সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক: রাজধানী ঢাকার সন্নিকটে সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুজনের অত্যাচার নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে পরেছে এলাকাবাসী। একাধীক ভুক্তভোগীর অভিযোগে উঠে এসেছে চেয়ারম্যান ও তার সন্ত্রাসী বাহীনির বিভিন্ন অপকর্ম-নির্যাতনের চিত্র।
এটা ২০১৭ সালের কথা, হঠাৎ করে ১১/০৩/২০১৭ ইং তারিখ রাতে বাসা থেকে ডেকে নেওয়া হয় স্থানীয় বাসিন্দা শাহবুদ্দিন ফকিরকে চেয়ারম্যান সুজনের বাড়িতে। সেখানে নেওয়ার পরকোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাতুড়ী দিয়ে পেটাতে থাকেন কয়েকজন। আর চেয়ারম্যান বলতে থাকেন ওরে মেরে ফেল, মারতে মারতে তার হাত-পা ভেংগে ফেল। অত্যাচারের এক পর্যায়ে যখন প্রায় মৃত্যু হওয়ার পথে ঠিক তখনি একটা পিস্তল দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং বলা হয় সে নাকি চেয়ারম্যান কে মারতে এসেছে।
কিন্তু সত্য কখনো চাপা থাকে না। সত্যি একদিন প্রমান হয়ই। সামান্য জমি নিয়ে শাহবুদ্দিনকে এমন নির্যাতন করে এই ভূমিদস্যু চেয়ারম্যান। ২০১৭ সালে এমন ঘটনা ঘটলেও শাহবুদ্দিনকে কে বা কারা, বাড়ি থেকে ধরে এনেছিল চেয়ারম্যান সুজনের বাড়িতে তার সঠিক তথ্য পাওয়া গেলো ২০২১ সালে এসে । শাহবুদ্দিনকে বাড়ি থেকে সন্ত্রাসী আরিফুল, ফরিদুল, শাহীনের নেতৃত্বে তার আরো কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী আর এমনই তথ্য দিলেন চেয়ারম্যান বাড়ির একজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চেয়ারম্যান এক আত্নীয় বলেন, চেয়ারম্যানের এত কিছুর জন্য দায়ী তার চাচাতো ভাই মামুন মাতবর। এই মামুন হচেছ চেয়ারম্যান এর সন্ত্রাসী গ্রুপের মুল হোতা এবং জমি দখল চাঁদাবাজীর মুল নায়ক।
চেয়ারম্যানের অমানবিক নির্যাতনের শিকার শাহবুদ্দীন বলেন, আমাকে মারার পর আমি মামলা করলেও তাদের হুমকিতে আবার মামলা তুলে নিতে হয়েছে। শাহবুদদিন আরো বলেন, আমার উপরে চলা নির্যাতন আর হয়রানি সইতে না-পেরে আমার বাবাও অকালে মারা গেছে। বিরুলিয়ার সরেজমিন ঘুরে পাওয়া যায় চেয়ারম্যান এর ভয়ানক তথ্য, যা শুনলে শরীর শিউরে উঠবে।
চেয়ারম্যান সুজন তার এলাকায় গড়ে তুলেছেন সন্ত্রাসের রাজত্ব। তার নিজেস্ব সন্ত্রাস বাহিনী নিয়ন্ত্রন করে তার চাচাতো ভাই মামুন। তাদের বাহিনিতে প্রায় ২০-২৫ জন সশস্র সদস্য রয়েছে, তারা সারাদিন চেয়ারম্যান বাড়ির আসে পাশে মহড়া দিতে থাকেন এবং চেয়ারম্যান যখন যেখানে পাঠান সেখানে গিয়ে শুরু করেন অত্যাচার। চেয়ারম্যানের বড় ভাই মেরাজের বিরুদ্ধেও রয়েছে জমি দখলের অভিযোগ। তার বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য রয়েছে একাধিক মামলা।
কিছুদিন আগে আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সুজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করলে ঐ মামলায় গ্রেফতার হয় এই দুর্নিতীবাজ চেয়ারম্যান। সেই মামলায় তাকে ওএসডি করা হয়। তারপর তিনি মহামান্য হাই কোর্ট আবেদন করলে তাকে ৬ মাসের সময় বেধে দেন এবং তাকে সতর্ক করে দেন। তারপরও কোনকিছুর তোয়াক্কা করছে না এই বিতর্কীত চেয়ারম্যান ।
বন বিভাগের জমি মানুষকে দখল করিয়ে দিয়ে কোটি কেটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও আছে এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। শুধু তাই না, তার এবং তার ভাইয়ের নামে পাওয়া গেছে অনেক মামলার নথী। তার পরও তিনি কোনো কিছুর তোয়াক্কা না-করে চালিয়ে যাচ্ছেন তার সন্ত্রাসী কার্যক্রম।
চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনির প্রধান মামুনের আপন চাচা মোঃ হায়দার মাতবর বলেন, আমাকেও ছাড় দেয়নি এই চেয়ারম্যান। আমার জমি দখলের চেষ্টা করে যাচ্ছে এই চেয়ারম্যান। আমি তার আপন লোক, তারপরও আমি আজ দুই মাস বাড়ি ছাড়া। আমাকে মেরে ফেলার জন্য তার সন্ত্রাসী বাহিনি আমাকে আটক করেছিল। আমি ওখান থেকে পালিয়ে জীবন বাঁচাই এবং আমি এখন তাদের ভয়ে এলাকায় যেতে পারি না। আমি বিরুলিয়া গেলেই নাকি আমাকে মেরে ফেলা হবে।
চেয়ারম্যানের কূ-কীর্তি শুধু এখানেই শেষ না। চেয়ারম্যানের নামে র্যাব-৪ এ অভিযোগ করেছেন এক ভুক্তভোগি। সেই অভিযোগের তদন্ত চলছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান সুজনের মুঠোফোনে ফোন করে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বাসায় যেতে বলেন।