মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৭ অপরাহ্ন
ডেস্ক নিউজ: অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রায় ৫৫ ঘন্টা পর নিজ দেশে ফিরেছেন পাক বাহিনীর হাতে বন্দি হওয়া ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমান। আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্তে উইং কমান্ডারকে স্বাগত জানাতে শত শত মানুষের ভিড়। মুক্তি পাওয়া সেনাকে ‘জাতীয় বীর’হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু দেশে ফিরেই কি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন তিনি? ভারতীয় সেনারা ঠিক কী করবে অভিনন্দনের সঙ্গে?
শুক্রবার (১ মার্চ) রাত ৯ টা ২০ মিনিটে ভারতীয় পাইলটকে দেশে ফেরত পাঠায় পাক সেনারা। এসময় ওই পাইলটকে ফেরত দিতে সঙ্গে ছিলেন পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।
পাইলটকে ফিরে পেয়ে বিশেষজ্ঞদের দাবি, হামলা চালতে গিয়ে অসীম সাহসের পরিচয় দিয়েছেন অভিনন্দন বর্তমান। ১৯৭০ সালে তৈরি পুরনো মিগ-২১ নিয়ে অত্যাধুনিক পাক যুদ্ধবিমান এফ-১৬কে তাড়া করে সে দেশে ঢুকে পড়েন তিনি। এর জন্য অবশ্যই প্রশংসা প্রাপ্য তার। কিন্তু শত্রুদেশের হেফাজত থেকে ফিরেছেন, দফায় দফায় জেরার মধ্য দিয়ে যেতেই হবে অভিনন্দনকে।
এদিকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে যদিও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে অভিনন্দন কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন, বিমানবাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। তবে দেখে নিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হলে কী কী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে অভিনন্দনকে।
১. ওয়াঘা সীমান্ত থেকে নিজের বাড়ি ফিরতে পারবেন না অভিনন্দন। বরং সেখান থেকে সরাসরি বিমানবাহিনীর গোয়েন্দাদের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে তাকে।
২. বেশ কিছু ডাক্তারি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে অভিনন্দনকে। দেখা হবে তিনি ফিট কিনা।
৩. বন্দিদের শরীরে অনেকসময় মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে আড়ি পেতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেয় শত্রুপক্ষ। অভিনন্দনের শরীরে সেরকম কোনো চিপ বসানো হয়েছে কিনা, তা স্ক্যান করে দেখা হবে।
৪. মনোবিদের কাছেও নিয়ে যাওয়া হবে অভিনন্দনকে। বন্দি থাকা অবস্থায় ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রান্ত তথ্য হাতাতে শত্রুপক্ষ তাকে অত্যাচার করেছে কিনা তা জানার চেষ্টা করা হবে। পাকিস্তানে কোনো ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে কিনা সে বিষয়েও তথ্য বের করা হবে।
৫. অভিনন্দনকে জেরা করতে আনা হতে পারে ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) এবং রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র) এর দুধর্ষ কর্মকর্তাদের। তবে সচরাচর পাইলটদের তাদের হাতে তুলে দেয় না বিমানবাহিনী। তাই অভিনন্দনের ক্ষেত্রে এটা নাও হতে পারে।
৬. পাকিস্তানে পা রাখা থেকে শুরু করে ওয়াঘা সীমান্ত পার করে দেশে ফেরা- গোয়েন্দাদের কাছে প্রতি মুহুর্তের সবিস্তার বর্ণনা দিতে হবে অভিনন্দনকে। বন্দি অবস্থায় তার কাছে কী কী জানতে চাওয়া হয়, সেটাও জানাতে হবে।
৭. বুধবার তিনি বিমানে ওঠা থেকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বিমান ভেঙে পড়া পর্যন্ত গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণ করবেন গোয়েন্দারা।
৮. পাকিস্তান সেনাবাহিনী তার মিগকে নিশানা করতে কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছিল, সেটার সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। তার সঙ্গে থাকা কোন কোন নথি তিনি নষ্ট করতে পেরেছিলেন এবং কী কী নথি পাক সেনার হাতে পৌঁছেছে তারও তালিকা তৈরি করা হবে।
৯ শত্রুপক্ষের হাতে বন্দি ছিলেন অভিনন্দন। সেখানে তাকে আপসের কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কি না, তাকে ব্যবহার করার কোনো চক্রান্ত কোনো করা হয়েছি কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করবেন গোয়েন্দারা। এই গোটা পদ্ধতিকে সামরিক পরিভাষায় বলা হয় ‘ডিব্রিফিং’।
১০. গোয়েন্দাদের সামনে জবানবন্দি এবং ডাক্তারি পরীক্ষায় নিজেকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম প্রমাণ না করতে পারলে, অভিনন্দনের আর কোনোদিনই যুদ্ধবিমানে ওঠা হবে না। সে ক্ষেত্রে ডেস্কের কাজে বসিয়ে দেওয়া হতে পারে তাকে। তবে তার সঙ্গে কোনোরকম বৈষম্যমূলক আচরণ করা হবে না। খেয়াল রাখা হবে, কোনো পরিস্থিতিতেই তাকে যেন অসম্মানিত হতে না হয়।