শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০২:১২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
পানি ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ক্যাম্পেইন প্রোগ্রামে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা দেশব্যাপী নাশকতার প্রতিবাদে কেরানীগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি নরসিংদীতে দশম শ্রেণির ছাত্রী খাদিজা আক্তার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন গণভোটের প্রশ্ন কেমন হবে, পরিস্কার করলেন প্রধান উপদেষ্টা রাজধানীজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা, মোড়ে মোড়ে তল্লাশি রমজান মাসে নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোস্তফা কামরুস সোবহান রূপালী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান পুনঃনির্বাচিত ডেঙ্গুতে আরো ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৩৯ গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ, ইস্টার্ন ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ ৩ জনের কারাদণ্ড

তাসফিয়ার শরীরে পৈশাচিক নির্যাতনের চিহ্ণ

ভিশন বাংলা ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮
  • ৫৩৫
নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসফিয়া আমিনকে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। হত্যার আগে তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল। তার সারা শরীরে মারধরের চিহ্ন রয়েছে। ডান চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। বাম চোখেও ছিল মারাত্মক জখম।
নাক, ঠোঁট ও মুখমণ্ডল ছিল থেঁতলানো ও রক্তাক্ত। দুই হাঁটুর নিচে ছিল কালো দাগ। হত্যার আগে তাকে টানা-হেঁচড়াও করা হয়েছে। দুই পায়ের নখও উপড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে কেন তাকে এত নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার কারণ এখনও খুঁজে বের করতে পারছে না পুলিশ।
এ ঘটনায় তাসফিয়ার বন্ধু সন্দেহভাজন আদনান মির্জাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে আদনানকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালত রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানির জন্য রোববার দিন ধার্য করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিকে, তাসফিয়ার খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থী ও তার সহপাঠীরা মানববন্ধন করেছে। তাসফিয়া হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে তার বাবা মো. আমিন পতেঙ্গা থানায় মামলা করেছেন। মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৫-৬ জন নাম না জানা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় আদনানকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হল- সোহাইল (১৬), শওকত মিরাজ (১৬), আসিফ মিজান (২৩), ইমতিয়াজ সুলতান ইকরাম (২৪) ও ফিরোজ (৩০)।
আসামিদের মধ্যে ফিরোজ নগরীর শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে পাঁচলাইশসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। কয়েক মাস আগে সে অস্ত্রসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে শেভরন নামে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাকাতি মামলা রয়েছে।
পতেঙ্গা থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, মামলা করার আগেই আদনানকে বুধবার রাতে খুলশির জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটির ‘রয়েল পার্ক’ভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়েছে। আদনান পুলিশকে জানায়, তাসফিয়াকে বাসা থেকে ফোনে ডেকে নিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে গিয়েছিল। আবার বাসায় ফেরার জন্য তাকে সে অটোরিকশাও ঠিক করে দিয়েছিল। এরপর কি হয়েছে তা সে জানে না।
তবে আদনানের এমন বক্তব্য বিশ্বাস করতে পারছে না পুলিশ ও তাসফিয়ার পরিবার। তার পরিবারের অভিযোগ, বন্ধুত্ব ও প্রেমের নামে তাসফিয়ার সঙ্গে প্রতারণা করেছে আদনান। পরিকল্পিতভাবে তাকে সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও হত্যার পর লাশ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ফেলে দেয়া হয়েছে।
পুলিশ ও তাসফিয়ার পারিবারিক সূত্র জানা যায়, এক মাস আগে আদনান মির্জার সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয় তাসফিয়ার। এর সূত্র ধরেই আদনান মঙ্গলবার পবিত্র শবেবরাতের দিন বিকেল ৫টার দিকে তাসফিয়াকে ফোন করে বাড়ি থেকে কৌশলে বের করে আনে।
বন্ধুত্বের মাসপূর্তি উদযাপনে চায়নিজ রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর প্রলোভন দেয়। বিকাল পাঁচটার দিকে তাসফিয়া যখন বাসা থেকে বের হচ্ছিল তখন তার মা আছরের নামাজ পড়ছিলেন। নামাজ থেকে উঠে তাসফিয়াকে না পেয়ে তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। পরদিন সকালে পতেঙ্গা সি বিচ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে বৃহস্পতিবার সকালে তাসফিয়ার লাশের ময়নাতদন্ত হয়।
চমেক হাসপাতাল মর্গের সামনে তাসফিয়ার বাবা মো. আমিন বলেন, আমার ফুটফুটে মেয়েকে আদনান পূর্বপরিকল্পনা করে খুন করেছে। আমার মেয়ের কোনো দোষ নেই। আদনানের সঙ্গে নগরীর একাধিক অপরাধী চক্রের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। আমার মেয়েকে ডেকে নিয়ে সে তাদের হাতে তুলে দিয়েছে।
তাদের এ অভিযোগ নাকচ করেছে আদনান। সে বলছে, তাসফিয়াকে রেস্টুরেন্ট থেকে নামার পর বাসায় যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় তুলে দিয়েছিল। এরপর তাসফিয়ার কী হয়েছিল তা সে জানেনা।
তবে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ওই অটোরিকশায় আরও দুই ছেলে আগে থেকেই বসা ছিল। তাদের ধরতে পারলে হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভব হবে। এছাড়া পরিবারের প্রশ্ন, চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্ট থেকে তাসফিয়ার বাসা হাঁটা দূরত্বে। এটুকু যাওয়ার জন্য সিএনজি অটোরিকশার প্রয়োজন পড়ে না। হেঁটে অথবা বড় জোর রিকশা নিয়ে যাওয়া যায়।
আদনান-তাসফিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ভালোভাবে নেয়নি তাসফিয়ার পরিবার। তাই তারা আদনানকে ডেকে শাসিয়েছিল। আর এটাকে ভালোভাবে নেয়নি আদনান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের দায়িত্বশীল ওই সূত্র জানায়, শাসানোর ‘প্রতিশোধ’ নিতেই তাসফিয়াকে নিজের গ্রুপের সদস্যদের হাতে তুলে দেয় আদনান। নগরীর গোলপাহাড় আশপাশ এলাকার ধনী বাসিন্দাদের সন্তানদের সংগঠন রিচ কিডস গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে আদনান।
সূত্রটি আরও জানায়, তাসফিয়াকে যে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে দেয় আদনান সেই অটোরিকশার পেছনেই দুটি মোটরসাইকেলে ছিল  চার যুবক। এ চার যুবক আদনানের পরিচালিত রিচ কিডস গ্রুপের সদস্য।
আদনান চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার পদুয়া ইউনিয়নের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ইসকান্দর মির্জার ছেলে। আদনান নগরীর এলিমেন্টারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। মাস খানেক আগে আদনানের সঙ্গে তাসফিয়ার ফেসবুকে পরিচয় হয়।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2011-2025 VisionBangla24.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com