সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
হরিপুরে গ্রামবাংলার ঝোপঝাড় হতে বিলুপ্তির পথে কুচফল ওয়াজের মাঠ কাপানো আর নারীদের খাট কাপানো হুজুর মুফতি মুহাম্মদ শফিকুজ্জামান দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় ৮০০ নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: রিজভী নির্বাচন কবে, সেই ঘোষণা হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকেই : প্রেস উইং মোহাম্মদপুরে সন্ত্রাসী রহিম ও তার ছেলের অত্যাচার নির্যাতনে অসহায় এলাকাবাসী উত্তরা ব্যাংকের এমডি রবিউল হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অপসারনের দাবিতে রাজপথে বিল্পবী ছাত্র জনতা ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৪ হাজার সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে দেখে কেঁদে ফেললেন মির্জা ফখরুল সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ওসমানী জাতীয় স্মৃতি পরিষদ-এর বিশেষ বাণী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খ. ম. আমীর আলী
বাড়তি ব্যয়ের চাপে রাজধানীর সীমিত আয়ের মানুষ

বাড়তি ব্যয়ের চাপে রাজধানীর সীমিত আয়ের মানুষ

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ১৩ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন মো. শাহীদুল মুরসালিন। তার স্ত্রী জোবায়দাও চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। বেতন পান ১৪ হাজার টাকা। দু’জনই স্নাতকোত্তর করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এখন খিলক্ষেত এলাকায় দুই রুমের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন এই দম্পতি। শুধু বাসাভাড়া বাবদই তাদের প্রতি মাসে গুনতে হয় ১৫ হাজার টাকা। বিদ্যুত্, পানি, গ্যাস, সিকিউরিটি ও ময়লার বিল মিলিয়ে প্রায় ১৮ হাজার টাকাই চলে যায় বাসাভাড়া খাতে। দু’জনের মোট আয় ২৭ হাজার টাকা থেকে অবশিষ্ট থাকে মাত্র ৯ হাজার। এই টাকা দিয়েই এক মাসের খাবার, যাতায়াত ভাড়া ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হয় এই দম্পতিকে।

শুধু মুরসালিন-জোবায়দা দম্পতি নন, একই অবস্থা রাজধানীর লাখ লাখ মধ্যবিত্ত পরিবারের। আর নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের অবস্থা তো আরো করুণ। জীবনযাত্রার অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধির যাঁতাকলে নিয়মিত পিষ্ট হচ্ছে তাদের জীবন।

নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ও বসবাসের দিক দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ শহরগুলোর একটি ঢাকা। জীবনযাত্রার মানের দিক দিয়েও পৃথিবীর বড় শহরগুলোর একেবারে নিচের সারিতে থাকা ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ার অন্য যেকোনো শহরের চেয়ে বেশি। প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি মানুষের উচ্চ ব্যয়ের এই শহরে তাই সীমিত আয়ের লোকজন জীবনধারণ করেন অনেক কষ্টে। দিন দিন অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতন বাড়ে না। ব্যয়ের সাথে আয়ের ভারসাম্য নেই। তারপরেও জীবনের তাগিদে বাধ্য হয়ে এই শহরে থাকছে মানুষ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানীতে বাসাভাড়া নিয়ন্ত্রণে কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। নেই কোনো নীতিমালাও। যখন ইচ্ছে তখনই বাসাভাড়া বৃদ্ধি করে বাড়ির মালিকরা। সিন্ডিকেট করে খাদ্যদ্রব্য কিংবা অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও বাড়ে যখন তখন। আবার গণপরিবহনেও ভাড়া নিয়ে চলে নৈরাজ্য। বাসে উঠলেই সর্বনিম্ন ভাড়া গুনতে হয় ১৫ টাকা। সব মিলিয়ে রাজধানীতে বাড়তি ব্যয়ের চাপে ত্রাহি দশা সীমিত আয়ের লাখ লাখ মানুষের।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, গত বছর শ্রমিকের বেতন বাড়েনি। কিন্তু সকল সূচকেই বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। আর দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রা ব্যয়ের প্রভাব পড়েছে ১৬ কোটি মানুষের ওপর। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল মুষ্টিমেয় কয়েকজনের হাতে চলে যাওয়া খুবই বিপজ্জনক। আয় বৈষম্য দূর করাও জরুরি বলে মত তাদের।

তবুও ঢাকায় থাকা:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে একটি দৈনিক পত্রিকায় রিপোর্টার হিসেবে চাকরি করেন মো. আবুল খায়ের। বসবাস করেন রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায়। মেসের সিট ভাড়া বাবদ ৪ হাজার টাকা গুনতে হয়। খাবার বাবদ খরচ হয় ৪ হাজার টাকা। অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় ৫ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে ১৩ হাজার টাকারও উপরে খরচ হলেও তার বেতন মাত্র ৬ হাজার টাকা। অবশিষ্ট ৭ হাজার টাকা পরিবার থেকে নিয়ে আসেন বলে জানান তিনি। এই বেতন দিয়ে থাকা-খাওয়ার খরচও ওঠে না, তারপরেও কেন চাকরি করেন- জানতে চাইলে আবুল খায়ের বলেন, ‘এখন তো গ্রামে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঢাকায় পড়াশুনা করেছি, এখানেই থাকতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে এই চাকরি করতে হচ্ছে।’

একই সুরে কথা বলছেন রাজধানীর গুলিস্তানে কর্মরত একটি ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবেদ উল্লাহ আশিক। তিনি বলেন, ‘বেতন পান ১২ হাজার টাকা। আর থাকা-খাওয়া বাবদই চলে যায় ১০ হাজার টাকা। তাই বাড়িতে পরিবারের জন্য কেমনে টাকা পাঠাই। এভাবে জীবন চলে না। সরকারি চাকরিতে ঘুষ লাগে। টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই বাধ্য হয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। বেতনও ভালো দেয় না। শুধু বেঁচে থাকার তাগিদেই এই শহরে বাস করি।’

এক বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৮.৪৪ ভাগ: ক্যাব’র এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়েছে। এর আগের বছরে বেড়েছিল ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গেল বছর রাজধানীতে পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়েছে ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। গত বছর সব ধরনের চালের গড়মূল্য বেড়েছে ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। গত এক বছরে চুলার গ্যাসের মূল্য বেড়েছে ২৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। বিদ্যুতের মূল্য আবাসিকে ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ ও বাণ্যিজিক খাতে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়েছে।

ওয়াসার পানির মূল্য প্রতি হাজার লিটারে বেড়েছে ৫ শতাংশ। বাসা ভাড়া বেড়েছে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। মোবাইল অ্যাপভিত্তিক যাত্রী পরিবহন উবারের ভাড়া বেড়েছে ২০ থেকে ২২ শতাংশ। জ্বালানি তেলের মূল্য কমলেও গণপরিবহন ব্যয় কমেনি। খাদ্যপণ্যের মধ্যে শাক-সবজির দাম গড়ে বেড়েছে ২৪ দশমিক ২৮ শতাংশ, তরল দুধের ২০ দশমিক ৩৬ শতাংশ, গরুর মাংসের ১৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, ভোজ্যতেলের ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ ছাড়া গুঁড়ো দুধ, মাছ, ডালডা, ঘি, দেশি মুরগি, দেশি ডিম, আটা-ময়দা ও ডালের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৪৮ থেকে ৫ দশমিক ১১ শতাংশের মধ্যে। আর দেশি শাড়ি-কাপড় ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং গেঞ্জি, গামছা ও তোয়ালের গড় দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা যা বলেন:দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মানুষের আয় যদি জীবনযাত্রার ব্যয়ের চেয়ে বাড়ে, তাহলে সমস্যা নাই। যদি জীবনযাত্রার ব্যয়ের সাথে আয় না বাড়ে, মানুষের কষ্ট হয়। তখন জীবনযাত্রার মানও কমে যায়। যাদের আয় বাড়ছে না, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা কখনই কাম্য নয়।’

বিকেএমইএ’র সাবেক রিসার্চ ফেলো ইনামুল হাফিজ লতিফী বলেন, ‘নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষের ওপরে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাব বেশি। ব্যয় কমানোর তত্পরতাও নেই। উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু এর সুফল নিম্ন আয়ের মানুষ পাচ্ছে না।’

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com