সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ অপরাহ্ন
মোঃ জহিরুল ইসলাম সবুজ. আগৈলঝাড়াঃ
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সারা বাংলার মানুষ যখন স্থবির। তখন মানুষের কিছু কার্যক্রম দেখে মনে পরে গেল কেনিয়ার গাছবন্ধু নোবেলবিজয়ী ওয়াঙ্গারি মাথাই এর একটি গল্প। “বনে আগুন লেগেছে। বাঘ-সিংহরা অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। ছোট্ট টুনটুনি কিন্তু র্ঝনা থেকে ঠোঁটে একফোঁটা করে পানি এনে আগুনে ঢালছে। সবাই তাকে বলছে, ফালতু কাজটা থামা। টুনটুনি কিন্তু থামে না। বলে, ‘আমার যতটুকু সামর্থ্য, আমি ততটুকুই করছি!’ বাংলাদেশে আজ বনে আগুন লাগারমত অবস্থা। এই অবস্থায় সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসছেন না বড় বড় নেতা বা ব্যাবসায়িরা। হাত গুটিয়ে বসে আছেন বাঘ সিংহের মত। দেখাগেছে টুনটুনি মার্কা মানুষ গুলোকে তাদের সাধ্যমত ত্রান ও সামাজিক ও মানবিক কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে। মাঝেমধ্যে বাঘ সিংহ মার্কা মানুষগুলো এনিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করছেন তারা। এর পরেও তারা থেমে যায়নি টুনটুনি মার্কা মানুষ গুলো অব্যাহত রেখেছেন তাদের সামাজিক ও মানবিক সহোয়োগিতা। ক্ষুধার্ত ও হতদরিদ্র মানুষদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দেওয়ার অনন্ত চেষ্টার খন্ড দৃশ্যগুলো যখন আমার চোখের সামনে। মহামারীতে রূপ নেওয়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি এ যেন মানবতার পক্ষেরও লড়াই। মানবিকতাবোধ জাগ্রত হয়েছে তাদের মধ্যে। মানবিকতাবোধে বরিশালের আগৈলঝাড়ার বারপাইকা যুব সমাজের উদ্যোগে তিন মাস যাবত চলছে কর্মহীন গরিব ও দুঃস্থদের বাঁচিয়ে রাখতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিত্যপণ বিতরণ করছে। জাতির চরম সংকটময় মূহুর্তের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন কয়েজন তরুন আর হয়ে উঠেছেন মানবতার ফেরিওয়ালা।
যখন করোনা ভাইরাস মহামারী রূপনিয়েছে মারা যাচ্ছে মানুষ। মানুষ হয়ে মৃত্যু মানুষের কাছে যাচ্ছেনা, ঠিক তখনি বারপাইকা আল-মদিনা যুবসমাজ নামের একটি সামাজিক সংগঠন মোঃ নাসির উদ্দিন শাহ এর নেতৃতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারাগেলে বিনাস্বার্থে মানবিকতাবোধে মুসলিমদের দাফন করছে।
এছাড়াও কোন হিন্দু ব্যক্তির মৃত্যু হলে অন্তেষ্টিক্রিয়ার কাজ বিনাস্বার্থে মানবিকতাবোধে করছে উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বড়বাসাইল গ্রামের মলয় ঘটক এর প্রতিষ্ঠিত “মনোরঞ্জন ঘটক চ্যারিটি ফাউন্ডেশন” এর শুরুটা হয়েছে ২০১০সালে। প্রতিটি মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো জ্বালানোর প্রয়াস নিয়ে। সম্প্রিতি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রথম থেকে সাধারন মানুষকে শতার্ক করতে মাঠে নেমেছেন তারা। প্রতিনিয়ত করছে সাহায্য সহযেগীতা। এছাড়াও আগৈলঝাড়ার পার্শবর্তী মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার ডাসার থানার নবগ্রাম এলাকার একটি সামাজিক সংগঠন অন্তেষ্টিক্রিয়ার কাজ বিনাস্বার্থে করছে। সামাজিক সংগঠন দুটি একত্রে সারাদেশে অন্তেষ্টিক্রিয়ার কাজ করে আসছে। মনোরঞ্জন ঘটক চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের সাথে যোগাযোগ করার জন্য প্রতিষ্ঠাতা মলয় ঘটক (০১৭৯৩-৭০০৭২৫) ও নবগ্রাম জনকল্যাণ সেবাশ্রম ট্রাষ্টের সাথে যোগাযোগ করার জন্য প্রতিষ্ঠাতা প্রবীন হালদার (০১৭২৫-৮৯১২৪২) এর উক্ত মোবাইল নম্বরে যেগাযোগ করার জন্য আহবান জানিয়েছেন। উক্ত সংগঠন দুটি ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তেষ্টিক্রিয়া করে আসছে।
অন্য দিকে দেশ ব্যাপি করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় প্রায় তিনমাস যাবত দেশব্যাপি লকডাউনে থাকা আগৈলঝাড়ায় কর্মহীন শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়িসহ বিভিন্ন পেশাজীবির কর্মহীনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদের সাথে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এখন তাদের খাদ্য যোগান নিয়ে চরম উৎকন্ঠায় দিনযাপন করছে। সরকারের বরদ্দকৃত খাদ্য সহায়তা বিতরণ চলমান থাকার পাশাপাশি স্থানীয় এমপি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকলেও স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে সরকারের ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের বরাদ্দকৃত খাদ্য শষ্য (চাল) সহায়তা বিতরণে ধীর গতিতে খাদ্য সংকট প্রকট হতে শুরু করেছে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজনের।
অসাধু ব্যাবসায়িরা করোনাকে পুজি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে বিক্রয় করায় অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার। সীমিত সরবরাহ ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে বেড়েছে চাল, আদাসহ , ডাল, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, চিনিসহ অনেক নিত্য প্রয়েজনীয় পণ্য সামগ্রীর দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে অস্বাভাবিকভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম বেড়ে ওঠায় বিপাকে পড়ছেন সীমিত আয়ের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ।
বিভিন্ন সময়ে বাঙালি জাতী নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে অভ্যস্ত হলেও এমন দুর্যোগ আগে আসেনি। করোনা ভাইরাসের মহামারী ঠেকাতে সরকারের নির্দেশে মানুষকে ঘরে থাকতে হচ্ছে বাধ্যতামূলকভাবে। বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষরা। অন্যদিকে বৃত্তবানরা ছুটি কাটচ্ছেন উচ্চবিলাসিতায় আর নিন্ম আয়ের পরিবারের পাশে এসে দাড়িয়েছে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তবে চরম অসুবিধায় থাকলেও লোকড়-লজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পাছেনা মধ্যবৃত্তরা। চাপা কান্নায় কাদছে মধ্যবৃত্ততরা।
জাতির অস্তিত্বের এই সংকটকালে তাই জনপ্রতিনিধিদের প্রতি সাধারণের প্রত্যাশা অনেক। কারণ জনগণ তাদের ভোট দেয় নিজেদের সুখে-দুঃখে পাশে পাওয়ার আশায়। তাই জনপ্রতিনিধিদের উচিত জনগণের পাশে থাকা। ভোটের সময় সেবার কথা বলে নির্বাচিত হলেও এখন বিপদের দিনে বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধি পাশে নেই। জনপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। এমনটাই মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনেরা।
জাতির অস্তিত্বের এই সংকটকালে কোন দলেই বড় কোন নেতা এ এলাকায় আসেনি। তারা নিজ দায়িত্বে এখনও নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছেন। কিন্তু এই সময়ে তার এলাকায় জনগণের পাশে থাকার কথা ছিল। একটা ব্যাপার হতে পারে তারা নিজেদের করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়া থেকে নিরাপদ রাখছেন। তবে অনেক জনপ্রতিনিধি আছেন যারা জীবন বাজি রেখে জনসেবা করে যাচ্ছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ কিছু ত্রান দিয়েছে। বিএনপি ফটো সেসন ত্রান দিয়েছে। আর জাতীয় পার্টি আগৈলঝাড়ায় কোন কিছুই করেনি। এব্যাপারে বরিশাল ১ আসনের জাতীয় পার্র্টির মনোনায়ন প্রত্যাশী (পূর্বে একবার মনোনায়ন পেয়েছেন) সরদার হারুন রানা করোনা কালে কোন মানবিক কর্মকান্ড না করার কথা স্বীকার করেলেও ভবিষতে করবেনকিনা এমন প্রশ্নে তিনি বক্তব্য দিতে অনিহা প্রকাশ করেন।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের সাথে কথা বলে মনে হল বিবি লায়েক হতে হতে মিয়া না গোরস্থানে চলে যান।
বাংলাদেশের এই অবস্থায় সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসছেন না বড় বড় নেতা বা ব্যাবসায়িরা। হাত গুটিয়ে বসে আছেন বাঘ সিংহের মত। তবে টুনটুনি মার্কা মানুষগুলো কিছু না কিছু করেই চলেছে। আর সরকারের কাজ সরকার করতেছে। কিন্তু আমরা প্রত্যেকেই বড়সড় কিছু না করেও পাশের মানুষটির যথাসাধ্য দায়িত্ব নিয়ে করোনাযুদ্ধে শামিল হতে পারি। তাতেই এই সংকট কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।