মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩০ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা এবং তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে চলমান উত্তেজনা থামানোর আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় শক্তিগুলো। গত রবিবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানির নেতারা। একই দিন এক টেলিভিশন ভাষণে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, প্রতিপক্ষ যে ধরনের হামলাই করুক, তেহরানও একই ধরনের প্রতিশোধ নেবে। তবে তিনি বলেন, ওয়াশিংটন যদি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এবং পরমাণু চুক্তিতে ফিরে আসে তাহলে তেহরান আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছে।
রবিবার ফ্রান্সের এলিসি প্রাসাদ থেকে ইংরেজি ভাষায় ইউরোপের প্রধান তিন শক্তিধর দেশের যৌথ বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়। ওই দিন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখোর আমন্ত্রণে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল ও জ্যেষ্ঠ ব্রিটিশ ক্যাবিনেট মিনিস্টার ডেভিড লিডিংটন বাস্তিল দিবস প্যারেডে অংশ নেওয়ার পর এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা মনে করি দায়িত্বশীলতা অবলম্বন এবং উত্তেজনা প্রশমনের পথ খোঁজা ও আলোচনা করার সময় এসেছে। ঝুঁকিটা এমন একটা জায়গায় এসেছে যে সব পক্ষেরই থামা উচিত এবং নিজেদের কর্মকাণ্ডের সম্ভাব্য পরণতির বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।’ বিবৃতিতে তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধি ও মজুদের বিষয়ে ইরানের পদক্ষেপে ভীষণ উদ্বিগ্ন বলে জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, এই তিন ইউরোপীয় শক্তি ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তির (যা জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন বা জেসিপিওএ নামে পরিচিত) স্বাক্ষরকারী দেশ। এই চুক্তি থেকে ২০১৮ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র সরে যায় এবং ইরানের ওপর এককভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এতে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ক্ষুব্ধ ইরান বলছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে চুক্তির ইউরোপীয় স্বাক্ষরকারী দেশগুলো যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে না। সম্প্রতি উপসাগরে মার্কিন মিত্রদের তেল ট্যাংকারে ‘হামলা’ এবং মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনায় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
এই অবস্থায় গত রবিবার এক ইরানের উত্তর খোরাসান প্রদেশ সফরকালে ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, ‘৮ মে থেকে আমরা আমাদের প্রতিশোধের বিষয়ে ধৈর্য ধরার কৌশল বদলে ফেলেছি।…অন্য পক্ষ যে ব্যবস্থাই নিক, আমরাও একই ধরনের প্রতিশোধ উপায় গ্রহণ করব।’ টেলিভিশনে প্রচারিত এ ভাষণে তিনি বলেন, ‘তারা যদি নিচে নামে, আমরাও আমাদের (চুক্তির) প্রতিশ্রুতি থেকে নিচে নামব। তারা যদি তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে, আমরাও আমাদেরটা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করব।’ তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ করে বলেন, তাঁর দেশ সব সময় আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছে, যদি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে ওয়াশিংটন পোস্টকে গত রবিবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, রুহানি যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা জন এফ কেরি ও বারাক ওবামাকেও তিনি দিয়েছিলেন। পম্পেও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও আমি মনে করি (আগের ওবামা প্রশাসনের মতো) বর্তমানের প্রশাসনের একই পদক্ষেপ হবে বিপর্যয়কর।’ সূত্র : এএফপি, বিবিসি।