জরুরি ভিত্তিতে তিস্তা সংকটের একটি কার্যকর ও স্থায়িত্বশীল সমাধান নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন)।
আজ রবিবার বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘সংকটে তিস্তা নদী : সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।
বাপা সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপা’র সহ-সভাপতি ও বেন-এর বৈশ্বিক সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জমান।
মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, তিস্তা মহাপকিল্পনার সংকটের মূল কারণ তিস্তা বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম আন্তঃসীমান্ত নদী।
কিন্তু ভারতের সাথে কোনো পানিবন্টন চুক্তি না থাকা ও আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পানি প্রবাহ এক তরফাভাবে উজানে বাঁধ, জল-বিদ্যুত কেন্দ্রের মাধ্যমে সব ঋতুর পানি নিয়ন্ত্রণ করার কারণে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ভাটিতে অবস্থিত বাংলাদেশের সাথে পরামর্শ না করে শুকনো মৌসুমে প্রবাহকে অন্যান্য অববাহিকা অঞ্চলে সরিয়ে নেওয়া এবং বর্ষাকালে ইচ্ছামতো পানি ছাড়ার ফলে বন্যার ঝুঁকি, নদীতীরের ভাঙন বৃদ্ধি, পানি-নিরাপত্তার অভাব এবং বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসের অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতিসংঘের উন্নয়ন ও গবেষণা বিভাগের (সাবেক) গবেষণা প্রধান ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ভারত কর্তৃক তিস্তার প্রবাহের উপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন ও প্রবাহ অপসারণ এবং দেশের ভেতরে অনুসৃত বিভিন্ন অনুপযোগী নীতি অনুসরণের ফলে তিস্তা নদী এক গভীর সংকটে নিপতিত। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব, বর্ষাকালের বন্যা, অসময়ে বন্যা, প্রকট নদী ভাঙন, ইত্যাদি বহুমুখী সমস্যা দ্বারা তিস্তাপাড়ের প্রায় দুই কোটি মানুষের জীবন জর্জরিত।
তিস্তা সমস্যার আশু সমাধান অত্যন্ত জরুরি।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না।
নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে। দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বার্থ উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখা। যেসব প্রকল্প দীর্ঘ মেয়াদি সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই দেশের জনগনের মতামত গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে ওয়াটার ডিপ্লোমেসি অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা নদী রক্ষা করতে চাই, কিন্তু সেটাকে খালে পরিণত করে নয়।
প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশের বিশেষজ্ঞ, গবেষক, স্থানীয় জনগনের মতামতকে প্রধান্য দিতে হবে, বিদেশে বিশেষজ্ঞ হায়ার করে নয়। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান তিনি।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনার সিদ্ধান্ত এক তরফাভাবে নেওয়া ঠিক হবে না। ভারত, নেপালসহ অববাহিকার সব দেশকে সম্পৃক্ত করে টেকসই প্রকল্প নিতে হবে। এই প্রকল্পের আরো পাবলিক হেয়ারিং ও পুনঃপর্যালোচনা করার দাবি জানান তিনি।
বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার বলেন, তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আদায় করার জন্য ভারতের সাথে আলোচনা করতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আইনের আশ্রয় নিতে হবে। ৫৪ বছর ধরে বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও সংস্থার দ্বারা প্রকল্প গ্রহণের ফলে প্রকল্পগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
বাসদ (মার্কসবাদী)-এর সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, বর্তমান সরকার এতো জনগুরুত্ব প্রকল্প জনগণের আড়াল করছে। উপযুক্ত পরিকল্পনার মাধ্যমে তিস্তা সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে তিস্তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ভারত বিভিন্ন সময় আমাদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। ভারতের কাছ থেকে আমাদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে। জাতীয় স্বার্থে তিস্তার সমস্যা সমাধানে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।