রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৯ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
নোয়াখালী সদর উপজেলায় বাসায় ঢুকে মা-মেয়েকে নৃশংসভাবে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে পরকীয়া প্রেমিক আলতাফ হোসেন (২৮)।
বুধবার (১৪ জুন) রাত ১১টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম।
তিনি জানান, বুধবার রাতে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলি আদালতের বিচারক এস এম মোসলেহ উদ্দিন মিজানের আদালতে মা-মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আসামি আলতাফ।
আদালতে সে জানায়, নূর নাহার বেগমকে তার হত্যা করার ইচ্ছে ছিল না।
তাকে টাকা দেওয়ার কথা বলে বিদেশ থেকে এনে দিতে গড়িমসি করায় ভয় দেখাতে পকেট থেকে ছুরি বের করে। এ সময় সে তাকে পুলিশের ভয় দেখানোর কারণে এবং চেঁচামেচি করায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে। পরে ভিকটিমের মেয়ে ফাতেহা আজিম প্রিয়ন্তীকেও (১৬) হত্যা করে।
দোষ স্বীকার করে আসামি আলতাফ হোসেন আদালতে জানান, ভিকটিম নূর নাহার বেগমের সঙ্গে তার ওমান থাকা অবস্থায় রং নম্বরে পরিচয় হয় এবং ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হয়।
একপর্যায়ে ভিকটিম নূর নাহার বেগম আসামিকে ভিসা বাতিল করে বাংলাদেশে এসে হোটেল ব্যবসা করার জন্য বলে। তার কথায় আসামি গত ৮ জুন বাংলাদেশে এসে দত্তের হাট এলাকার মাসুদ নামে এক ব্যক্তির মেসে উঠে। এরপর ১০ জুন সাড়ে ১০টার দিকে নূর নাহারের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে। পরদিন ১১ জুন পুনরায় ভিকটিমের বাসায় গিয়ে ভিকটিম নূর নাহারের কাছে প্রতিশ্রুতিকৃত ৩ লাখ টাকা দাবি করে।
তখন ভিকটিম ২/১ দিনের মধ্যে টাকা দেবে বলে জানায়। পরের দিন আসামি নূর নাহারের বাসায় গেলে বাসার তালা বন্ধ পায়।
বুধবার (১৪ জুন) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে আসামি ভিকটিম নূর নাহারের বাসায় গিয়ে আবারো ৩ লাখ টাকা ভিকটিমের নিকট দাবি করে। ওই সময় ভিকটিম টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আসামির সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা শুরু হয় এবং ভিকটিম একপর্যায়ে আসামিকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এরপর পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর ভয় দেখালে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।
ওই সময় আলতাফ তার পকেটে থাকা ছুরি ভিকটিম নূর নাহারের গলায় ধরে আঘাত করলে ভিকটিম চিৎকার করে তার মেয়ের রুমে চলে যায়।
একপর্যায়ে আসামি ভিকটিমের মেয়ের রুমে গিয়ে তাকে গলায় এবং ঘাড়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। ওই সময় ভিকটিমের মেয়ে ফাতেহা আজিম প্রিয়ন্তী ঘুম থেকে উঠে মাকে বাঁচানোর জন্য মায়ের পিঠের ওপর পড়লে আসামি তাকেও এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। ভিকটিম নূর নাহার বেগম আসামির সঙ্গে প্রতারণা করায় তাকে হত্যা করে। তবে তার মেয়ে ফাতিহা আজিম প্রিয়ন্তীকে হত্যা করার ইচ্ছা আসামির ছিল না। উল্লেখিত জবানবন্দি আসামি স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে প্রদান করে।
প্রসঙ্গত, বুধবার (১৪ জুন) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে নোয়াখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গুপ্তাংকের বার্লিংটন মোড় সংলগ্ন কচি মিয়ার বাসার দ্বিতীয় তলায় ঢুকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় ওমান প্রবাসী আলতাফ।
গ্রেপ্তারকৃত আলতাফ হোসেন লক্ষীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল মুনাফের বাড়ির মৃত আবুল কালামের ছেলে এবং ওমান প্রবাসী ছিল।
নিহতরা হলেন, নোয়াখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফজলে আজিম কচি মিয়ার স্ত্রী নূর নাহার বেগম ও তার মেয়ে হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ফাতেমা আজিম প্রিয়ন্তী।