শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২০ পূর্বাহ্ন
তুরস্ক জানিয়েছে, তারা সিরিয়ার ভেতরে ঢুকে কুর্দিদের একটি বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক এক সামরিক অভিযানের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। নেটো জোটের মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও তুরস্ক এই অভিযান চালাতে যাচ্ছে। তুরস্ক এই অভিযান শুরু করলে সিরিয়ার সাত বছরের গৃহযুদ্ধ আবারও একটি নাটকীয় মোড় নেবে। কিন্তু কেন এমন একটি বড় সংঘাতে যাচ্ছে? পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে এখানে।
সিরিয়ার উত্তর পূর্বাঞ্চলের আফরিন অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করে একটি সিরিয়ান কুর্দি মিলিশিয়া গোষ্ঠী ওয়াইপিজি। তুরস্ক এই কুর্দি মিলিশিয়াদের সন্ত্রাসী বলে গণ্য করে।
তুরস্কের ভেতরে পি-কে-কে নামের যে কুর্দি গোষ্ঠীটি সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে, সিরিয়ার এই কুর্দি মিলিশিয়াদের তাদের সহযোগী বলেই মনে করে তুরস্ক।
সিরিয়ার আফরিন অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ যাতে এই কুর্দি মিলিশিয়াদের হাতে চলে না যায়, তুরস্ক সেটা নিশ্চিত করতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্র এই কুর্দি মিলিশিয়াদের নিয়ে ৩০ হাজার সদস্যের একটি সীমান্ত রক্ষী বাহিনী তৈরি করতে চায় বলে খবর প্রকাশের পর তুরস্ক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। সিরিয়ায় যাতে আবার ইসলামিক স্টেটের পুনরুত্থান না ঘটে সেজন্যে এ ধরণের মিলিশিয়াদের কাজে লাগানোর কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এমন অভিযোগ তোলেন যে যুক্তরাষ্ট্র আসলে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করতে চাইছে। তিনি এই চেষ্টা ভন্ডুল করে দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।
সিরিয়ার সীমান্ত লাগোয়া দুটি শহর আফরিন এবং মানবিজ থেকে তিনি এই কুর্দিদের নির্মূল করার জন্য শীঘ্রই অভিযান শুরু হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
তবে কুর্দি মিলিশিয়া গোষ্ঠী ওয়াইপিজি তাদের বিরুদ্ধে তুরস্কের এসব অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছে। ওয়াইপিজি বলছে, তাদের সঙ্গে তুরস্কের কুর্দি গোষ্ঠী পি-কে-কে’র কোন সরাসরি সম্পর্ক নেই।
সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট জঙ্গীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওয়াইপিজি বিরাট ভূমিকা রেখেছিল। তারা যুক্তরাষ্ট্র এবং আরব যোদ্ধাদের সঙ্গে মিলে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
তুরস্ক ইতোমধ্যে আফরিন অঞ্চল বরাবার তাদের সীমান্তে বিপুল সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে। সেখানে ট্যাংক বহর মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্যদিকে কুর্দি মিলিশিয়া নেতারা যে কোন মূল্যে তুরস্কের আক্রমণ প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে।
তুরস্কের এই অভিযানের পরিণতি কী দাঁড়াতে পারে:
তুরস্কের এই অভিযান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারে। যদিও এই দুই দেশ নেটো জোটের সদস্য হিসেবে সামরিক মিত্র।
অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের ওপরও এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে।
আফরিনে রাশিয়ার শত শত সৈন্য আছে। সেখানকার আকাশসীমা মূলত রুশ বাহিনীই নিয়ন্ত্রণ করে।
তবে রাশিয়া যদি তুরস্ককে এই অভিযান চালানোর সবুজ সংকেত দেয়, তাহলে মস্কো এবং আংকারার সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হতে পারে।
এই লড়াই আফরিনে বিরাট মানবিক বিপর্যয়ও সৃষ্টি করতে পারে। সেখানে প্র্রায় দশ লাখ মানুষের বাস।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা বলছে, সেখান থেকে লোকজনের পালিয়ে যাওয়ার কোন খবর তারা এখনো পায়নি। তবে প্রয়োজনে জরুরী ত্রাণ সাহায্য পৌঁছানোর জন্য তারা প্রস্তুত।