শনিবার, ১৯ Jul ২০২৫, ০৩:২১ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমিল্লার তিতাসে সড়কের পাশে গলা কাটা মরদেহ উদ্ধারের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরকীয়ার জেরে মায়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও দেখিয়ে মেয়েকেও ধর্ষণের অভিযোগে গলা কেটে হত্যা করা হয় ইমতিয়াজ নামের ওই যুবককে। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বরিশালের কাজীরহাট থানার ছৈয়তক্তা এলাকার প্রয়াত সিরাজুল ইসলাম মোল্লার ছেলে মো. সোহেল ইসলাম (৩০), সোহেলের ছেলে শাহীন ইসলাম (১৯) ও মেহেন্দীগঞ্জ থানার হেসামউদ্দিন এলাকার প্রয়াত জালাল হাওলাদারের ছেলে হানিফ হাওলাদার (৬১)।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লা পিবিআই কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন কুমিল্লা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম।
পুলিশ সুপার জানান, গত ১২ জুলাই তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি গুলবাগ এলাকায় সড়কের পাশে গাছের নিচে গলা কাটা একটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে। নিহত ইমতিয়াজ ওরফে মান্না (২২) বরিশালের কাজীরহাট থানার পূর্ব রতনপুর এলাকার দুলাল হাওলাদারের ছেলে।
এ ঘটনায় পিবিআইয়ের ক্রাইমসিন টিম তদন্ত শুরু করে। পরের দিন ১৩ জুলাই নিহত ইমতিয়াজ ওরফে মান্নার বাবা দুলাল হাওলাদার বাদী হয়ে তিতাস থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কুমিল্লা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক আবু বকর তথ্য-প্রযুক্তির সহযোগিতায় হত্যাকারীদের শনাক্ত করেন। পরে ১৫ জুলাই (মঙ্গলবার) ভোররাতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানার মুন্সিহাটি এলাকা থেকে মূল ঘাতক সোহেল ও তার ছেলে শাহীনকে গ্রেপ্তার করে।
তাদের দেওয়া তথ্য মতে, ১৬ জুলাই (বুধবার) হত্যায় অংশ নেওয়া আবু হানিফ হাওলাদারকে রাজধানীর রাজাবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হত্যাকারীদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, হত্যাকারী সোহেল হোসেনের গ্রামের বাড়ি বরিশালে তার স্ত্রী আর মেয়েকে রেখে ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় গাড়ি চালানোর চাকরি করতেন। গ্রামের বাড়ি গিয়ে সোহেল জানতে পারেন, তার স্ত্রীর সঙ্গে ইমতিয়াজ ওরফে মান্নার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক চলছে। পরবর্তী সময়ে সোহেল তার মাদরাসাপড়ুয়া মেয়েকে (১৫) বরিশালে দাদির কাছে রেখে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। পরে ইমতিয়াজ ওরফে মান্না তার বাড়িতে রেখে আসা মেয়েকে তার মায়ের সঙ্গে সম্পর্কের বিভিন্ন অশ্লীল ভিডিও দেখিয়ে সেগুলো ভাইরাল করার ভয় দেখায়।
এরপর মেয়েকেও শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করে। এ ঘটনার কথাও সোহেল জেনে যান।
পরবর্তী সময়ে প্রথমে স্ত্রী এবং পরে মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টি জেনে ইমতিয়াজ ওরফে মান্নাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন সোহেল, তার ছেলে শাহীন এবং মামা হানিফ হাওলাদার। হত্যার দিন একটি লাল মাইক্রোবাসে করে ইমতিয়াজ ওরফে মান্নাকে বরিশাল থেকে সিলেটে বেড়াতে যাওয়ার প্রলোভন দেখান হত্যাকারীরা। পরে সিলেট না গিয়ে কুমিল্লার তিতাসের জিয়ারকান্দি এলাকায় আসেন তারা। এ সময় গাড়িতে থাকা অবস্থায়ই ইমতিয়াজ ওরফে মান্নাকে শ্বাসরোধ করেন তিনজন। পরবর্তী সময়ে মৃত্যু নিশ্চিত হতে রাস্তায় ফেলে গলা কেটে ছুরিটি লাশের পাশে রেখে পালিয়ে যান তারা।
পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনায় জড়িত এবং গ্রেপ্তার করা তিনজনকে বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হয়েছে। তিন আসামিই আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্য কেউ থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।