মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৮ অপরাহ্ন

দুঃস্বপ্ন তাড়িয়ে বেড়াবে তাঁদের

দুঃস্বপ্ন তাড়িয়ে বেড়াবে তাঁদের

ক্রীড়া ডেস্ক : সূর্য ডুবতে ডুবতে বেজে যায় ১০টা। রাতের আঁধার ডুবে যেতে আরো কিছুটা সময় লাগে নিউজিল্যান্ডের। পরশু অবশ্য এসবের বালাই ছিল না। আকাশের আলো ফুরিয়ে আসার অনেক আগেই যে অন্ধকার নেমে আসে ওই ভূখণ্ডে! ক্রাইস্টচার্চের মসজিদের ওই হামলায় শোকের আবহ সর্বত্র। উন্মত্ত এক পৃথিবীর কাছে অবশেষে আত্মসমর্পণ শান্তিপ্রিয় দেশটির।

পরশু তাই ঘুমায় না নিউজিল্যান্ড। ক্রাইস্টচার্চ আরো না। আরো বেশি করে হয়তো ঘুম উধাও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। কোথায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টের জন্য উন্মুখ অপেক্ষায় থাকার কথা ছিল মুশফিক-তামিম-মাহমুদ উল্লাহদের, সেখানে কিনা অধীর প্রতীক্ষা দেশে ফেরার। কখন সকাল হবে, কখন বিমানবন্দর যাবেন, কখন উড়বেন বাংলাদেশে ফেরার উড়ালে। ক্রাইস্টচার্চের রক্তাক্ত প্রান্তর থেকে পালাতে পারলেই যেন বাঁচেন সবাই।

কাল স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে উঠেছে বাংলাদেশ দল। তার আগে বিমানবন্দরে আসা প্রত্যেকের চেহারায় ভয়ের ছাপ। নির্ঘুম রাত কাটানোর চিহ্ন। অন্যান্য ক্রিকেট সিরিজ থেকে দেশে ফেরার সময় ক্রিকেটারদের চোখে-মুখে থাকে আনন্দের রেশ। বাড়ি ফেরার তাড়া। মাঠের ফল যা-ই হোক না কেন, দীর্ঘ সফর শেষে বাংলাদেশে পরিবার, আত্মীয়, বন্ধুদের কাছে ফেরার আকুলতা বোঝা যায়। ব্যাকুল তাঁরা ছিলেন কালও। তবে তা প্রত্যাবর্তনের আনন্দের খোঁজে নয়, স্বস্তির সন্ধানে।

তা বাংলাদেশ সময় কাল রাতেই এসে পৌঁছেছেন ক্রিকেটাররা। ক্রাইস্টচার্চে যে ভয়ংকর অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে, সেটি সঙ্গী করেই। জুমার নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে আর তিন-চার মিনিট আগে যদি মাঠ থেকে বেরোতেন, তাহলে কী হতো কেউ ভাবতে পারছেন না। কিন্তু সে ভাবনা যে বারবার নাছোড়বান্দা আততায়ীর মতো ধাওয়া করবে, তা-ও সবার  জানা। ক্রাইস্টচার্চ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সেটি বলেছেনও ওপেনার তামিম ইকবাল, ‘যে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা আমাদের হলো এখানে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে নিশ্চিতভাবেই কিছু সময় লাগবে।’

তবু সবার স্বস্তি, দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশে ফেরার ব্যবস্থায়। এক দিনের মধ্যে এক ফ্লাইটে এত জনের টিকেট জোগাড় করা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। ক্রাইস্টচার্চ হামলার পর এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার ব্যবস্থায় তাই হাঁফ ছেড়েছেন তামিম। আর মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার জন্য সময়ের শরণ নিচ্ছেন তিনি, ‘এটি খুব ভালো ব্যাপার যে, আমরা দেশে ফিরে যাচ্ছি। ফিরে যাচ্ছি পরিবারের কাছে। কারণ আমাদের সবার পরিবারই এখন উদ্বিগ্ন। আমি আশা করছি, বাড়ি ফেরার পর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা এ ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারব।’

মসজিদে ভয়াবহ এ হামলায় প্রাণহানি ৪৯ জনের। আহত আরো অর্ধশতাধিক। তাতে শান্তিপ্রিয় দেশ নিউজিল্যান্ডের শান্তির পায়রার ডানায় লেগেছে সন্ত্রাসবাদের কালির ছোপ। দেশটি নিয়ে ধারণা বদলে গেল চিরতরে। ক্রিকেটবিশ্বও কি তাদের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবে পাকিস্তানের মতো? প্রচ্ছন্নে এমন ভাবনায় আচ্ছন্ন থাকতে পারে কিউই ক্রিকেট। তারাই আবার স্বস্তি পাবেন মুশফিকুর রহিমের কথা শুনলে। মৃত্যু থেকে তিন-চার মিনিট দূরত্বে ছিলেন, আবেগপ্রবণ এ ব্যাটসম্যানের আবেগের বাঁধ তাতে ভেঙে যাওয়াই স্বাভাবিক। ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদের বাইরে, হ্যাগলি ওভাল পার্কে, মাঠের ডেসিংরুমে কান্নায় কান্নায় সান্ত্বনা হাতড়ে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু কাল ক্রাইস্টচার্চ বিমানবন্দরে চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদককে বলা মুশফিকের কথা নিশ্চিতভাবেই আশ্বস্ত করবে শোকে মোড়ানো দেশটিকে, ‘নিউজিল্যান্ড এখনো বিশ্বের সেরা দেশগুলোর একটি। আমরা এখনো নিউজিল্যান্ডকে ভালোবাসি।’

যথার্থই বলেছেন মুশফিক। কিছু উন্মাদের কারণে তো আর একটি দেশ খারাপ হয়ে যেতে পারে না। অবশ্য ফোলা ফোলা নির্ঘুম চোখ নিয়ে নিজের স্বস্তিটাও জানিয়েছেন বাংলাদেশের এই ব্যাটসম্যান, ‘আমরা যে এখনো বেঁচে আছি, তাতেই আনন্দিত।’

মুশফিক-তামিম-মিরাজ-মুস্তাফিজদের জন্য পরশু জীবন-মৃত্যু খেলা করছিল সার্কাসের দড়ি খেলার মতো। একটু এদিক-ওদিক হলেই সব শেষ। ভাগ্যের আশ্চর্য পরশে সেটি হয়নি। এ কারণেই তো বেঁচে থাকার আনন্দটা প্রবল। কিন্তু যে মানসিক ধাক্কা এলোমেলো করে দিল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মনোজগৎ, তা ঠিক হবে কত দিনে!

সময়। একমাত্র ওই থুত্থুরে সময়-বুড়োর কাছেই আছে এর উত্তর।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com