মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে করা মামলায় কারাবন্দি মুন্সীগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের দ্রুত ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। আজ শনিবার এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি জানায়, ওই ঘটনা বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতার সর্বশেষ দুর্গের ওপর সরাসরি আঘাত।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার উপ-আঞ্চলিক পরিচালক স্মৃতি সিং বলেন, একজন শিক্ষককে ক্লাসে পড়াতে গিয়ে শুধু তার মতামত প্রকাশের জন্য কারাগারে যেতে হয়―এটি খুবই ভয়ানক। কোনো ধরনের আঘাতের ভয় ছাড়াই শিক্ষকদের সব ধরনের ধারণা ও মতামত নিয়ে আলোচনা করা উচিত।
স্মৃতি সিং বলেন, কেবল মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগ করার জন্য অবিলম্বে ও নিঃশর্তে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে মুক্তি দিতে হবে।
বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দ্রুত সংকুচিত হচ্ছে উল্লেখ করে স্মৃতি সিং বলেন, হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের গ্রেপ্তার বাংলাদেশের অস্বস্তিকর প্রবণতার প্রতীক। ক্লাসে কেবল মত বা ধারণা নিয়ে আলোচনা করার জন্য একজন শিক্ষককে আটক করা একটি বিপজ্জনক নজির। এমনকি সমালোচনামূলক চিন্তা করার জন্য চ্যালেঞ্জ করা শিক্ষার্থীদেরও জেলে যেতে হতে পারে।
এই ঘটনাকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি অবক্ষয়ের লজ্জাজনক প্রমাণ উল্লেখ করে স্মৃতি সিং বলেন, শিক্ষকরা যাতে ভয় ছাড়াই ক্লাসে অবাধে কথা বলতে পারেন সে জন্য এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
উল্লেখ্য, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান পড়ানোর সময় প্রসঙ্গক্রমে শিক্ষার্থীর প্রশ্নে ধর্ম নিয়ে কথা বলেন। হৃদয় মণ্ডলের সেই কথা কয়েকজন শিক্ষার্থী রেকর্ড করে এবং পরে ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর কথা বলার অভিযোগ তুলে কিছু শিক্ষার্থী ও ব্যক্তি এলাকায় তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। ওই অবস্থায় এ শিক্ষককে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার পুলিশ নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়। এরপর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী (ইলেকট্রিশিয়ান) মো. আসাদ বাদী হয়ে হৃদয় চন্দ্রের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।
গত ২৩ মার্চ তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করলে জেলহাজতে পাঠানো হয়। দুইবার তার জামিন বাতিল করা হয়েছে। কাল রবিবার জেলা ও সেশন জজ আদালতে তার জামিনের ব্যাপারে পরবর্তী শুনানি হবে।