বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০২:০১ পূর্বাহ্ন

নন লাইফে কমিশন শূন্যের প্রস্তাবে বিতর্ক, বিআইএ থেকে ফখরুল ইসলামের পদত্যাগ

তুহিন ভূঁইয়া:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫

নন লাইফ বীমা খাতে এজেন্ট কমিশন শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে বীমা কোম্পানিগুলোর মুখ্য নির্বাহীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)-এর আহ্বানে আয়োজিত এই বৈঠকে কমিশন বাতিল নিয়ে মতবিরোধের পাশাপাশি সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতাও প্রকাশ্যে এসেছে। অন্যদিকে সংগঠনটি “নিয়মবহির্ভূতভাবে পরিচালিত হচ্ছে” অভিযোগ তুলে বিআইএ নির্বাহী কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে বিআইএ প্রেসিডেন্ট সাঈদ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অংশ নেন দেশের নন লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীরা। সভায় নন লাইফ বীমা খাতে এজেন্ট কমিশন বাতিলসহ সাত দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করে এ বিষয়ে সম্মতি থাকলে অংশগ্রহণকারীদের একশ টাকার স্ট্যাম্পে লিখিত অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে আহ্বান জানান বিআইএ প্রেসিডেন্ট।

তবে এ প্রস্তাবে বেশিরভাগ মুখ্য নির্বাহী বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখান। তাঁরা বিষয়টিকে “বিব্রতকর ও বিআইএ’র সঙ্গে বেমানান” বলে মন্তব্য করেন। অনেক নির্বাহী প্রশ্ন তোলেন—বিআইএ’র আদৌ এমন অঙ্গীকার গ্রহণ বা লঙ্ঘনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আছে কি না।

সভায় কেউ কেউ আইডিআরএ নির্ধারিত কমিশন বহাল রাখার পক্ষে মত দেন, আবার অনেকে কমিশন পুরোপুরি বাতিলের পক্ষে অবস্থান নেন। বিআইএ সূত্রে জানা যায়, সভায় উত্থাপিত সাত দফা অঙ্গীকারনামায় বীমা খাতে শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও শূন্য কমিশন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

বিআইএ নেতারা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে রাজি না হলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংগঠনের একাধিক নেতা জানান, উদ্যোগটি নন লাইফ বীমা খাতের স্বচ্ছতার জন্য নেওয়া হয়েছিল। তবে কিছু শর্ত নিয়ে আপত্তি এসেছে, যা সংশোধন করে পরে পুনরায় উপস্থাপন করা হবে।

অন্যদিকে, অনেক মুখ্য নির্বাহী বলেন—“কোনো সিইও পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি ছাড়া স্ট্যাম্পে পাবলিক অঙ্গীকারে সই করতে পারেন না।” তাঁরা মনে করেন, বিআইএ’র এই কৌশল যথাযথ হয়নি এবং এটি সংগঠনের মর্যাদাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া খাতসংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, কমিশন শূন্যে নামানোর আগে বীমা আইন ও এজেন্ট নিয়োগ, নিবন্ধন ও লাইসেন্স সংক্রান্ত প্রবিধানমালা সংশোধন করা জরুরি। তারা পরামর্শ দেন, নন ট্যারিফ মার্কেট, সলভেন্সি মার্জিন ও পুনঃবীমা মুক্তকরণের মতো কাঠামোগত সংস্কারের দিকেও নজর দিতে হবে।

এ বিষয়ে বিআইএ’র সাবেক প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ (পাভেল) বলেন, “২০২১ সালে আইডিআরএ নন লাইফে কমিশন শূন্য করে দেয়, পরে ‘বীমা এজেন্ট প্রবিধানমালা ২০২১’-এর মাধ্যমে আবার ১৫ শতাংশ কমিশন নির্ধারণ করা হয়। তাই আইন ও প্রবিধানমালা সংশোধন ছাড়া কমিশন শূন্যের উদ্যোগ আইনি জটিলতা তৈরি করবে।”

তিনি আরও বলেন, “এজেন্টদের লাইসেন্স আছে, সরকার তাদের আয়ের ওপর রাজস্ব পায়। কমিশন বন্ধ করলে আইনগত প্রশ্ন উঠবে। তাই আইনের ৫৮(১) ধারা ও সংশ্লিষ্ট প্রবিধান দুটোই সংশোধন করা দরকার।”

এদিকে, একই সময় বিআইএ’র অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম নিয়েও বিতর্ক দানা বাঁধে।
সংগঠনটি “নিয়মবহির্ভূতভাবে পরিচালিত হচ্ছে” অভিযোগ তুলে বিআইএ নির্বাহী কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম।

বুধবার বিআইএ প্রেসিডেন্ট বরাবর দাখিল করা পদত্যাগপত্রে ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, “গত ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাহী কমিটির ২২৫তম সভায় বিভিন্ন কমিটি ও সাবকমিটি গঠনে স্বেচ্ছাচারিতা করা হচ্ছে এবং গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে উপেক্ষা করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না পাওয়ায় আমি সভা থেকে ওয়াকআউট করি। বিআইএ নিয়মবহির্ভূতভাবে পরিচালিত হওয়ায় এই ধরনের স্বেচ্ছাচারী নির্বাহী কমিটিতে থাকা সম্ভব নয়।”

বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নন লাইফ কমিশন ইস্যুতে উত্তেজনা ও অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব সংকটের মধ্য দিয়ে বিআইএ নতুন করে বিতর্কে জড়াচ্ছে। সংগঠনটি দেশের জীবন ও নন লাইফ উভয় খাতের বীমা কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করলেও সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো এর ঐক্য ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2011-2025 VisionBangla24.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com