুস্বাদু খাবারের পাশাপাশি অনেকেরই খাবার টেবিলে যোগ হচ্ছে পরিযায়ী পাখির মাংস। অথচ সকালের ঘুম ভাঙে পাখির গানে। সন্ধ্যার আঁধার নামে পাখির ডাকে। গান, গল্প, কবিতা, ছড়া সৃষ্টি হয় পাখিকে নিয়ে। পাখিকে পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ বললেও ভুল হবে না।এতসব কিছুর পরও আমরা প্রকৃতি থেকে তার অলংকার সরিয়ে দিচ্ছি। নির্বিচারে হত্যা করছি এসব পাখিকে। তালা উপজেলার খেশরা ইউনিনের সোনা কুঁড়ির বিল,যেখানে প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে অতিথি পাখির আানাগুনা। প্রতি বছর উত্তরের শীতপ্রধান আঞ্চল থেকে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আসে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। যেগুলো ‘অতিথি পাখি’ নামে পরিচিত।আবহাওয়া পরিবর্তন, খাদ্যের সন্ধান ও প্রজননসহ নানা কারণে তারা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগমনঘটে এদের। রগুলিন্দা, গিরিয়া হাঁস, ভূতি হাঁস ইত্যাদি পাখি এখন ভিড় জমাচ্ছে সোনা কুঁড়ির জলাশয়ে। এ পাখিদের সঙ্গে মিলেমিশে এক হয়ে গেছে স্থায়ীভাবে বাস করা বক, ডাহুক, ডুবুড়ি, কালেম, পানকৌড়িসহ অন্যান্য জলচর পাখি। কিন্তু এরই মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে পরিযায়ী পাখি শিকারের কথা। মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তের রসনা বিলাসের শিকার হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী এসব পাখি। পাখি শিকারকে কেন্দ্র করে খেশরা,শাহাজাতপুরের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে শিকারি দল। তারা এয়ারগানের পাশাপাশি যাঁতিকল, বিষটোপ, ঘুমের ওষুধ, ফাঁস জালসহ নানা কৌশলে পাখি শিকার করছে। স্থানীয় এক শিকারির সাথে কথা বললে তিনি সাতক্ষীরা জার্নালকে জানান,”বর্তমানে পাখির ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে এক একটা পাখি।তাছাড়া সারাদিন কাজ করলে পায় ৩০০ টাকা,আমি যদি ২ ঘন্টা পাখি ধরি তাহলে আমি প্রায় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করতে পারি।আমরা এই সব কারনেই এটাকে পেশা বা নেশা হিসেবে বেঁছে নিয়েছি।” শিকারিদের পাশাপাশি এলাকার সচেতন বিত্তশালী পরিবারগুলো এয়ারগান নিয়ে হাতের নিশানা পরীক্ষা করতে আশপাশের বিল থেকে অবাধে শিকার করছে পরিযায়ী পাখি। কেউ কেউ আবার পরিবারের অন্য সদস্যদের পাখির মাংসের স্বাদ পাওয়াতে বেছে নিচ্ছে এমন অসদ উপায় । একজন শিক্ষিত মানুষ শখের বসেই শিকার করুক আর একজন অশিক্ষিত মানুষ অসচেতনতাবশত শিকার করুক; পাখি শিকার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি পরিযায়ী পাখি শিকার করেন তাহলে তার সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া পরিযায়ী পাখির দেহের কোনো অংশ সংগ্রহ, কেনাবেচা কিংবা পরিবহন করলে সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ত্রিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে সর্বোচ্চ ১ বছর কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। বিষয়টি নিয়ে পার্শ্ববর্তী পুলিশ ক্যাম্পে কথা বললে এ এস আই আবুল কালাম বলেন, “আমরা বিষয়টি সম্পর্কে ইতোমধ্য অবগত হয়েছি।আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি শিকারিদের কে আইনের আওতায় আনার জন্য এবং যাতে সোনাকুঁড়ি বিলে পাখিদের নিরাপদ অভয়াশ্রম হয় সেদিকে লক্ষ রাখছি।” তাই আমরা যদি পাখির মাংস খাওয়া বন্ধ করি তাহলেই কমে যাবে পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্য। শুধু আইনের মাধ্যমে নয় সবার সচেতনতার মাধ্যমে পাখি শিকার বন্ধ করতে পারলেই আমরা ফিরিয়ে দিতে পারব পাখিদের নিরাপদ চারণভূমি। নিশ্চিত করতে পারব সোনাকুঁড়ি বিলে আগত সব অতিথি পাখির বাসস্থান।