সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৫ অপরাহ্ন
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : একমাত্র শিশুকন্যা ইরা ও স্ত্রী মতিয়াকে নিয়ে সুখেই চলছিলো ঠাকুরগাঁওয়ের দক্ষিণ সালন্দর মুন্সিপাড়া এলাকার কাঠমিস্ত্রি ইউনুস আলীর। গত বছর হঠাৎ করে গালে একটি ছোট ঘাঁ হয়।
আর সেই ঘাঁ সাড়াতে দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে তাকে দুটো দাঁত তুলে ফেলতে বলে চিকিৎসক। কথামতো দুটো দাঁত তুলে ফেলে ইউনুস। ভালোও হয় সেই ঘাঁ।
কিন্তু গত কোরবানী ঈদের পরই ঘটে বিপত্তি। দেখা দেয় আবারও সেই পুরনো ঘাঁ। এবার আবার ঘাঁ কমার কোন লক্ষণই নেই। ক্রমাগত বাড়তে থাকে সেটি। ঠাকুরগাঁও, রংপুরে চিকিৎসা করেও কোন লাভ না হওয়ায় বাড়ী-ভিটে সব বিক্রি করে দিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যায় সে।
সেখানে ৩৩টি রেডিও থেরাপী দেওয়া হলেও সারেনি সেই ঘাঁ, এদিকে ফুরিয়ে যায় বাড়ী ভিটে বিক্রি করা চার লক্ষ টাকা। অবশেষে বাড়ী ফিরে আসে ইউনুস আলী।
বাড়ীতে আসার কিছু দিনের মধ্যেই ফুটো হয়ে যায় গাল। এতে বন্ধ হয়ে যায় খাওয়া-দাওয়া। পরে হাসপাতাল থেকে পাইপে খাওয়ার বন্দোবস্ত করে নেওয়া হয়।
সব কিছু হারিয়ে বর্তমানে বিনা চিকিৎসায় ধীরে ধীরে মৃত্যু পথযাত্রী সে।
এমন খবর পেয়ে তার সাহায্যে এগিয়ে আসে মানবতার কল্যাণ ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন। মানবতার কল্যাণ ফাউন্ডেশনের ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সদস্য পবিত্র দেব সমীর এর ঐকান্তিক প্রচষ্টোয় ও তার ব্যক্তি উদ্যোগে অসহায় ইউনুসের বাসায় গিয়ে তার চিকিৎসার জন্য ২৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেন।
১৫ মার্চ দুপুরে ইউনুসকে চেক প্রদানকালে ঠাকুরগাঁও অনলাইন প্রেসক্লাবের আহ¦ায়ক বিধান চন্দ্র দাস, সালন্দর ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর লতিফা বেগম, সাংবাদিক এন্টনী ডেভিড, জয় মহন্ত অলকসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
সালন্দর ইউনিয়ন পরিষদের ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর মোছা. লতিফা বেগম জানান, একটি টগবগে যুবক চিকিৎসা অভাবে মৃত্যুর প্রহর গুণছে।
সহায় সম্পদ বিক্রি করে সে এখন নি:স্ব, তার সাহায্যে মানবতার কল্যাণ ফাউন্ডেশন এগিয়ে আসায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞা জানান তিনি।
অসুস্থ ইউনুসের বোন শরীফা জানান, ভাইয়ের দিকে তাকানো যায় না।
চিকিৎসা করাতে সব কিছু বিক্রি করে বিনা চিকিৎসায় আমার ভাইটা এখন মৃত্যু পথযাত্রী।
আমার তেমন সামর্থও নেই যে ভাইকে যাহায্য করবো।
এসময় তিনি ভাইকে বাাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন।
ইউনুসের স্ত্রী মতিয়া কান্নজড়িত কন্ঠে বলেন, স্বামীকে সুস্থ করতে একমাত্র সম্বল বাড়ী ভিটেটাও বিক্রি করে চিকিৎসা করা হয়েছে, তারপরও সুস্থ হয়নি আমার স্বামী।
বর্তমানে অন্যের বাসায় কাজ করে কোনরকম সাড়ে তিনবছর বয়সী মেয়ে আর স্বামীকে জীবিত রাখতে পেরেছি। এসময় স্বামীর সুস্থতার জন্য সকলের সাহায্য চান তিনি।
মানবতার কল্যাণ ফাউন্ডেশনের ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সদস্য পবিত্র দেব বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অর্থাভাবে চিকিৎসাহীন রয়েছে ইউনুস আলী।
এমতাবস্থায় ব্যক্তি উদ্যোগে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হলো।
পরবর্তীতে তিনি ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি হলে আমাদের মানবতার কল্যাণ ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান জি এম সৈকত ও উপদেষ্টা ডিআইজি হাবিবুর রহমান তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার আশ্বাস দিয়েছেন।