বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে গুলি চালিয়েছেন- এমন নজির কেউ দেখাতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটি উশন মিলনায়তনে ছাত্রলীগ আয়োজিত সভায় এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ওই সভায় যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের শক্তির মূল উৎস ছিলেন জিয়া। পাক সেনাদের বিরুদ্ধে তিনি গুলি চালিয়েছেন- এমন নজির কেউ দেখাতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা স্থানীয় দালালচক্র, যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর তারা কোনোদিন চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক। তারপরও যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, বিজয় অর্জন করল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজিত হলো। তখন সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই ১৫ আগস্ট এই হত্যাকাণ্ড তারা চালিয়েছিল। এরপরে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামটা সম্পূর্ণ মুছে ফেলা হয়েছিল।
তিনি বলেন, জয় বাংলা স্লোগান, যে স্লোগান দিয়ে লাখো শহীদ রক্ত দিয়েছেন সেই স্লোগান নিষিদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের সব কিছু ধ্বংস করা হয়েছিল। ভাবখানা এমন হয়েছিল যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। আবার যেন সেই পাকিস্তান একটা প্রদেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেন সৃষ্ট এবং সেই পাকিস্তান এসে আবার আমাদের ওপর খবরদারি করবে এটাই যেন অনেকের আকাঙ্ক্ষা ছিল।
সরকারপ্রধান বলেন, পঁচাত্তরের পরে যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেখানে যেমন আমাদের দলেরও কিছু বেঈমান, মোনাফেক, মীরজাফর ছিল। যেমন খন্দকার মোশতাক গং। আর তার শক্তিটা ছিল জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে একটা সেক্টর কমান্ডার অর্থাৎ সেখানে খালেদ মোশাররফ আহত হয়ে গেল, জিয়াকে সেক্টর কমান্ডার করা হয়েছিল। কিন্তু সে কখনো বিশেষ করে জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গুলি চালিয়েছে এ রকম কিন্তু নজির নেই। এ রকম কোনো নজির কেউ দেখাতে পারবে না।
তিনি বলেন, যখন মোশতাক বা রশীদ-ফারুক তারা বিবিসিতে যে ইন্টারভিউ দিয়েছে ১৫ আগস্টের পর, সেই ইন্টারভিউতে তারা স্বীকার করেছে। শুধু তাই না, অনেক পত্রিকায়ও তাদের বক্তব্য এসেছে যে, জিয়াউর রহমান এই খুনিদের সঙ্গে সবসময় ছিল এবং জিয়াউর রহমানই ছিল মূল শক্তির উৎস। সেই বেঈমানিটা করেছিল। অথচ জিয়াউর রহমান ছিল একটা মেজর। স্বাধীনতার পর মাত্র তিন বছরের মধ্যে মেজর থেকে একটা প্রমোশন দিয়ে মেজর জেনারেল করা হয়েছিল। সেটা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
দেশনেত্রী বলেন, কাজেই সেটাও তাদের ভোলা উচিত না যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বদৌলতেই জিয়াউর রহমান মেজর থেকে মেজর জেনারেল হয়েছিল। পাকিস্তান দেশটা থাকলে ওই মেজর হিসেবেই তার রিটায়ার করতে হতো। তার উপরে আর উঠতে পার তো কি না সন্দেহ। তখন যে ভূমিকা নেওয়ার কথা ছিল কেউ নেয়নি। জাতির পিতার লাশ, সবার লাশ ১৬ তারিখ পর্যন্ত ওই বত্রিশ নম্বর বাড়িতেই ছিল। কাফন-দাফনের ব্যবস্থাটুকু পর্যন্ত করা হয়নি।
তিনি বলেন, যারা বেঈমানি করে এবং এই বেঈমানির ইতিহাস যদি দেখা যায়, সেনাবাহিনীতে মুক্তিযুদ্ধ যারা করেছে সেই মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করা। হাজার হাজার সেনাবাহিনীর সদস্যকে নির্বিচারে যে হত্যা করা হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এমন এমন রাত গেছে যে জোড়ায় জোড়ায় ফাঁসি হয়েছে। ১০ জন, ২০ জন এ রকম করে একেক রাতে ফাঁসি, শত শত লোককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। কে দিয়েছে? জিয়াউর রহমান দিয়েছে। শুধু ঢাকা জেলে না, খুলনা, রাজশাহী বিভিন্ন জায়গায় এই হত্যাকাণ্ড সে চালিয়েছে।
ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি ছাত্রলীগের হাতে খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম যে লেখাপড়া শিখতে হবে। ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি। সেই শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি এই আদর্শ নিয়ে ছাত্রলীগকে তৈরি হতে হবে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে, এরপরে এরশাদ, তারপরে খালেদা জিয়া তারা কি করেছে? তারা তো ছাত্র সমাজকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হোক এই জাতি এটা তারা কখনো চায়নি। অবশ্য চাইবেই বা কী করে, নিজেদের কী অবস্থা সেটাও তো দেখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশে ১৫ আগস্টের যে হত্যাকাণ্ড ঘটে গেছে। এরপরে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা। এ ছাড়াও বহুবার আমার ওপরে হামলা। এমনকি চুয়াত্তর সালে কামালের ওপর হামলা হলো। তাকেও গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হলো। যখন দেখল সে বেঁচে গেছে তখন তার বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া হলো। মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো হলো। অর্থাৎ যারা পরাজিত শক্তি তারা সবসময় একটা সক্রিয় ছিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্রদের ভূমিকা রয়েছে। আজকে বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জন সেই মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন বা মিলিটারি ডিক্টেটরশিপের বিরুদ্ধে আন্দোলন বা যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সবসময় ছাত্ররাই করেছে। ছাত্ররাই সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। এ ধরনের বাধাবিঘ্ন আসতে থাকবে। সৎ পথে থাকলে যে সত্যের পথ সবসময় কঠিন হয় সে কঠিন পথকে যারা ভালোবেসে এগিয়ে যেতে পারে তারাই কিন্তু সাফল্য আনতে পারে।