বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: নিরীহ মানুষের কাছ থেকে দখল করা ও খাস জমিতে প্লট বানিয়ে বিক্রি করে তিনশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ইমাম হোসেন নাসিম (৬৬)। ‘নাসিম রিয়েল এস্টেট’ নামে ডেভেলপার কোম্পানি খুলে এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। শতাধিক প্রতারণা মামলার আসামি নাসিমের বিরুদ্ধে ৫৫টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এতগুলো মামলা মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে থাকতেন ইমাম হোসেন নাসিম। তবে শেষ রক্ষা হলো না তার। গত বুধবার রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকা থেকে তৃতীয় স্ত্রী হালিমা আক্তার সালমাসহ তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪। গতকাল বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক জানান, গ্রেপ্তারের সময় ইমামের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি, এক লাখ ৩৫ হাজার জাল টাকা, এক হাজার চারশ পিস ইয়াবা, বিদেশি মদ, চারটি ওয়াকিটকি সেট, ছয়টি পাসপোর্ট, ৩৭টি ব্যাংক চেক ও ৩২টি সিমকার্ড জব্দ করা হয়েছে।
র্যাব-৪-এর প্রধান জানান, সাভারের কাউন্দিয়া এলাকায় খাস ও নিরীহ মানুষের জমি দখল করে ‘নাসিম রিয়েল এস্টেট’ কোম্পানির সাইনবোর্ড টানিয়ে রাখতেন নাসিম। সহজে জমি নিজের দখলে না এলে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখাতেন। জায়গাটিকে আবাসিক নগর করার স্বপ্ন দেখিয়ে বায়নানামা করার নামে প্রায় পাঁচ হাজার ব্যক্তির প্রত্যেকের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে নিয়েছেন তিনি। ২৫০ জনের সঙ্গে ভুয়া চুক্তিপত্র করে তিনি প্রত্যেকের কাছ থেকে ১২ থেকে ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নাসিমের গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলায়। তবে প্রায় ৪০ বছর আগে বাবা বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় চলে আসেন তিনি। বেলায়েত হোসেন ভোলায় গ্রাম্য ডাক্তার ছিলেন। নাসিম নিজেকে গ্র্যাজুয়েট বলে দাবি করেন। আশির দশকে ঠিকাদারি করতেন নাসিম। ঠিকাদারির কাজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২০০২ সালে ‘নাসিম রিয়েল এস্টেট’ নামে একটি ভুঁইফোঁড় কোম্পানি খোলেন। শাহ আলী থানাধীন ২৫/২৯, চিড়িয়াখানা রোডে এটির অফিস। বুধবার ওই অফিসে অভিযান পরিচালনার সময় তার মালিকানাধীন ১৬টি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০০৫ সালে নামসর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠানের নামেও মানুষের কাছ থেকে নানাভাবে টাকা আত্মসাৎ করেছেন নাসিম। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি বাসার আন্ডারগ্রাউন্ডে গোপন সুড়ঙ্গ করেছিলেন এবং সুড়ঙ্গে ছিল ফিঙ্গার প্রিন্ট-সংবলিত দরজা। ফিঙ্গার প্রিন্ট-সংবলিত দরজার কক্ষে তিনি আত্মগোপনে থাকতেন। নাসিমের অনুপস্থিতিতে তার তৃতীয় স্ত্রী হালিমা আক্তার সালমা কোম্পানির কার্যক্রম দেখতেন। অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, নাসিম ও হালিমা নামে-বেনামে ৩২টি সিমকার্ড ব্যবহার করতেন, যা প্রতারণার কাজে ব্যবহার হতো। মানুষকে ফাঁদে ফেলে টাকা আত্মসাৎ করার পর ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেতেন তারা। ইয়াবা ও বিদেশি মদের ব্যবসাও করতেন নাসিম। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি ও খুচরা মাদকদ্রব্য বিক্রি করতেন এ দম্পতি। এ ছাড়া এ দম্পতির জালনোট তৈরির ব্যবসা ছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।