শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেফতার বেআইনি ঘোষণা করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। একইসঙ্গে, তাৎক্ষণিকভাবে তাকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
এর আগে, শীর্ষ বিচারপতিদের নির্দেশে বৃহস্পতিবার (১১ মে) বিকেলে ইমরান খানকে আবারও সুপ্রিম কোর্টে হাজির করা হয়। এদিন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘এক ঘণ্টার মধ্যে’ পিটিআই চেয়ারম্যানকে আদালতে হাজির করার জন্য ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবলিটি ব্যুরোকে (এনএবি) নির্দেশ দেন বিচারপতিরা।
জিও নিউজের খবর অনুসারে, ১৫টি গাড়ির বিশাল বহর নিয়ে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ইমরান খানকে সুপ্রিম কোর্টে হাজির করা হয়।
সর্বোচ্চ আদালত তাকে স্থানীয় সময় বিকেলে সাড়ে ৪টায় হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এনএবি কর্মকর্তাদের। তবে নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টারও বেশি সময় পরে বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে পিটিআই চেয়ারম্যানকে আদালতে নেওয়া হয়।
শুনানি শুরু হলে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি (সিজেপি) উমর আতা বন্দিয়াল ইমরান খানকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনাকে দেখে ভালো লাগলো। আপনাকে গ্রেফতারের পর কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আমরা দেশে শান্তি চাই।
এরপর তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, ইমরান খানের গ্রেফতার বেআইনি ছিল।
তবে যে মামলায় ইমরানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছিল, আগামীকাল অর্থাৎ শুক্রবার (১২ মে) ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আবারও তার শুনানির নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, হাইকোর্ট যে সিদ্ধান্ত নেবেন, আপনাকে তা মেনে নিতে হবে। সিজেপি বলেন, প্রত্যেক রাজনীতিবিদের কর্তব্য আইনের শাসন বজায় রাখা।
এর আগে, দিনের শুরুতে প্রধান বিচারপতি ইসলামাবাদ হাইকোর্ট (আইএইচসি) প্রাঙ্গণ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতার দেশটির বিচার ব্যবস্থার জন্য ‘বড় অসম্মান’ বলে অভিহিত করেন। ইমরান খানের গ্রেফতারকে চ্যালেঞ্জ করে পিটিআইয়ের আবেদনের শুনানিতে এই মন্তব্য করেন তিনি। সিজেপি ছাড়াও তিন সদস্যের ওই বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলী মাজহার।
শুনানির শুরুতে ইমরানের আইনজীবী হামিদ খান সর্বোচ্চ আদালতকে জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ইসলামাবাদ হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। তার ভেরিফিকেশন চলাকালে হঠাৎ রেঞ্জার্স সদস্যরা রুমে ঢুকে পড়েন। রেঞ্জার্স ইমরান খানের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এবং তাকে গ্রেফতার করে।
এ পর্যায়ে সিজেপি বান্দিয়াল যে মামলায় ইমরান খান জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করছিলেন, সে বিষয়ে খোঁজখবর নেন। বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনের আগে আবেদন করা যাবে কি না তা জানতে চান বিচারপতি মিনাল্লাহ।
এসময় আইনজীবী বলেন, ইমরান খান বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনের জন্য গিয়েছিলেন, কারণ এর আগে আবেদন করা যায় না।
বিচারপতি মিনাল্লাহ বলেন, এনএবি কেন আইন হাতে তুলে নিল? আইএইচসি রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে অনুমতি নিলে এনএবির জন্য তা ভালো হতো।
তিনি বলেন, প্রতিটি নাগরিকের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং সর্বোচ্চ আদালতকে তার বিধান নিশ্চিত করতে হবে। এসময় দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন এ বিচারপতি।
প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল প্রশ্ন করেন, আদালত চত্বর থেকে গ্রেফতারে আদালতের পবিত্রতা কোথায় গেলো? এসময় ইমরান খানকে কতজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা গ্রেফতার করতে গিয়েছিলেন, তা জানতে চান সিজেপি।
তখন ইমরানের আইনি দলের আরেক সদস্য সালমান সফদার আদালতকে জানান, ৮০ থেকে ১০০ জন গিয়েছিল পিটিআই প্রধানকে গ্রেফতার করতে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, যখন ৯০ জন লোক আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে, তখন আদালতের সম্মানের আর কী অবশিষ্ট থাকে? এনএবি আদালতকে অসম্মান করেছে। আদালতের ভেতরে আর কেউ নিরাপদ বোধ করবে না।
তিনি বলেন, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট বা জবাবদিহি আদালত থেকে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। ইমরান খানের গ্রেফতার বিচারিক পবিত্রতা লঙ্ঘন করেছে।