শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৪ অপরাহ্ন
আগৈলঝাড়া প্রতিনিধিঃ
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় বর্ষা মৌসুমে নৌকার কদর রয়েছে সবার কাছে। বর্ষা মৌসুমে প্রত্যন্ত এলাকায় চলাচল, জীবিকার প্রয়োজন ও পণ্য পরিবহনের অন্যতম বাহন হিসেবে এখনও নৌকার ব্যবহার অনেক জনপ্রিয়। নৌকা তৈরী ও বিক্রি করে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরেছে এলাকার মিস্ত্রী পরিবারগুলোতেও।
উপজেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠিরা জীবন জীবিকার প্রয়োজনে নিবিরভাবে নিজেদের জড়িত রেখেছেন মৎস্য শিকার ও বাজারে বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে সংসার চালানোর কাজে। তাই বর্ষা মৌসুমে তাদের প্রধান চালিকা শক্তি নৌকা।
জুন থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মৎস্য শিকারীরা তাদের জীবন ধারণ ও যাতায়াতের জন্য নৌকার উপর নির্ভরশীল থাকেন। এসময় তারা নৌকায় করে জাল পাতা, চাই (মাছ ধরার ফাঁদ) অথবা বড়শি নিয়ে মৎস্য শিকার করে বাজারে বিক্রি করেন। অনেকে আবার নৌকায় শাপলা তুলে তা বাজারে বিক্রির মাধ্যমে সংসার চালাচ্ছেন। তাই বর্ষা মৌসুম এলেই বেড়ে যায় নৌকার কদর।
এদিকে বর্ষা মৌসুমে ফসলী জমিতে কাজ না থাকায় এবং বাড়ি-ঘর নির্মাণ করায় কাঠ মিস্ত্রিরা এসময় তাদের নিজেদের বাড়িতে বা রাস্তার পাশে অস্থায়ী ছাপরা দিয়ে তৈরী করেন বিভিন্ন সাইজ ও ডিজাইনের নৌকা।
বর্ষা মৌসুমের শুরুর আগেই কাঠ মিস্ত্রীরা গ্রাম গ্রাম ঘুরে নৌকা নির্মাণের গাছ কিনে চেরাই করে বাড়িতে তৈরী করা বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রির মাধ্যমে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে আসছেন। অনেকেই এই সময়ে নৌকা নির্মাণ ও বিক্রির মাধ্যমে বাড়তি আয় করে থাকেন। এভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সহস্রাধিক মিস্ত্রী পরিবার বাড়িতে বসে নৌকা তৈরী ও বিক্রি করে বাড়তি আয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। বাড়িতে মিস্ত্রীদের নৌকা নির্মানের কাজে সহায়তা করেন তাদের স্ত্রী ও সন্তানেরাও। অনেক স্বচ্ছল কাঠ মিস্ত্রিরা নিজেদের বাড়িতে বা রাস্তার পাশে টিনের ছাপড়া দিয়ে কয়েকজন মিস্ত্রি রেখে বাজ্যিকভাবে নৌকা তৈরী করে তা হাট-বাজারে বিক্রি করে সংসারে বাড়তি আয় করছেন।
উপজেলার রাজাপুর গ্রামের কুমোদ সমদ্দারের ছেলে কাঠ মিস্ত্রি কমলেশ সমদ্দার জনান, বর্ষা মৌসুমে তেমন কোন কাজ না থাকায় নৌকা তৈরী করে তা বিক্রি করেন তিনি। তার তত্বাবধানে ৪/৫জন মিস্ত্রি রেখে পয়সারহাটে খালি জায়গায় টিনের ছাপরা দিয়ে নৌকার কাজ করছেন তারা। লকডাউনে এবছর বেচা কেনা অনেক কম, তাছাড়া মোবাইল কোর্টের আতঙ্কে থাকেন তারা। বিভিন্ন সাইজের নৌকা নির্মাণ করছেন তারা। প্রতিটি নৌকা বিক্রি করেন ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়। তিন হাজার টাকার একটি নৌকা নির্মাণে তার ২৪শ-২৫শ টাকা খরচ পরে।
আকার ভেদে নৌকার দামও কম বেশী হয়। তবে বর্ষা মৌসুমে এক সিজনে ব্যবহারের জন্য কমদামি নৌকাই অনেকের বেশী পছন্দ।
আগৈলঝাড়ার বারপাইকা, দুশুমীরহাট, রাজিহার, বাশাইল, রামানন্দেরআঁক, বাটরা, বাহাদুরপুর, পয়সারহাসহ বিভিন্ন এলাকার বাড়িতে বাড়িতে তৈরী করা হয় নৌকা। এসব নৌকা বাড়িতেই বিক্রি করাসহ ত্রিমুখি, রামশীল, সাদুল্লাপুর, পীরের বাড়ী, বানারীপাড়াসহ বিভিন্ন উপজেলার হাটেও বিক্রি করা হয়। বিভিন্নস্থানে এখন বসছে নৌকা বিক্রির জমজমাট হাট।
গ্রামগুলো ঘুরে জানা গেছে, এসব এলাকার অসংখ্য পরিবার সদস্যরা কাঠ মিস্ত্রী পেশায় জড়িত। তারা গ্রামাঞ্চল থেকে অপেকৃত কম দামে গাছ কিনে নৌকা তৈরি করে থাকেন। এর মধ্যে জারুল, রেইনট্রি, চাম্বল, কদম, রয়না, উরিয়া আম কাঠ দিয়ে ডিঙ্গি ও ছোট-বড় আকারের নৌকা তৈরি করেন। নৌকা বিক্রির সবচেয়ে বড় হাট বাহাদুরপুর ও সাহেবের হাট। সপ্তাহে দু’দিন করে বসে এই হাট। এছাড়াও স্বরূপকাঠি, বানারীপাড়া, উজিরপুর, মাদারীপুর থেকে পাইকাররা এসে নৌকা কিনে নিয়ে যায় তাদের এলাকায় বিক্রির জন্য।
রাজিহার গ্রামের মৎস্য শিকারী কালা চাঁদ জয়ধর জানান, বর্ষাকালে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার জন্য নৌকার বিকল্প নেই। এছাড়াও শুস্ক মৌসুমে নৌকায় খালে জাল পেতে মাছ শিকার করেন তার মতো অনেকেই। নৌকার মাধ্যমেই চলে তাদের মতো অনেকেরই জীবিকা নির্বাহ।