শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: ত্রাণ চুরি এবং স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির অভিযোগগুলোকে মানবতাবিরোধী হিসেবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। এছাড়া এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত সব ব্যক্তিকে আইনের আওতায় নিয়ে আনারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আজ শুক্রবার বিকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে মান্না তার দলের পক্ষ থেকে আটটি প্রস্তাব তুলে ধরেন।
করোনা পরিস্থিতিতে মাহমুদুর রহমান মান্না’র ৮ দফা প্রস্তাব
এক.
দিন আনা দিন খাওয়া দুই কোটি পরিবারের ৩ মাসের খাবার নিশ্চিত করার জন্য সরাসরি খাদ্য অথবা অর্থ সহায়তা প্রদান করতে হবে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ২ কোটি মানুষের জন্য ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
দুই.
ডাক্তার, নার্স তথা সকল স্বাস্থকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনু্যায়ী সুরক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের জন্য মাসে ২৫,০০০ থেকে ১ লক্ষ টাকার প্রণোদনার ঘোষণা দিতে হবে। করোনায় আক্রান্ত বা মৃত্যবরণকারী সরকারি-বেসরকারি সকল চিকিৎসকের সরকারি বীমা নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেক উপজেলায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সরকারি হাসপাতাল, স্থানীয় প্রশাসন এবং এনজিও’র মাধ্যমে কোভিড-১৯ টেস্টিং বুথ স্থাপন করতে হবে। অবিলম্বে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে। করোনা চিকিৎসার সকল সুবিধাসহ ১০ হাজার আইসিইউ বেডের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ক্রমান্বয়ে তা বাড়ানোর জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিন.
দরিদ্র কৃষকদের সমস্ত ঋণ মাফ করে দিতে হবে। আর যারা মাঝারি চাষী তাদের ঋণের সুদ ৬ মাসের জন্য মওকুফ করে দিতে হবে। চলতি বোরো মওসুমের খাদ্য শস্য কর্তনের জন্য বিনা খরচে সরকারি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং উৎপাদিত চালের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ সরকারকে ন্যায্যমূল্যে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কিনে নিতে হবে। পোলট্রি, দুগ্ধ ও পশুর খামারি, মৎস্য খামারি সহ সকল কৃষি ঋণের সুদ ৬ মাসের জন্য মওকুফ করতে হবে এবং ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ মওকুফ করতে হবে।
চার.
ত্রাণ বিতরণ, টিসিবি’র কার্যক্রম তদারকি, রেশনিং এবং কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার দায়িত্ব সামরিক বাহিনীর হাতে দিতে হবে। সামরিক বাহিনী অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, তথাকথিত জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং এনজিও – এর সমন্বয়ে তালিকা, বিতরণ, বিপননের ব্যবস্থা করবে। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং ত্রাণ কার্যক্রম দুটোর জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠনকে যুক্ত করে আলাদা আলাদা মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।
পাঁচ.
৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া স্থানীয় প্রশাসন এবং তথাকথিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাড়িওয়ালাদের প্রদান করতে হবে। ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক আয়ের মানুষদের বাড়ি ভাড়ার অর্ধেক সরকারকে বহন করতে হবে। মধ্যবিত্তদের মধ্যে যারা অর্থকষ্টে ভুগবেন তাদের জন্য স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। সকল ধরনের গৃহস্থালি ইউটিলিটি বিল (যেমনঃ গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি) আগামী ৩ মাসের জন্য মওকুফ করে দিতে হবে।
ছয়.
প্রণোদনার নামে যে ঋণ প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে তা যেন সঠিকভাবে বিতরণ করা হয় তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এবং বর্তমান গভর্ণর ও শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যক্তিবর্গ, এনজিও প্রতিনিধি, অর্থনীতিবিদ, গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিসহ একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, সরবারাহকারী (ট্রেডিং ব্যবসা) এবং বিভিন্ন ধরণের সেবা প্রদানকারী ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে, কম সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ সুবিধা প্রদান করতে হবে। যে সকল প্রবাসীগণ করোনার কারণে চাকরি হারাবেন বা ইতোমধ্যে হারিয়েছেন তাঁদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশেষায়িত হিসেবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং কর্মসংস্থান ব্যাংককে সুস্পষ্ট নির্দেশনাসহ দায়িত্ব দিতে হবে। যারা বিভিন্ন দেশে কর্মহীন অবস্থায় আটকে গেছেন তাঁদের সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
সাত.
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার খরচ, বেতন ইত্যাদি আগামী ৬ মাসের জন্য মওকুফ করে দিতে হবে। মাদ্রাসা ভিত্তিক লিল্লাহ বোর্ডিং, বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত এতিমখানা এবং বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে আগামী ৩ মাসের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।
আট.
ত্রাণ চুরি এবং স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির অভিযোগগুলোকে মানবতাবিরোধী হিসেবে দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং এর সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত সকল ব্যক্তিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। করোনা পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করবার জন্য এখনই দেশের অর্থনীতিবীদ, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশাজীবী, এনজিও প্রতিনিধির সমন্বয়ে ৩-৫ বছর মেয়াদী একটি স্থায়ী ‘জাতীয় পুনর্গঠন কমিটি’ গঠন করতে হবে যা যেকোন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও বহাল থাকবে।