বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫০ অপরাহ্ন
কালীগঞ্জ উপজেলার রতনপুরে মাহফুজা খাতুন (৩২) নামের এক গৃহবধূকে গাছের সঙ্গে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। তাঁকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যৌতুকের দাবিতে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর ওপর নির্যাতন চালায় বলে গৃহবধূ অভিযোগ করেছেন। পুলিশ মাহফুজার ননদ মাছুমা বেগম (৩০) ও দেবরের স্ত্রী মর্জিনা বেগমকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে।
চিকিৎসাধীন মাহফুজা খাতুন জানান, ২০০৪ সালে বিয়ে হয় আড়ংগাছা গ্রামের অহিদুল্লাহ গাজীর সঙ্গে। বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা অহিদুল্লাহ বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা, দুটি গরু ও চার ভরি স্বর্ণালঙ্কার নেন। দাম্পত্য জীবনে অশান্তি থাকলেও তাদের সংসারে সানজিদা আশা তাউশির (১৩) ও টুন্নি খাতুন (৮) নামের দুটি মেয়ে রয়েছে। পুত্রসন্তানের জন্ম না হওয়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন ক্ষুব্ধ ছিল মাহফুজার ব্যাপারে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি ফের যৌতুকের টাকা দাবি করে মারধর করে তারা। বাপের বাড়ির লোকজন উদ্ধার করে মাহফুজাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সুস্থ হওয়ার পর ছোট মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতেই ছিলেন তিনি। কয়েক দিন পর নুরনগর ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে একটি ভুয়া তালাকনামা পাঠানো হয় মাহফুজার কাছে। এদিকে মাহফুজা সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্বামী, শাশুড়ি, ননদ, দেবরের স্ত্রীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন। মাহফুজার ভাই বাবলুর রহমানকে ২৩ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে আরেকটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এ বিষয়ে শ্যামনগর থানার ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
গৃহবধূ মাহফুজা জানান, তালাকনামা পাঠানোর তারিখেই স্বামী অহিদুল্লাহ শ্যামনগরের সালমা নামের এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন বলে খবর পান। গত শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছোট মেয়ে টুন্নিকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যান মাহফুজা। ঘরের দেখতে পান নতুন বউ সালমাকে। এ সময় স্বামী অহিদুল্লাহ, শাশুড়ি মনোয়ারা, দেবর মহিবুল্লাহ, তার স্ত্রী মর্জিনা, ননদ মাসুমা বেগম ও ননদের স্বামী আব্দুল মজিদ তরফদার একযোগে মারধর শুরু করে। জীবন বাঁচাতে একটি ঘরে আশ্রয় নিলে শাবল দিয়ে জানালা ভেঙে তাঁকে বের করে আনা হয়। এরপর শুরু হয় পৈশাচিক নির্যাতন। শরীরের স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে আঘাত করলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এ অবস্থাতেই তাঁকে উঠানে থাকা একটি সফেদাগাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলা হয়। দুই হাত বেঁধে চলে নির্যাতন। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। বড় ভাই বাবলুর রহমান খবর পেয়ে পুলিশের সহযোগিতায় দুপুর ১টার দিকে তাঁকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
প্রতিবেশী আড়ংগাছা গ্রামের রহমত আলী, আছুরা খাতুন ও নাজমুল হোসেন এসব নির্যাতনের কথা জানিয়ে বলেন, পুত্রসন্তান জন্ম দিতে ব্যর্থ হওয়া ও যৌতুকের দাবিতে মাহফুজাকে বারবার নির্যাতন করা হয়েছে। অহিদুল্লাহ তাঁকে তালাক দিয়েই দ্বিতীয় স্ত্রীকে বাড়িতে আনে।
এদিকে গৃহবধূর স্বামী অহিদুল্লাহ গাজী অভিযোগ অস্বীকার করে বলে, মাহফুজা বাপের বাড়িতে থাকার কারণে পরিবারের সদস্যরা ক্ষুব্ধ ছিল। এ জন্য শনিবার বাড়ি আসার পরপরই মাসহ কয়েকজন তাঁকে হালকা মারধর করেছে। দ্বিতীয় বিয়ে করা, পুত্রসন্তান জন্ম দিতে না পারার কথাগুলো সত্য নয়। আর যৌতুকের দাবিতেও তাঁকে নির্যাতন করা হয়নি।
কালীগঞ্জ থানার এসআই শওকত হোসেন জানান, মাহফুজাকে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এজাহারভুক্ত দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।