রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন
রাকিবুল আওয়াল পাপুল, শেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ এনটিআরসিএ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার পাঠানবাড়ি এলাকার মাহবুবুল করীম নামে এক চাকুরি প্রত্যাশীর সনদসহ যাবতীয় ডকুমেন্ট নেন ওবাইদুল ইসলাম। সেই ডকুমেন্টে নিজের ছবি ও ঠিকানা পরিবর্তন করে প্রতারক ওবায়দুল ইসলাম বনে যান মাহবুবুল করীম। চাকুরিও নেন বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। শুধু তাই নয় ৭ মাস চাকুরি করে বেতন উত্তোলন করেন নিজের নামে। পরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওবায়দুল ইসলামের প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে তাকে চাকুরি থেকে পদত্যাগ করিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন।
বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী মাহবুবুল করিম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে অতপর সেই প্রতারককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মাসাৎ,জাল সনদ তৈরি করা ও পরবর্তীতে তা দিয়ে ব্লেকমেইল করে মামলা দায়ের ই ছিল ওবায়দুল ইসলামের পেশা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই।
৩৫ বছর বয়সী ওবায়দুল করিমের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার কয়ড়া পশ্চিম পাড়া এলাকায় হলেও তিনি থাকতেন পাশের উপজেলা মধুপুরের মাষ্টারপাড়া এলাকায়। ভুক্তভোগী মাহবুবুল করীম বলেন,প্রতারক ওবায়দুল ইসলাম নিজেকে এনটিআরসিএ কর্মকর্তা পরিচয় দেন। পরে তিনি আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে চান। আমি তাকে নিবন্ধন সনদ আছে জানালে চাকুরিতে যোগদানের ব্যবস্থার প্রলোভন দেখিয়ে নিবন্ধন সনদসহ যাবতীয় একাডেমিক সনদগুলো নেয় সে। পরে তার সেই কাগজপত্রে ছবি ও ঠিকানা পরিবর্তন করে নিজেই মাহবুবুল করীম বনে যান। এরপর ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার মহিষবাথান আর এম উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক ( ধর্ম) পদে যোগদান করেন। ৭ মাস চাকুরি করার পর ২০২৪ সালের ২৮ এপ্রিল ওবায়দুল ইসলামের প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হলে প্রধান শিক্ষক তাকে আইনের হাতে তুলে না দিয়ে শুধুমাত্র পদত্যাগপত্র নিয়ে স্কুল থেকে অব্যাহতি দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহিষাবাথান আর এম বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির তৎকালীন সভাপতি আব্দুর রকিব আবলু ।
প্রতারক ওবায়দুল ইসলামের গ্রেপ্তারের খবরে থানার সামনে জড়ো হয় দেশের বিভিন্ন জেলার চাকুরি প্রত্যাশী ভোক্তভোগীরা। শেরপুরের নালিতাবাড়ীর ইসমাইল হোসেন,তাকে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে ১১ লক্ষ টাকার চুক্তিতে যাবতীয় সনদপত্রসহ নেন। সেই সাথে প্রাথমিক ১ লক্ষ টাকাও নেন ওবায়দুল ইসলাম। চাকুরি হলে যদি টাকা না দেয় এই মর্মে ব্ল্যাঙ্ক চেক নেয় প্রতারক। পরে চাকুরি দিতে পারেননি ওবায়দুল ইসলাম। ভোক্তভোগী ইসমাইল হোসেন টাকা ও সনদপত্রসহ যাবতীয় ডকুমেন্ট ফেরত চাইলে হয়রানী করতে উল্টো তার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার এর মামলা দায়ের করেন। শেরপুর সদরের রাশেদুল ইসলামের কাছ থেকে প্রতারক ওবায়দুল ইসলাম নিজেকে এনটিআরসিএ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে চাকুরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে যাবতীয় কাগজপত্রসহ ৫ লক্ষ টাকা নেন। পরে চাকুরি তিনি দেয়নি উল্টো ভূয়া সনদ তৈরি করে রাশেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধনে জাল সনদের মামলা ঠুকিয়ে দেয়। ময়মনসিংহের ফুলপুরের নেছার উদ্দিন,তাকে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকুরি দিবেন বলে নগদ ১১ লক্ষ টাকা নেন। চাকুরি দিতে পারেননি তিনি। টাকা চাইতে গেলে উল্টো মামলা দেয়। ময়মনসিংহ সদরের আরিফুল ইসলামের কাছে নিজেকে এনটিআরসিএ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে, শিক্ষক নিবন্ধনের চাকুরির কথা বলে মূল সনদপত্র নেয়। সেই সাথে আরিফুল ইসলাম তার বড় ভাইয়ের চেক ও দেন। চাকুরি তো দিতে পারেননি উল্টো ৯ লক্ষ টাকার চেক ডিজঅনার মামলা ঠুকে দিয়ে হয়রানী করেন। শেরপুরের নালিতাবাড়ীর সদর আলী নামে একজন তার শ্যালকের চাকুরির জন্য ওবায়দুল ইসলামের কাছে সনদপত্র ও ব্লাঙ্ক চেক নিয়ে পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে উল্টো ৩০ লক্ষ টাকার চেক ডিজঅনার এর মামলা দায়ের করেন। মহিষবাথান রসুল মনির উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরীর সুবাদে একই ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার জিয়াদুল ইসলাম,হুমায়ূন কবির, তানিয়াসহ আরো অনেকে। ভুক্তভোগীদের দাবি প্রতারক ওবায়দুল ইসলাম দেশের বিভিন্ন জেলার শতাধিক চাকুরি প্রত্যাশীর সাথে তিনি এমন প্রতারণা করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত প্রতারক ওবায়দুল ইসলামের শাস্তি চান তারা ।
মাদারগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহীনুর আলম বলেন,গ্রেপ্তারকৃত ওবায়দুল ইসলাম নিজেকে এনটিআরসিএ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মাহবুবুল করীম নামে এক চাকুরি প্রত্যাশীর শিক্ষক নিবন্ধনের সনদসহ যাবতীয় ডকুমেন্ট নিয়ে নেয়। পরে সেই ডকুমেন্টে মাহবুবুল করীমের ছবি ও ঠিকানা পরিবর্তন করে নিজেই মাহবুবুল করীম বনে গিয়ে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকুরিও নেন। বিষয়টি ভুক্তভোগী মাহবুবুল করীম বিষয়টি জানতে পেরে আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালত মাদারগঞ্জ মডেল থানাকে মামলা রুজু করার নির্দেশ দিলে গত ৩০ অক্টোবর থানায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়। মামলার পর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী এলাকার তাকে প্রতারক ওবায়দুল ইসলামকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। তাকে গ্রেপ্তারের পর প্রতারণার শিকার এমন অনেকেই থানায় আসেন। প্রতারক ওবায়দুল ইসলামকে ররিবার দুপুরে জামালপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।