রাজধানীর বাড্ডায় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)-এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেনের প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দখলবাজির তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বাংলা এডিশন টিমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
আজ দুপুরে রাজধানীর সাতারকুলের মগরাদিয়া মাকান হাউজিং এলাকায় এই হামলার শিকার হন বাংলা এডিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মৃদুল ইসলাম এবং চিত্র সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনুসন্ধানী তথ্য ও ভিডিও সংগ্রহের সময় হঠাৎ একদল সন্ত্রাসী সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়। মৃদুল ইসলামকে হেনস্তা করা হয় এবং দেলোয়ারকে বেধড়ক মারধর করা হয়। দেলোয়ার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় উপর্যপুরি আঘাতে ঘটনাস্থলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হামলাকারীরা সাংবাদিকদের ক্যামেরা ছিনিয়ে ভেঙে ফেলে এবং ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
অভিযোগ রয়েছে, মাকান হাউজিং এলাকায় ‘রিয়াজুল জান্নাহ ইসলামিয়া মাদ্রাসা’ প্রতিষ্ঠা করেছেন সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন, যার আড়ালে তিনি অন্তত ৪০টি প্লট দখল করে রেখেছেন। এলাকাবাসীর দাবি, এই মাদ্রাসার ছাত্র পরিচয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসীরাই হামলা চালিয়েছে সাংবাদিকদের ওপর। মোশাররফের দুই ভাই ও তার গাড়িচালক হামলার সময় উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলা এডিশনের অনুসন্ধান টিম স্থানীয়দের কাছ থেকে মোশাররফ হোসেনের দখল, ফাউন্ডেশন ও প্রকল্পে অনিয়মের তথ্য নিচ্ছিল—এমন সময়েই হামলাটি ঘটে। এ ঘটনায় বাড্ডা থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে, তারা বিষয়টি তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় আহত সাংবাদিক ইতোমধ্যে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের টিম কাজ করছে। সকল তথ্য যাচাই করে দ্রুত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে শেয়ারবাজারে কারসাজি, দুর্নীতি ও সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তদন্ত করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিএসইসির তিন সদস্যের কমিটি তাঁর বিরুদ্ধে বিমা প্রতিষ্ঠানের গোপন তথ্য ব্যবহার করে শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করছে। এর আগে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তারিত প্রতিবেদন দুদকে পাঠায়।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১৫ জুন দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগ করেন ড. মোশাররফ হোসেন। তাঁর নামে রাজধানীর কাফরুল, শেওড়াপাড়া ও ধানমন্ডিতে তিনটি বিলাসবহুল বাড়ি, সাতারকুলে বিশাল হাউজিং প্রকল্প এবং কোয়ান্টাম প্লাস ফাউন্ডেশনের নামে একাধিক প্রতিষ্ঠান থাকার তথ্য মিলেছে।