মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৬ অপরাহ্ন
আছমা বেগম এবার মাদরাসা থেকে সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিচ্ছিল। ইতিমধ্যে ১২টি বিষয়ে পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। কাল বুধবার তার শেষ পরীক্ষা ছিল। এর মধ্যেই গতকাল সোমবার রাতে গোপনে তার বিয়ে হয়ে গেছে। এখন সে শ্বশুর বাড়ি অবস্থান করছে। আজ মঙ্গলবার খোঁজ নিয়ে তাকে শাড়ি পরা অবস্থায় শ্বশুর বাড়ি দেখা গেছে। ঘটনাটি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের মেরাকোনা গ্রামের।
কম বয়সের ছেলেকে নোটারি পাবলিকে বয়স বাড়িয়ে অন্যদিকে আরেক কম বয়সের মেয়েকে বিয়ে করিয়ে আনলেও বাড়িতে ছিল না কোনো ধরনের আয়োজন। ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে এ ধরনের বাল্যবিয়ে সম্পন্ন করেছে উভয় পরিবার।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কিশোরী আছমা উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের লংগারপাড় গ্রামের আবুল কাশেমের মেয়ে। ১৫ দিন আগে পাশের মেরাকোনা গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে রাফিউল ইসলামের (১৯) সাথে বিয়ের দিন তারিখ ধার্য্য ছিল। ওই সময় খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসনের বাধার মুখে বিয়েটি পণ্ড হয়ে যায়। পরে গত ৪ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ নোটারি পাবলিকে গিয়ে আসমার বয়স ১৩ থেকে বাড়িয়ে ১৯ ও রাফিউলের (ছেলে) বয়স ১৯ থেকে বাড়িয়ে ২১ করে ২ লাখ টাকা দেনমোহরে গতকাল সোমবার রাতে কোনো ধরনের নিবন্ধন ছাড়াই আসমাকে উঠিয়ে নেয় বর পক্ষ।
খবর পেয়ে আজ মঙ্গলবার বরের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, বাড়ির সামনে খড়ের পুঞ্জিতে কাজ করছেন বরের বাবা আব্দুল মতিন। সাথে ছিল বর নিজেও। নতুন বউ আনলেও বাড়িতে তো কোনো ধররের আয়োজন নেই এমন প্রশ্ন করা হলে মতিন বলেন, ‘এমনিই তো ঝামেলা। তার ওপর আয়োজন করলে তো আমারে ধইর্যা নিব।’
তারপরও এমন কাজটি করলেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাঁরাও (কনে পক্ষ) চাইছে আর আমিও আনছি।’ এক পর্যায়ে এ ঘটনাটি নিয়ে অন্য কিছু না করার জন্য তিনি অনুনয় বিনয় শুরু করেন।
কনেকে দেখতে বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, একটি কক্ষে শাড়ি পরিহিত অবস্থায় আছমা গোমটা দিয়ে বসে আছে। এখন তার বয়স কত জানতে চাইলে আসমা চুপ থাকে। এ সময় পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা শাশুড়ি ফরিদা আক্তার আছমাকে পাশে দাঁড় করিয়ে সোজা উত্তর, ‘দেহুইন আমার হমান (সমান) অইয়া গেছে। শইল্যে-গর্তে মাসাল্লাহ।’
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব উদ্দিন জানান, ১৫ দিন আগে এই মেয়ের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জানতে পেরে স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে তা বন্ধ হয়েছিল। এখন কি করে হলো তা তিনি জানেন না।