বীমা খাতের চিহ্নিত ভয়ংকর এক প্রতারকের নাম শাহাদাত হোসেন। জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান সন্ধানী, গোল্ডেন, পদ্মা কিংবা বায়রা লাইফ- প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট আর মামলা-হামলায় জড়িয়ে ছিলেন শীর্ষ বিতর্কে। অপরাধে জড়িয়ে খেটেছেন জেল। আর সেই জেলখাটা অপরাধী শাহাদাতের হাতেই এখন হোমল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ! তার স্বেচ্ছাচারিতা, অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকান্ডে এবার ধ্বংসের পথে এই বীমা প্রতিষ্ঠান! ক্ষমতা পেয়ে হোমল্যান্ডকেই পরিণত করেছে আরেক জেলখানায়।
ভুক্তভোগী গ্রাহক, সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাংবাদিকরা দেখা করতে গেলে আসামীর মতো পালিয়ে থাকে শাহাদাত। লক্ষীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর মিঝি বাড়ী এলাকার মোঃ তাজুল ইসলাম পাটওয়ারীর সন্তান এই শাহাদাত হোসেন ছোটবেলা থেকেই ছিলেন ধুরন্ধর প্রকৃতির।
আদালতের নির্দেশ, প্রশাসনিক নীতি ও কোম্পানির অভ্যন্তরীণ নিয়ম উপেক্ষা করে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে এক চিহ্নিত প্রতারক ও জেলখাটা ব্যক্তি মো. শাহাদাত হোসেনের হাতে। যিনি অতীতে অর্থ আত্মসাৎ, ভুয়া সার্টিফিকেট, তথ্য পাচার, নৈতিক স্খলন ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মতো একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত। যেখানে শাহাদাত সেখানেই মারামারি, মামলা-হামলা, রক্ত। অপরাধ আর শাহাদাত পাশাপাশি চলতে চলতে বীমা খাতকে কলুষিত করে চলছে। যার কারণে দীর্ঘদিন বীমা খাতে মার্কেটিং-এ কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর তাকে গ্রহণ করেনি কোনো বীমা প্রতিষ্ঠান। অথচ তার মতো বিতর্কিত ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, মামলা, হামলা আর লুটপাটে শেষ হচ্ছে হোমল্যান্ড লাইফ।
ভুয়া শিক্ষাগত সনদ, অভিজ্ঞতার সনদ জালিয়াতি, চাকুরির নিয়োগ পত্র, ছাড় পত্র ও স্বাক্ষর জালিয়াতি, ভুয়া প্যাড, সিল কাগজপত্র জালিয়াতিসহ সকল অপরাধই করেছে তিনি। সন্ধানী লাইফ, পদ্মা লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, বায়রা লাইফ থেকে বিতাড়িত হয়ে সবশেষে হোমল্যান্ড লাইফকে খুবলে খাচ্ছেন শাহাদাত। হোমল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সুযোগে পরিচালনা পর্ষদের একাংশকে ভুল বুঝিয়ে এই চিহ্নিত প্রতারক হোমল্যান্ডে ঢুকে নতুন মিশন শুরু করে। তার অনিয়ম-দুর্নীতি ও নানা অপকর্মের কারণে হোমল্যান্ডে চরম বিভাজন তৈরি হয়। প্রতিনিয়ত মারামারি, মামলা-হামলায় জড়িয়ে প্রতিষ্ঠান চলে যাচ্ছে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। হতাশায় ডুবছে লাখ লাখ গ্রাহক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসব অপকর্মে কলঙ্কিত হচ্ছে দেশের পুরো বীমা খাত।
হোমল্যান্ড লাইফে মো. শাহাদাত হোসেন নিয়োগ পান উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (মার্কেটিং) হিসেবে। মাত্র তিন মাসের মাথায়, ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর, কোম্পানি তাকে গুরুতর অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চাকরি থেকে টারমিনেট করে। অফিসিয়াল নথিতে উল্লেখ আছে, তিনি কর্মী নিয়োগে ব্যর্থতা, সংগঠন পরিচালনায় অদক্ষতা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, চেয়ারম্যানের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, কোম্পানি থেকে তথ্য পাচার, নৈতিক স্খলনসহ ১ কোটি ৬২ লাখ ৪৭ হাজার ৯০১ টাকা বাকিতে ব্যাবসা করেন এবং সেই টাকা কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে জমা দেননি। চাকুরিরত অবস্থায় কোম্পানির অনুযায়ী ডিএমডি শাহাদাতকে একটি পোস্টপেইড মোবাইল সিম দেওয়া হলেও তিনি তা ব্যবহার না করে উলটো কয়েকমাসের মোবাইল বিল দাবী করেন। এসব বিষয় নিয়ে প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মতিন আইডিআর-এ শাহাদাতের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।
কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সিএফও মো. রবিউল আলম এক চিঠিতে ডিসিএস-এর ১ কোটি ৬২ লাখ ৪৭ হাজার ৯০১ টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে শাহাদাতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি উল্লেখ করেন। তার এসব অপকর্মের কারণে বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা ব্যাপক ধোলাই দিয়ে কোম্পানি থেকে বের করে দেয়।
শাহাদাতকে দেয়া অব্যাহতি চিঠিতে বলা হয়, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (মার্কেটিং) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও নিয়োগের শর্ত ভঙ্গ করেন। সংগঠন সম্প্রসারণ, ব্যাবসা বৃদ্ধি, কোম্পানিতে কোনো উন্নয়ন কর্মী-কর্মকর্তা নিয়োগ করতে ব্যর্থ হন শাহাদাত। এমনকি নতুন কোনো ব্যাবসাও অর্জন করতে পারেননি তিনি। এছাড়াও সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা, চেইন-অফ-কমান্ড ভঙ্গ ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রুপিং-এর অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। কোম্পানি সচিব ও প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো. শাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে গত বছরের অক্টোবরে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, মাত্র তিন মাস পরই অর্থলোভী সাবেক চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনকে, বর্তমান দেশের এই অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে মৰ সন্ত্রাস করে কোম্পানি দখল করে দেবে বলে এক রকম উন্মাদ করে ফেলেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান জামাল উদ্দিন শুধু টাকা নয় বয়স হলেও মহিলার প্রতিও আছে তার বিশেষ দুর্বলতা, আর বাটপাড় শাহাদাত সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভুয়া লেটার তৈরি করে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা দাবি করেন শাহাদাত। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ১৭ যেই দাবি করেন সেইটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, হোমল্যান্ড লাইফের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা যায়, এ বছরের গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জামাল উদ্দিন অফিসে এমডি আব্দুল মতিন ও ডিএমডি লুৎফুন নাহার আলোর সাথে মিটিং করে এমডি আব্দুল মতিনের গাড়িযোগে এয়ারপোর্ট যান। সুতরাং যেই লেটার শাহাদাত দেখাচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভুয়া পরবর্তীতে শাহাদাত সাবেক কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত বহিষ্কৃত কর্মকর্তাকে নিজ দলে ঢুকান এবং একের পর এক ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করেন, ২৮ এপ্রিল জামাল উদ্দিনকে সামনে রেখে মব সন্ত্রাসীদের নিয়ে হোমল্যান্ডের প্রধান কার্যালয়ে ঢুকেন। তখন জিম্মি করেন তৎকালীন এমডি, ডিএমডিসহ কয়েকজন পরিচালককে, যাহার সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষিত রয়েছে তাদের কাছে। পরবর্তীতে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে গত ২৯ এপ্রিল। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে, বন্ধ অফিস তালা ভেঙে বাটপাড় শাহাদাত ও তার সন্ত্রাস নিয়ে অফিসে ঢুকে যান । ২৯ এপ্রিল অফিস দখল করে নেন। প্রতিষ্ঠানে ঢুকে এমডি ও ডিএমডির চেম্বারের তালা ভেঙে প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় শাহাদাত চক্র। ভিতরের এসব অপকর্মের প্রমাণ মুখতে প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ভেঙে ফেলেন শাহাদাত বাহিনী। প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদের ভয় দেখিয়ে পিআর বই ছিনিয়ে নেন। যা দিয়ে কোটি টাকা কালেকশন করে কোম্পানির অ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে নিজেরাই ভাগ-ভাটোয়াৱা করে খাচ্ছে এই বাহীনি। যে অর্থ থেকে মোটা অঙ্কেৱ জামাল উদ্দিনকেও দিয়েছে। এখনই সেই জোরপূর্বক দখল করা অফিসেই অবস্থান করে এই ডিএমডি শাহাদাত।
নথিপত্রে দেখা যায়, ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে ১৮ মে পর্যন্ত সময়কালে শাহাদাত হোসেন দায়িত্বে থাকাকালীন কোম্পানির তহবিল থেকে ৩৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এর মধ্যে জামাল উদ্দিন নেন ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা, শাহাদাত হোসেন ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা, কামরুল আহসান ৩ লাখ টাকা এবং কাজী শহিদুল ইসলাম ৫ লাখ টাকা। এই অর্থ আত্মসাতের জন্য ব্যবহৃত প্রতিটি আইওইউ স্লিপে শাহাদাত হোসেনের স্বাক্ষর রয়েছে।
পরবর্তীতে থানায় একাধীক জিডি ও মামলাও করা হয় তার বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য ২০১২ সালে গোল্ডেন লাইফে চাকুরীরত অবস্থায় পিআর জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ধোলাইয়ের শিকার হয়েছিল এই শাহাদাত। গোল্ডেন লাইফে হামলা-মামলা আর মারামারির নেপথ্য নায়ক ছিলেন শাহাদাত। অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকতে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল এই শাহাদাত। যাতে প্রতিষ্ঠান পরে চরম ক্ষতির মুখে। এসব অপকর্মের কারণে গোল্ডেন লাইফের করা মামলায় দীর্ঘদিন জেল খাটতে হয় এই তাকে। এর আগে সন্ধানী লাইফে চাকুরীরত অবস্থায় লক্ষ্মীপুরে প্রতারণার কারণে সাধারণ গ্রাহকদের গণরোশে মার খেয়ে এলাকাছাড়া হন এই শাহাদাত। ঢাকায় এসেও ঐ প্রতিষ্ঠানে ঢুকে জালিয়াতি, অনিয়ন-দুর্নীতি আর অর্থ লোপাটের কারণে মামলা খেতে হয় তাকে। এমনকি পদ্মা লাইফে থাকাকালীন সময়েও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয়েছিল।
প্রতিষ্ঠানের আর্থিক দৈন্যদশার মধ্যেও আইডিআরএর নিয়ম ভঙ্গ করে আইও স্লিপ দিয়ে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করছে শাহাদাত। এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য হলো—হোমল্যান্ডে যোগদানের আগে শাহাদাত যে বায়োডাটা দাখিল করেছিলেন, তা পুরোপুরি মিথ্যা ও জাল তথ্যপূর্ণ। তিনি দাবি করেন, ২০০৯ সালে আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে বিবিএ (অনার্স) ডিগ্রি অর্জন করেছেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০০৬ সালের ২২ অক্টোবর সরকার এসআরও জারি করে আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি বন্ধ ঘোষণা করে। বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রমের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই, অনুমোদিত কোনো ক্যাম্পাস বা কর্তৃপক্ষও নেই। ফলে ২০০৯ সালের ওই ডিগ্রি পুরোপুরি ভুয়া।
এই শাহাদাতের অর্থ-আত্মসাতের পাশাপাশি রয়েছে নারী কেলেংকারীর আরেক অন্ধকার অধ্যায়। ‘ত’ আদ্যাক্ষরের এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কের গুঞ্জন রয়েছে।
তার বায়োডাটায় আরও উল্লেখ আছে, তিনি ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু সেই নিয়োগপত্রটিও জাল। তথাকথিত ওই নিয়োগপত্রে সোনালী লাইফের তৎকালীন সিইও অজিত চন্দ্র আইচের স্বাক্ষর থাকলেও, কোম্পানির নথি অনুযায়ী এ ধরনের কোনো নিয়োগ কখনো হয়নি।
বরং বর্তমানে শাহাদাত হোসেনকে পুনরায় গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। “জেনারেল সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট” নামে একটি নতুন বিভাগও খোলা হয়েছে, যেখানে শাহাদাতকে সিনিয়র পদে বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
সব মিলিয়ে হোমল্যান্ড লাইফ এখন আদালতের নির্দেশনা, আইডিআরএর নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলার বাইরে এক চক্রের কবলে। আদালতের রায় কার্যকর না হওয়া, জাল ডিগ্রিধারী ও অর্থ আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত এক ব্যক্তির হাতে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুই বীমা খাতের জন্য এক ভয়াবহ দৃষ্টান্ত।
২০২৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চ হোমল্যান্ড লাইফের পূর্ববর্তী পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে একজন প্রাক্তন জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠনের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, কোম্পানির চার কর্মকর্তা—অ্যাডিশনাল এমডি আব্দুল মতিন, ডিএমডি লুৎফুন নাহার আলো, অ্যাডিশনাল এমডি (চেয়ারম্যান নিয়োগপ্রাপ্ত) মো. শাহাদাত হোসেন ও ডিএমডি জাকির হোসেন সরকারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল বোর্ডের। কিন্তু আজ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বরং আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে শাহাদাত হোসেন ও জাকির হোসেন সরকার কোম্পানির প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ দখল করে রেখেছেন।
এখন প্রশ্ন উঠেছে—হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকর করতে আইডিআরএ ও অর্থ মন্ত্রণালয় কী করছে? তারা কি এই অনিয়ম দেখেও নীরব থাকবে? বীমা খাতের গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় যদি এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে হোমল্যান্ড লাইফের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের বীমা শিল্পে আস্থার সংকট আরও গভীর করবে।
বাংলাদেশের বীমা খাতে দুর্নীতি, ভুয়া ডিগ্রি, জাল নিয়োগপত্র ও অর্থ আত্মসাতের প্রতীক হয়ে উঠেছেন মো. শাহাদাত হোসেন। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তার হাতে হোমল্যান্ড লাইফের নিয়ন্ত্রণ থাকা মানে কেবল এক প্রতিষ্ঠানের নয়, পুরো খাতের প্রতি জনগণের আস্থা ধ্বংসের সমার্থক।
হোমল্যান্ড লাইফের কর্মকর্তারা বলছেন, শাহাদাতের হাতে কোম্পানিটি এখন ভয়াবহ সংকটে। তিনি অফিসে সন্ত্রাসের মাধ্যমে কর্মীদের জিম্মি করে রাখছেন, মাঠ পর্যায়ের কালেকশন নিজের দলে ভাগ করে নিচ্ছেন। অনেক কর্মকর্তা ভয়ে অফিসে যেতেও সাহস পাচ্ছেন না। তবু তারা প্রতিষ্ঠানের সম্মান রক্ষায় আইনের আশ্রয় নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের ভাষায়, শাহাদাত একজন উচ্ছৃঙ্খল, বেহায়া ও নৈতিকতাহীন প্রতারক, যার কারণে হোমল্যান্ড লাইফ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
বাংলাদেশের বীমা খাতে দুর্নীতি, ভুয়া ডিগ্রি, জাল নিয়োগপত্র ও অর্থ আত্মসাতের প্রতীক হয়ে উঠেছে শাহাদাত হোসেন। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তার হাতে হোমল্যান্ড লাইফের নিয়ন্ত্রণ থাকা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের নয়, পুরো বীমা খাতের প্রতি জনগণের আস্থাকে ধ্বংস করছে। আইডিআরএ, অর্থ মন্ত্রণালয় ও আদালত যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তবে হোমল্যান্ড লাইফের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল নিজেদের নয়, পুরো বীমা শিল্পের পতনের দায় বইবে।
এসব বিষয়ে হোমল্যান্ড লাইফের ডিএমডি লুৎফুন নাহার আলো বলেন, ”শাহাদাত একজন উগ্র উশৃংখল, বেয়াদপ নির্লজ্জ, কতটা নির্লজ্জ হলে নিজের জামা কাপড় নিজে ছিঁড়ে আমাদের নামে মামলা করেছে। সাবেক চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন স্যারকে জিম্মি করে মব সন্ত্রাস করে অফিসে দখল করে অর্থ ্আত্মসাৎ করছে। শাহাদাত বা শাহাদাত এর মতো যারা, এরা এই শিল্পের জন্য কিট, এদের জন্য বিমা শিল্প আজ ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের সহ ভালো স্টাফদেৱ নামে মিথ্যা মামলা করে লুকিয়ে রাখে। আবার সেইটা তার লোক দিয়ে গোপনে আমাদের ভারপ্রাপ্ত এমডি আব্দুল মতিন স্যারকে জানিয়ে দেন, অফিসে আসলে গ্রেফতার হবে, উনি ভদ্র মানুষ, যার কারণেই অফিসে যেতে পারেন না। আর বেশি দিন লাগবে না, অফিসের এবং মাঠেৱ কর্মকর্তা একসাথে নিয়ে শাহাদাতকে জুতা পিটা করে অফিস থেকে বের করে দিবে। আমরা প্রতিষ্ঠানের সম্মানেৱ কথা চিন্তা করে লোকজন থামিয়ে রেখেছি এবং আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আইনের মাধ্যমেই সব নিষ্পত্তি করতে চাচ্ছি।”
শাহাদাতের অপরাধের ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ জানালেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না-করায় হতাশা প্রকাশ করেছে তারা।
এসব বিষয়ে হোমল্যান্ড লাইফের অফিসে গিয়ে ও একাধীক বার ফোন করলে কেউই বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
হোমল্যান্ড লাইফের অনিয়ম-দুনীর্তি, লুটপাট নিয়ে ধারাবাহিক অনুসন্ধানের দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশিত হবে শিঘ্রই।
–প্রিয় পাঠক, আপনিও আমাদের কাছে যে কোন তথ্য শেয়ার করুন, থাকুন আমাদের সঙ্গে।