শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৬ অপরাহ্ন
এলাহী মাসুদ : অমর একুশে বইমেলা বুধবার শুরু হচ্ছে। ওইদিন বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে উদ্বোধন করবেন এ বইমেলা। এবারের মেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘পড় বই, গড় দেশ : বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’।
সোমবার বিকেলে বাংলা একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক কবি মোহাম্মদ নুরুল হুদা সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
নুরুল হুদা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় বইমেলার উদ্বোধন করবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সাতটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ছাড়াও ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২’ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি লেখক সেলিনা হোসেন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মোহাম্মদ নুরুল হুদা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সচিব (যুগ্ম সচিব) এ এইচ এম লোকমান, বিকাশের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মীর নওবুত আলী এবং ক্রস ওয়ার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মারুফ।
২০২০ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কারণে ঐতিহ্যবাহী এ বইমেলা শুরু হয় ২ ফেব্রুয়ারি। আর বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারির কারণে, ২০২১ সালে ১৮ মার্চ এবং ২০২২ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলা শুরু হওয়া বিলম্বিত হয়।
কর্মদিবসে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং সরকারি ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে দুপুরের খাবার ও নামাজের জন্য এক ঘণ্টা বিরতি থাকবে বলে জানিয়েছেন অমর একুশে গ্রন্থমেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম।
এবার ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি মাঠে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তাছাড়া এ বছর মোট ৩৮টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ করা হয়েছে। গত বছর ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৪টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এছাড়া লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ১৫৩টি স্টল থাকবে, যা ২০২২ সালে ছিল ১২৭টি, ২০২১ সালে ১৪০টি এবং ২০২০ সালে ১৫৫টি।
যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গ্রন্থমেলা ভেন্যু ও এর আশপাশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে এবং মেলার ১১ লাখ বর্গফুট জায়গার প্রতিটি স্থান সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে।
বাংলা একাডেমির পরিচালক (প্রশাসন, মানবসম্পদ ও পরিকল্পনা বিভাগ) মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, স্টল ও প্যাভিলিয়ন এবং প্রবেশ ও প্রস্থান পয়েন্টের ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। শৃঙ্খলা ও মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা হবে এবং আগের অ্যানালগ তথ্য বোর্ডগুলোর পরিবর্তে ডিজিটাল বোর্ড স্থাপন করা হবে।
ড. মুজাহিদ বলেন, ‘আমরা এ বছর দুই কারণে এ ধরনের পরিবর্তন এনেছি। এক. বাংলা একাডেমির কাছে মেট্রোরেল স্টেশন থাকা; দুই. প্রকাশকদের অনুরোধে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স এলাকা থেকে মেলার মূল আঙিনায় ১৮২টি স্টলসহ সাতটি প্যাভিলিয়ন স্থানান্তর করা।
এবারের বইমেলায় স্টল স্থাপনে বড় ধরনের পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে; কারণ আগের গুচ্ছপদ্ধতি পরিবর্তন করা হচ্ছে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অভ্যন্তরে ৭৩৬টি স্টলের সবই এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে দর্শনার্থীরা মেলার যে কোনো কোণে দাঁড়িয়ে পুরো মেলাপ্রাঙ্গণ দেখতে পারেন।
এ ছাড়া প্রকাশকদের অনুরোধে ১৮২টি স্টলসহ সাতটি প্যাভিলিয়ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এলাকা থেকে মেলার মূল ভেন্যুতে স্থানান্তর করা হয়েছে। আর এ কারণে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় প্রবেশের মূল ফটক পরিবর্তন করা হয়েছে। বাংলা একাডেমির ঠিক বিপরীতে অবস্থিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মন্দির গেটটিই হবে প্রবেশের প্রধান ফটক।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের কাছে পুলিশ, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের মতো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের স্টল স্থাপন করা হয়েছে এবং মূল ভেন্যুর বাইরে দুটি স্থান ফুড কোর্টের জন্য রাখা হয়েছে এবং অনুমোদনহীন, খোলা বা রাস্তার পাশের দোকানের মতো কোনো খাবারের দোকান থাকবে না। ‘শিশু চত্বর’ও আগের স্থান থেকে এ বছর সাধুসঙ্গ এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, বিগত বছরের মতো এবারও মেলার মূল মঞ্চ হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে, বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ তৈরি করা হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে। এবারের গ্রন্থমেলার আরেকটি সংযোজন হচ্ছে ‘ডিজিটাল বোর্ড’, যা মেলার মূল পয়েন্টগুলোতে দৃশ্যমান হবে, যাতে নতুন প্রকাশিত বইসহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য থাকবে, যাতে দর্শনার্থীরা সহজে অবহিত হতে পারেন।
গ্রন্থমেলায় নিয়মকানুন ও নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতে টাস্কফোর্স প্রথম দিন থেকেই ‘হার্ডলাইনে’ থাকবে। প্রকাশকদের প্রতিদিন মেলা প্রাঙ্গণে আসা প্রতিটি নতুন বইয়ের তথ্য বাংলা একাডেমিতে জমা দিতে বলা হয়েছে।
এবারের বইমেলা শেষে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে চারটি পুরস্কার দেয়া হবে। এর মধ্যে বইয়ের বিষয়বস্তু ও মান বিবেচনা করে ২০২২ সালে প্রকাশিত সর্বোচ্চ সংখ্যক বইয়ের জন্য ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে। বইয়ের শিল্প বিবেচনায় সেরা বইয়ের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ এবং শিশুদের ওপর ভিত্তি করে লেখা সেরা বইকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে।
এবারের বইমেলায় যারা অংশ নেবেন, সেরা অলঙ্করণ বিবেচনা করে তাদের মধ্য থেকে একটি স্টলকে ‘শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে।