মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪০ অপরাহ্ন
ভিশন বাংলা ডেস্ক: জামিনে মুক্ত হওয়ার পর ধরে নেওয়া এবং নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউন ও বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রিতিনিধি আরিফুল ইসলাম।
রোববার (১৫ মার্চ) দুপুরে কারাগার থেকে মুক্ত হন আরিফ। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আরিফ বলেন, শুক্রবার (১৩ মার্চ) রাত ১২টার পর খেয়ে শুয়ে পড়েছেন। তখন একজন তার বাড়ির দরজায় ধাক্কা দেন। পরিচয় জানতে চাইলে কেউ পরিচয় জানায়নি। পরে আমি সদর থানার ওসিকে ফোন দেন। ফোন দেওয়ার কথা শুনে বাইরে থাকা আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব) নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন লোকজন দরজা ভেঙে বাসায় ঢোকে। ঘরে ঢুকেই আরডিসি নাজিম উদ্দিন তার মাথায় কিল-ঘুষি মারতে শুরু করেন। মারতে মারতে তাকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে চোখ-হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। এরপর তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে এনকাউন্টার দিতে চায়। তাকে বারবার বলে, তুই কলেমা পড়ে ফেল তোকে এনকাউন্টার দেওয়া হবে।
ভয়াবহ সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, এসময় তাদের আমি অনেক অনুনয় বিনয় করি। আমি আমার প্রাণ ভিক্ষা চাই। বলি, আমার বাবা-মা নেই, আমার দু’টি সন্তান আছে। আমাকে যেন না মেরে ফেলা হয়। তাহলে আমার বাচ্চা দুটি এতিম হয়ে যাবে। পরে তারা আমাকে গাড়িতে করে একটি ভবনে নিয়ে যায়। আমি চোখের কাপড় একটু খুলে বুঝতে পারি এটা ডিসির কার্যালয়। আবার নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে আমাকে একটি কক্ষে নিয়ে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে এবং বলে তোর ভিডিও করে রাখছি। এসময় অকথ্য ভাষায় গালাগালি করা হয়। এসময় নিজাম উদ্দিন বারবার আরেকজনকে বলছিলেন, ডিসি স্যারকে ফোন দাও, মেসেজ দাও। কী করবো সেটা বলতে বলো?
তিনি আরও বলেন, আমি বারবার জানতে চেয়েছি, আমার অপরাধ কী? তখন নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘তুই আমাদের অনেক জ্বালাছিস। তোকে সাংবাদিকতা শেখাবো।’ এরপর চোখ বাঁধা অবস্থায় চারটি কাগজে সিগনেচার নেয়। রাতেই আমাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। আমাকে কেন কারাগারে পাঠানো হলো এবং কেন ধরে আনা হলো কিছুই বলা হয়নি। এমনকি কারাগারে আমার সঙ্গে এক মাস কেউ যেন সাক্ষাৎ করতে না পারে এবং আমার যেন চিকিৎসা দেওয়া না হয় এজন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আরিফ আরও বলেন, শনিবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যায় কারা কর্তৃপক্ষ একটি ‘কাগজ দিয়ে বলেন, তোমার পরিবার পাঠিয়েছে ওকালতনামায়। সেখানে স্বাক্ষর করতে বলে। আমি স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু আমি জানি না কে বা কারা ওকালতনামা পাঠিয়েছে। বাইরে এসে জানতে পারলাম আমার পরিবারের সদস্যরা কেউ জামিন আবেদনের জন্য ওকালতনামা পাঠায়নি।
আরিফুলের ওকালতনামা পাঠানো আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হয় তার পরিবার কি আপনাকে নিয়োগ করেছে? এই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আহসান হাবীব নিলু তারসঙ্গে যোগাযোগ করে দু’জনে মিলে ২৫ হাজার টাকা জামানতে জামিন করিয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনায় কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।
রোববার দুপুরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, এ ঘটনায় শক্ত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সাংবাদিক আরিফকে দায়মুক্ত করতে কাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে তার জামিন হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভ্রাম্যমান আদালত অত্যন্ত উপযোগী হিসেবে কাজ করে। এ আদালত নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক নিয়ে মন্ত্রণালয় সতর্ক। সবাইকে বলে দেয়া হয়েছে, যাতে এ আদালত প্রয়োগে সতর্ক থাকা হয়।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার মধ্যরাতে কুড়িগ্রামের বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে এনে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মাদকবিরোধী অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে ৪৫০ গ্রাম দেশি মদ ও ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে বলেও দাবি টাস্কফোর্সের।