বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: ফেসবুকে বিদেশি বন্ধু সেজে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নিঃস্ব করে দেয়াই তাদের কাজ। নিজে থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে শুরুতে মেসেঞ্জারে এবং পরবর্তীতে হোয়াটসঅ্যাপে শুরু হয় তাদের যোগাযোগ। এরপরে গিফট পাঠানোর ওসিলায় শুরু হয় তাদের টাকা হাতানো। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সাইবার পুলিশ, সিআইডির অভিযানে ১৬ নাইজেরিয়ানসহ মোট ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার রাজধানী মিরপুরের পল্লবী এলাকা থেকে ১৫ নাইজেরিয়ান নাগরিক গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই বাংলাদেশি এবং একজন নাইজেরিয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক ব্রিফিং এ তথ্য জানিয়েছে সিআইডি।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, দামি গিফটের প্রলোভন দেখিয়ে এসব নাইজেরিয়ানরা দেশের মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিলো। ফেসবুকে বন্ধুত্বের ফাঁদ পেতে দেশে থাকা ‘নাইজেরিয়ান ফ্রড’ নামে একটি গ্রুপ এই কাজ করছিল। এছাড়াও সংঘবদ্ধভাবে প্রেমের ফাঁদ পেতে তারা জানাতো বিদেশ থেকে পাঠানো হয়েছে মূল্যবান গিফট। সে উপহার ছাড়িয়ে নিতে একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক একাউন্টে কাস্টমস ডিউটি শোধ করতে বলা হয়। এ ফাঁদে পা দিয়ে বেশ কয়েকজন অর্থ খুঁইয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দেয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, দুই বাংলাদেশি ইমরান হোসেন (৩২) ও হারুন-অর-রশিদ (৩৫) এবং ১৬ জন নাইজেরিয়ার নাগরিক- চিমেজি ওয়েরনা (৩৬), এজিনা চুকোজেকো (২৯), চিমাওবি আত্তা গ্যাবরিয়েল (২৭), কিনেচুকো স্ট্যানলি এমবিএ (৩৭), ওকেকে কেলেস্টাইন আবুচি (৩৪), উজুগবো সেমুয়েল একেনে (৩০), উফুচকু টচুক উ উচেন্না (৪৩), অবুকা সানডে ইমানুয়েল (৩৪), এন্ডুমারু চিনেদা (২১), এনুগুও লাইক এন্থনি অক উদিরি (৩৬), সিল্বুইফ এজেওনি ওবিনোয়ান্নে (৩৩), ওগুচুকু ডারর্লিংটন চিকেলু (৩৬), কেনেচুকু চার্লস অনওয়াচু (৩৮), ওজোর এমজিবো হেনরি ইজাইক (৩৪), চিবুজোর এনওয়ানেতি ভিক্টর (৪৪), আনোরুকা গিনিকা ফ্রান্সিস (২৬)।
আজ বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যমতে রাজধানীর পল্লবী এলাকায় তাদের একটি গোডাউন থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ক্রয় করা বিপুল গার্মেন্টস পণ্য উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় মোট ৭ লাখ ২২ হাজার টাকা যা নাইজরিয়ান মুদ্রায় ২৯ হাজার, বিভিন্ন মডেলের ২৩টি মোবাইল ফোন, ১৫টি পাসপোর্ট, বিপুল পরিমাণ গার্মেন্টস প্রোডাক্ট জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের পাসপোর্ট-ভিসা পর্যালোচনা করে দেখা যায় তারা ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে বাংলাদেশে থাকছিলেন। যদিও তারা তাদেরকে বিজনেস ম্যান হিসেবে দাবি করে।
এক ব্যক্তি সিআইডিতে অভিযোগ করে জানান, কিছুদিন আগে তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে একটি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পায়। সেটা এক্সেপ্ট করলে তার সাথে ম্যাসেঞ্জার ও পরবর্তিতে একটি বিদেশি নম্বত থেকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ
হতে থাকে। এক পর্যায়ে ওই বিদেশি বন্ধু ভিকটিমকে বেশ কিছু গিফ্ট পাঠাবেন বলে জানায়। এত গিফট তাকে কেন পাঠানো হবে তা জানতে চাইলে বিদেশি বন্ধু জানায় তার আ্নেক টাকা আছে আর সে ভুক্তভোগীকে ভালো বন্ধু হিসেবেই এটি দিতে চাচ্ছে। এর বিনিময়ে সে কিছুই চায় না। বিদেশি বন্ধু আরো জানায় উক্ত গিফ্টের প্যাকেটে আইফোন, আইপ্যাডসহ বেশ কিছু ডলারও থাকবে। এর কয়েকদন পরেই ডিকটিম একটি বাংলাদেশি নম্বর থেকে ফোন পায়। সেখানে কেউ একজন কাস্টমস
কর্মকর্তা পরিচয়ে তাকে জানায় যে তার একটি গিফটের প্যাকেট এসেছে কিন্তু দেশের নিয়ম অনুযায়ী কাটমস ডিউটি না দিয়েই এ প্যাকেট চলে এসেছে। সুতরাং তাকে প্যাকেট ছাড় করাতে হলে ৪৫ হাজার টাকা দিতে যবে। পরে চাহিদামত একটি একাউন্টে টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু আবারও ফোন আসে জেতার পার্সলে নগদ কিছু টাকা পাওয়া গেছে তাই তাকে আরো ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। তা না হলে কার বিরুদ্ধে কাস্টমস আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হবে। এই অবস্থায় ভীত হয়ে পড়ে ভুক্তভোগী সিআইডি শরণাপন্ন হন।
সিআইডি সূত্র জানায়, সাইবার পুলিশ, সিআইডি ফোন দেওয়া নাম্বারে সূত্র ধরে কাজ শুরু করে। পরে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত দুজন বাংলাদেশি এবং একজন নাইজেরিয়ান কে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য মতে, গত বুধবার রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে বাকিদের গ্রেফতার করা হয়।