শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৫ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক :
পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির পর থেকেই দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি আগের তুলনায় বাড়লেও বন্দরে পেঁয়াজের ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকারদের পদচারণায় মুখরিত বন্দর এলাকা। এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজের চাপে বাজার থেকে দেশিয় পেঁয়াজ উধাও হয়ে গেছে।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। এদিন বন্দর দিয়ে ৩টি ট্রাকে ৬৩ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বন্দর দিয়ে রেকর্ড সংখ্যক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এদিন বন্দর দিয়ে ৪২টি ট্রাকে ৮৮৯টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আজ বন্দর দিয়ে পেয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে বিকেল ৩টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বন্দর দিয়ে ১৩ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্দর দিয়ে নাসিক ও ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। প্রথমদিনের চাইতে দ্বিতীয় দিন পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। বন্দরে ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ পাইকারিতে ট্রাকসেল ৩২ থেকে ৩৬ টাকা বিক্রি হয়েছে। এছাড়া নাসিক জাতের পেঁয়াজ ৩৮ টাকা বিক্রি হয়েছে। তবে ক্রেতা না থাকায় অধিকাংশ নাসিক জাতের পেঁয়াজ নিজ চালানে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়েছেন বন্দরের আমদানিকারকরা।
এদিকে হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে অধিকাংশ দোকানেই ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। দেশিয় পেঁয়াজ দু’এক দোকানে থাকলেও এর ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজ খুচরাতে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে এছাড়া দেশিয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
হিলি বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা নুরুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজের দাম দিন দিন শুধু বৃদ্ধি পাচ্ছিল যার কারণে আমাদের খুব সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছিল। দুদিন আগে বাজার থেকে যে দেশিয় পেঁয়াজ কিনেছিলাম ৮০ টাকা দরে আজ বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ আসায় ৪০ টাকা কেজি দরে কিনলাম।
হিলি বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মনিরুল ইসলাম বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বন্ধ থাকার কারণে দেশিয় পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখি হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ করে গত সোমবার থেকে আমদানির অনুমতি দেওয়ায় বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। এতে করে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের সররবাহ বেড়েছে যার কারণে বাজার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে। বর্তমানে পাইকারিতে ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে যা খুচরাতে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজ সরবরাহকারী আইয়ুব আলী জানান, আমরা সাধারণত দেশের বিভিন্ন মোকামে ক্রেতাদের চাহিদামত পেঁয়াজ বন্দর থেকে কিনে সরবরাহ করে থাকি। এর বিনিময়ে ট্রাক প্রতি আমরা কিছু কমিশন পাই তাই দিয়ে আমরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। আমদানির অনুমতি না থাকায় বন্দর দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় আমাদের সেই ব্যবসা একেবারে বন্ধ ছিল। যার কারণে এই কদিন মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়েছিল। গত সোমবার থেকে আবারও ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে দিন দিন আমদানির পরিমান বাড়ছে। এতে করে মোকামগুলো থেকে পেঁয়াজের ওয়াডার মিলছে। আমাদের মত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা আসছেন বন্দরে পেঁয়াজ কিনতে। কিন্তু সবাই ভয়ে ভয়ে আছেন পেঁয়াজের দাম কি হবে না হবে স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত সবাই বুঝে শুনে পেঁয়াজ কিনতে চাইছেন। যার কারণে মোকামের সবাই এখন বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক হারুন উর রশীদ বলেন, সরকারি ঘোষণা মোতাবেক গতকাল সোমবার হিলি স্থলবন্দরের বেশ কয়েকজন আমদানিকারক প্রায় ৬০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পেয়েছি। অনুমতি পাওয়ার পর সেদিনই অনেকেই এলসি খোলা সম্পূর্ণ করে ভারতীয় রপ্তানিকারককে দিয়েছিলেন। যার বিপরীতে ওই দিন থেকেই হিলি স্থলবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, গত সোমবার থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। সেদিন ৩টি ট্রাকে ৬৩ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে ৪২টি ট্রাকে ৮৮৯ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এছাড়া আজ বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, দেশীয় কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমুল্য নিশ্চিতে গত ১৫ই মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এতে করে ১৬ই মার্চ থেকে হিলি স্থলবন্দরসহ দেশের সবগুলো স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে গত রবিবার (৪ জুন) কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশীয় পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের ও শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবসহ সব ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।