শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাভারস্থ পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের খাদ্য ও বিকিরণ জীববিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের কীট জীবপ্রযুক্তি বিভাগের বিজ্ঞানীরা দেশে ডেঙ্গু বিস্তারকারী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যকরী ‘স্টেরাইল ইনসেক্ট টেকনিক (এসআইটি)’ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছেন। যা খুব শিগগিরই মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার আশুলিয়ার গণকবাড়ি এলাকায় অবস্থিত পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান ওপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এই ‘এসআইটি’ পদ্ধতির বিভিন্ন কারিগরি দিক সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পদ্ধতিটি মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।
খাদ্য ও বিকিরণ জীববিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের কীট জীবপ্রযুক্তি বিভাগের বিজ্ঞানীরা জানান, ডেঙ্গু নিরসনে ‘স্টেরাইল ইনসেক্ট টেকনিক (এসআইটি)’ পদ্ধতির প্রায়োগিক বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এসআইটি পদ্ধতিতে এডিস মশাকে গামা রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে বন্ধ্যাকরণ করা হয়। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রয়েছে এমন এলাকায় বন্ধ্যাকরণ করা এডিস মশা অবমুক্ত করা হলে তা প্রকৃতিতে বিদ্যমান স্ত্রী এডিস মশার সাথে মিলিত হয় এবং ওই স্ত্রী জাতীয় এডিস মশা যে ডিম বা লার্ভা নির্গত করে তা থেকে এডিস মশার বংশবিস্তার হয় না। এডিস মশার ডিম বা লার্ভা নিষিক্ত না হওয়ায় মশার পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি। পাশাপাশি এটি একটি পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি, তাই পরিবেশে এর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়ে না। এসআইটি পদ্ধতিতে শুধুমাত্র বন্ধ্যা পুরুষ মশাই প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হবে। যেহেতু পুরুষ মশা ডেঙ্গুর জীবাণু বহণে অক্ষম, তাই এর মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগ বিস্তারের কোনো সম্ভাবনা নেই। পুরুষ এডিস মশা মানুষকে কামড়ায় না। কাজেই বাংলাদেশ পরমাণু শষক্তি কমিশনের স্টেরাইল ইনসেক্ট টেকনিক (এসআইটি) পদ্ধতিটি দেশে ডেঙ্গুর প্রাদূর্ভাব নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের কীট জীব প্রযুক্তি বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কাজল শেহেলী জানান, স্টেরাইল ইনসেক্ট টেকনিক (এসআইটি) পদ্ধতির ফলে দেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এটি পরিবেশের উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।
তিনি জানান, গবেষণাটি এখন ল্যাব পর্যয়ে রয়েছে। এটি বড় পরিসরে করার জন্য খুব শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সহযোগিতা পেলে হয়ত অল্প সময়ের মধ্যে মাঠ পর্যয়ে এটি ছড়িয়ে দেওয়া যাবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি চায়নাতে এসআইটি পদ্ধতিটি সফলতা পাওয়ায় বাংলাদেশে এটি করার জন্য প্রস্তাব আসলে তাঁরা এসআইটি পদ্ধতির কার্যক্রম হাতে নেন। তিনি পর্যাপ্ত সহযোগিতা পেলে আগামী তিন বা পাঁচ বছরের মধ্যে এর সুফল পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
পরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাভারস্থ গণকবাড়ি পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের খাদ্য ও বিকিরণ জীববিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের কীট জীবপ্রযুক্তি বিভাগের এসআইটি পদ্ধতির ল্যাব এবং ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি (এনআইবি) ল্যাব পরিদর্শন করেন। এসময় তার সাথে ছিলেন, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক, সদস্য অধ্যাপক ড. মো: সানোয়ার হোসেন, পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক ড. এম আজিজুল হক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি (এনআইবি) এর মহাপরিচালক ড. মো: সলিমুল্লাহ, এইআরই এর বিভিন্ন ইনিস্টিটিউটের পরিচালককবৃন্দ, বিভিন্ন স্তরের বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
শেষে সাভারস্থ গণকবাড়ি এলাকায় অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি (এনআইবি) ও জাতীয় জীন ব্যাংকস্থাপন প্রকল্প পরিদর্শন করেন এবং এনআইবি’র সেমিনার কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশগ্রহণ করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।