বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন

মুক্তি পেলেন ৩৩ মামলার সেই ভুল আসামি জাহালম

মুক্তি পেলেন ৩৩ মামলার সেই ভুল আসামি জাহালম

ডেস্ক নিউজঃ গাজীপুরের কাশিমপুর কে‌ন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে মুক্তি পেয়েছেন দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) দায়ের করা ৩৩টি মামলার ‘ভুল আসামি’ জাহালম (৩২)। রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত ১টার দিকে আদালতের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে মুক্তি দেয়। প্রায় ৩ বছর তি‌নি বিনা অপরাধে কারাগারে ব‌ন্দি ছিলেন। মুক্তির পর দুদকের যেসব কর্মকর্তার কারণে বিনা অপরাধে জেল খেটেছেন তাদের বিচার দাবি করেছেন জাহালম। এছাড়া সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া কাউকে যেন এভাবে গ্রেপ্তার না করা হয় তারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় ‘ভুল আসামি’ জাহালমকে রোববার সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন হাইকোর্টের বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। এ সময় আদালত তাকে তাৎক্ষণিকভাবে কারাগার থেকে মুক্তির নির্দেশও দেন আদালত।

জাহালমের কারা মু‌ক্তির বিষয়‌টি নি‌শ্চিত করে কাশিমপুর কে‌ন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা জানিয়েছেন, এ কারাগারে বন্দি জাহালম ওরফে জানে আলমকে হাইকোর্টের নির্দেশে রবিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর আগে তাকে দেওয়া আদালতের মুক্তির আদেশ মহা-কারাপরিদর্শকের দফতরের মাধ্যমে রাত ১২টা ৫মিনিটের দিকে কাশিমপুরের এ কারাগারে পৌঁছে। পরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার জাহালমকে মুক্তির ওই আদেশ দেন।তি‌নি জানান, আদালতের নির্দেশে জাহালমকে কারাগার থেকে মু‌ক্তি দেওয়া হয়েছে। তি‌নি ২০১৬ সালের ২৭ মে থেকে এ কারাগারে ব‌ন্দি ছিলেন।জাহালমের ভাই শাহানুর মিয়া বলেন, মি‌ডিয়ার সহযো‌গিতায় দীর্ঘ দিন পর হলেও সত্য প্রকাশ হয়েছে। যার কার‌ণে আজ আমার ভাইকে আদালত কারাগার থেকে মু‌ক্তির নির্দেশ দিয়েছেন। আ‌মি ও আমার প‌রিবার আন‌ন্দিত। তবে আমরা পা‌রিবা‌রিক, সামা‌জিক ও আ‌র্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষ‌তিগ্রস্ত হয়ে‌ছি। এ ক্ষ‌তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাইবো। যাদের কারণে আমার ভাইকে বিনা অপরাধে জেল খাটতে হয়েছে তাদের সবার বিচার চাই।টাকা জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের মামলায় তাকে ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করা হয়। এরপর ওই বছরের ২৭ মে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে এ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। তিনি টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার ধুবরিয়া এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে। জাহালম ওরফে জানে আলম পেশায় পাটকল শ্রমিক। কারাগার থেকে মুক্তির সময় তার ভাই শাহনুর মিয়া কারাফটকে উপস্থিত ছিলেন।সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা দায়ের করে দুদক। এই অভিযোগে দুদক কার্যালয়ে হাজির হওয়ার কথা জানিয়ে চিঠি যায় জাহালমের টাঙ্গাইলের বাড়ির ঠিকানায়। চিঠি পেয়ে প্রায় ৫ বছর আগে দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে জাহালম বলেছিলেন, তিনি মামলার আসামি সালেক নন, তার নাম জাহালম। এ সময় জাহালম নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। কিন্তু সেদিন নিরীহ পাটকল শ্রমিক জাহালমের কথা দুদকের কেউ বিশ্বাস করেননি। দুদকের ভুলের কারণে ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি আসামি সালেকের বদলে গ্রেফতার হন জাহালম। এরপর দুদকের ওইসব মামলায় সালেকের বদলে তিন বছর কারাগারে বন্দি জীবন কাটাতে হয়েছে টাঙ্গাইলের নির্দোষ জাহালমকে। কারাবন্দি জাহালম বহুবার আদালতে হাজিরা দিলেও তার জামিন মেলেনি। ইতোমধ্যে দুদকের ৩৩টি মামলার মধ্যে ২৬টি মামলায় জাহালমকে আসামি আবু সালেক হিসেবে চিহ্নিত করে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এসব মামলায় বিচারিক আদালতে বিচার শুরু হয়।দুদকের মামলায় প্রকৃত আসামি আবু সালেকের স্থলে নির্দোষ শ্রমিক জাহালম কারাগারে বন্দি থাকার বিষয়ে গত ৩০ জানুয়ারি বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত। পরে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে। এরপর আদালত রবিবার জাহালমকে দুদকের ২৬ মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দিয়ে বলেন, কোনও নির্দোষ ব্যক্তিকে এক মিনিটও কারাগারে রাখার পক্ষে আমরা নই। জাহালমের কারাগারের মেয়াদ একদিন বাড়বে, তো আপনার (দুদক) ওপর কমপেনসেশন (ক্ষতিপূরণ) বাড়বে। কমপেনসেশন করতে হবে। দুদক করেন বা ব্যাংক করেন। আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার রাতে কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন জাহালম ওরফে জানে আলম। এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি ২৬  মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে থাকার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ও মামলার বাদীসহ চারজনকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী, স্বরাষ্ট্র সচিবের একজন প্রতিনিধি ও আইন সচিবের একজন প্রতিনিধিকে উপস্থিত থেকে এ ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। এ বিষয়ে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন উপস্থানের পর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিচারপতি নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com