সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীতে দুই বাসের রেষারেষিতে চাপায় পড়ে হাত হারিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া কলেজছাত্র রাজীব হোসেনের দুই ভাইয়ের পড়ালেখার দায়িত্ব সরকার নেবে বলে জানিয়েছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
তিনি বলেন, রাজীবের পরিবার চাইলে তার ছোট দুই ভাই মেহেদি ও আব্দুল্লাহর পড়ালেখার দায়িত্ব নেবে সরকার।
একই সঙ্গে রাজীবের পরিবারের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ৫০ হাজার টাকা ছাড় করানো হয়েছে বলেও জানান রাশেদ খান মেনন।
গত ৩ এপ্রিল বিআরটিসির একটি দ্বীতল বাসের পেছনের গেটে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন তিতুমীর কলেজের ওই ছাত্র। তার হাতটি সামান্য বাইরে বেরিয়ে ছিল। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে হঠাৎই পেছন থেকে স্বজন পরিবহনের একটি বাস বিআরটিসি বাসটিকে ওভারটেক করার জন্য বাম দিকে গা ঘেঁষে পড়ে। এতে দুই বাসের চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দুই-তিন পথচারী দ্রুত তাকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেও বিচ্ছিন্ন হাতটি রাজীবের শরীরে আর জুড়ে দিতে পারেননি।
শমরিতা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাজীবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু সাময়িক উন্নতির পর গত সোমবার থেকে তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। রাজীবের মস্তিষ্ক অসাড় হয়ে যায়। সেই থেকে আর জ্ঞান ফেরেনি তার।
১৩ দিন পরে সোমবার রাত ১২টা ৪০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি মারা যান। মঙ্গলবার দুপুরে জোহর নামাজের পর হাইকোর্ট মসজিদে রাজীবের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
পরে ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজীবের মরদেহ পটুয়াখালীর বাউফলে পৌঁছায়। এ সময় নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
রাজীবের বাবা হেলাল উদ্দিন দাশপাড়া গ্রামের ওই বাড়িতে প্রায় ২৫ বছর আগে জমি কিনে ওখানেই বসতি গড়েন। হেলাল উদ্দিনের মূল বাড়ি ওই উপজেলার ইন্দ্রোকূল গ্রামে। ৩ ভাইয়ের মধ্যে রাজীব সবার বড়। এ ছাড়া ছোট দুই ভাই বাপ্পি ৮ম শ্রেণি এবং হৃদয় ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করে।
রাজীবের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় মা এবং অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা মারা যায়। তাদের মৃত্যুর পর বড় খালা জাহানারা বেগম বোনের ৩ ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে যান। ঢাকায় খালার বাড়িতে থেকেই ৩ ভাই লেখাপড়া করে আসছিলেন। ঢাকার মতিঝিলে খালার বাসায় থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে স্নাতকে ভর্তি হন রাজীব।
পড়ালেখার ফাঁকে একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করে নিজের আর দুই ভাইয়ের খরচ চালানোর সংগ্রাম করে আসছিলেন রাজীব।