সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধ এবং খাদ্য নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করতে এবং সবার কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বিশ্বের ৮০ কোটির বেশি মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায়, যা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরো খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, আমি যুদ্ধ বন্ধ করতে, খাদ্য নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করতে এবং খাদ্যের অপচয় বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ করছি। পরিবর্তে, খাদ্য ঘাটতি এবং দুর্ভিক্ষ কবলিত এলাকায় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করুন। মানুষ হিসাবে, আমাদের অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে, প্রত্যেকেরই খাদ্য নিয়ে বেঁচে থাকার এবং একটি সুন্দর জীবন যাপনের অধিকার রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ইতালির রোমে এফএও’র সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এফএও (খাদ্য ও কৃষি সংস্থা) বিশ্ব খাদ্য ফোরামের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভার্চুয়ালি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে একথা বলেন।
ভার্চুয়ালি ফোরামে যোগ দিতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এ ফোরাম এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন বিশ্বব্যাপী খাদ্য ব্যবস্থা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা, কভিড-১৯ মহামারি এবং আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে খরার কারণে বিপর্যস্ত। আশা করি এটি কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমাধানগুলো অগ্রসর করতে মূল স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সংলাপকে উৎসাহিত করবে।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ৮০ কোটিরও বেশি মানুষ বা বিশ্বের জনসংখ্যার ১০ শতাংশ বরাবরই ক্ষুধার্ত অবস্থায় বিছানায় যায় এবং ইউক্রেন যুদ্ধ, পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে পরিস্থিতি এখন আরো খারাপ হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত করেছে এবং খাদ্যের দাম বাড়িয়েছে। বিশ্বে সম্পদের প্রাচুর্য্য রয়েছে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য অবদানের ফলে তা আরো বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও এই বঞ্চনা আমাদের জন্য সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক।
তিনি বলেন, প্রকৃত অর্থে আমাদের গ্রহে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। অভাব কেবল মানবসৃষ্ট। খাদ্য নিয়ে রাজনীতি ও ব্যবসায়িক স্বার্থ, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ এবং কীটপতঙ্গ ও রোগের আক্রমণ সবই আমাদের কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বের আকাঙ্খা ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। আমি বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এই কৃষি খাতে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে এফএওতে যোগদানে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কারণ, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন জাতিসংঘের এই আন্তর্জাতিক সংস্থা নতুন দেশটির জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর অগ্রণী উদ্যোগের মধ্যে ছিল কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণীর অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সবুজ বিপ্লবের ডাক দেওয়া। তিনি কৃষি উন্নয়নের জন্য দেশের উন্নয়ন বাজেটের পঞ্চমাংশ বরাদ্দ করেন এবং কৃষির সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
দেশে ওয়েব পেজ ‘কৃষি বাতায়ন’ তৈরি করা হয়েছে যাতে কৃষকদের কাছে কৃষি সংক্রান্ত তথ্য ও সেবা সহজে পাওয়া যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কৃষি খাত জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ বলে এবং জলবায়ু পরিবর্তন টেকসই কৃষির জন্য একটি বড় হুমকির সম্মুখীন। ’ তবুও বাংলাদেশ এবং তার সহনশীল জনগণ জীবনের সকল ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য অক্লান্তভাবে এগিয়ে চলেছে।
তিনি বলেন, কৃষি পণ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশ শাকসবজি, মাছ এবং অন্যান্য কৃষিভিত্তিক পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতেও সফল হয়েছে, যার বেশিরভাগই রপ্তানি করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, বিশ্বে বাংলাদেশ আজ পাট ও স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, চাল ও সবজিতে ৩য়, চা উৎপাদনে ৪র্থ এবং এগারোটি ইলিশ মাছ উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে তার বক্তৃতা শেষ করেন। তিনি বলেন, যিনি ১৯৭৪ সালের ইউএনজিএ অধিবেশনে তাঁর প্রথম ভাষণে বলেছিলেন, ‘আসুন আমরা একসাথে এমন একটি বিশ্ব তৈরি করি, যা দারিদ্র্য, ক্ষুধা, যুদ্ধ এবং মানুষের দুর্ভোগ নির্মূল এবং মানুষের কল্যাণের জন্য বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জন করতে পারে।