রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভারে ৮ তলা রানা প্লাজা ভেঙে পড়ে ১১শর বেশি পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ছিল শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্ব-ইতিহাসেরই অন্যতম ভয়াবহ শিল্প-দুর্ঘটনা।
এ ঘটনার পর মামলা হয়েছে মোট ১৪টি। এর মধ্যে রয়েছে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশের মামলা, রাজউকের করা ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন এবং নিহত একজন পোশাক শ্রমিকের স্ত্রীর করা খুনের মামলা।
মূলত ঘটনার পরেই সাভার থানাপুলিশ একটি মামলা করে। পরে একজন শ্রমিকের স্ত্রীও খুনের মামলা করলে দুটি মামলা একটিতে রূপ নেয় তদন্তের পর।
অন্য আরেকটি মামলা হয়েছিল ভবন নির্মাণ সম্পর্কিত। বাকি ১১টি মামলা করেছিলো কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।
এসব মামলার দিকে নজর রাখছিলেন বাংলাদেশের লিগাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট। সংস্থাটির আইন শাখার উপপরিচালক মোঃ বরকত আলী বলছেন, এসব মামলার কোনোটিরই চূড়ান্ত ফল আসেনি। তবে দুদকের মামলায় সাজা হয়েছে যদিও সেটি ছিল ভিন্ন মামলা। মূলত সব মামলার প্রায় আসামিরা একই। অর্থাৎ একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছিলো ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগে। এখন শ্রম আদালতে এগারটি মামলা বিচারাধীন আছে। বিচারিক আদালতে ফৌজদারি মামলা ও ক্ষতিপূরণের মামলাও বিচারাধীন।
অথচ রানা প্লাজার বিপর্যয়ের পরপরই ‘অবহেলা জনিত’ মৃত্যুর অভিযোগে মামলা করেছিলো সাভার থানা পুলিশ, যাতে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ও ওই ভবনের থাকা পোশাক কারখানার মালিকসহ ২১ জনকে আসামি করা হয়৷
আর ইমারত আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সোহেল রানা ও তার পিতা সহ মোট আসামির সংখ্যা ১৮ জন।
মামলাগুলোয় বিভিন্ন সময়ে সোহেল রানা ও তার পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও সাভারের জনপ্রতিনিধি, প্রকৌশলী, গার্মেন্টস মালিক ও কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জেলে যেতে হলেও এখন তারা সবাই জামিনে আছেন।
পরে তদন্ত শেষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ভবন মালিক, গার্মেন্ট মালিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্তরের ৪১ জনের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ এনে আদালতে অভিযোগ পত্র দেয়া হয়।
কিন্তু বিচারের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই বলে দাবি করেছেন গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আক্তার।
তিনি বলেন, ৪১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছিল এবং এর মধ্যে ২ জন মারা গেছেন। ৭ জন এখনো পলাতক। সোহেল রানা ছাড়া আর কেউ জেলে নেই। বাকি সব জামিনে আছেন। এসব মামলার বিচার কবে হবে জানি না।
২০১৬ সালে ঢাকার আদালতে যে ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিলো তাদের ৩৮ জনের বিরুদ্ধেই খুনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলো পোশাক খাতে কর্মরত ১ হাজার ১৩৬জন শ্রমিক। এর মধ্যে ২৯১ জনকে ডিএনএ নমুনা রেখে দাফন করা হয়েছিলো জুরাইন কবরস্থানে। আহত হন আরও অন্তত ১ হাজার ১৬৯ জন।
তখন জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিলো ২ হাজার ৪৩৮ জনকে। পরে মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪টি – কিন্তু এর মধ্যে ১১টি হয় শ্রম আদালতে। বাকি ৩টির মধ্যে দুটিই হত্যা মামলা।
বিচারে বিলম্ব কেন?
কিন্তু এর পরও বিচারে বিলম্ব কেন? জবাবে আদালতে রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী খন্দকার আব্দুল মান্নান বলেন, কয়েকজন আসামির আবেদনের হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছিলো উচ্চ আদালত।
তিনি বলেন, ৮ জন হাইকোর্টে গিয়েছিল। পরে ৬ মাস করে ২ দফায় স্থগিতাদেশ এসেছিলো। এর পর ৭ জনের আর কোনো স্থগিতাদেশের কাগজ আমরা পাইনি। একজনের ১২ মে পর্যন্ত স্থগিতাদেশ আছে। সেটি শেষ হয়ে গেলে ১৬ মে তারিখ থেকে শুরু হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মামলাটি করার চেষ্টা করবো আমরা।
ওদিকে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থতা বা সরকারি কর্মকর্তাদের পরিদর্শনে ব্যর্থতাসহ বেশ কটি অভিযোগে শ্রম আদালতে যে ১১টি মামলা হয়েছে সেগুলোরও তেমন কোনো অগ্রগতির তথ্য জানাতে পারেনি শ্রম পরিদর্শন অধিদফতর।
অধিদফতরের প্রধান পরিদর্শক সামছুজ্জামান ভুঁইয়া শুধু বলেছেন, মামলাগুলো এগুলো বিচারাধীন আছে।
তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা ভিন্ন মামলায় সাজা হয়েছে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ও তার মা মর্জিনা বেগমের।