মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:২১ অপরাহ্ন

২৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চীনের তৈরি ২০টি যুদ্ধবিমান কিনছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫

বিমান বাহিনীর আধুনিকীকরণ ও জাতীয় আকাশ প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চীনের তৈরি ২০টি জে-১০ সিই মাল্টি-রোল ফাইটার জেট কেনার প্রস্তাব এসেছে। চুক্তি, প্রশিক্ষণ ও আনুষঙ্গিক খরচসহ প্রকল্পটির মোট মূল্য ধরা হয়েছে ২২০ কোটি ডলার (প্রায় ২৭,০৬০ কোটি টাকা)। চলতি ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এর বাস্তবায়ন রূপায়ণের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

প্রাপ্ত আনুষ্ঠানিক নথিপত্র অনুযায়ী, জে-১০ সিই কেনার চুক্তিটি সরাসরি ক্রয় বা জি টু জি পদ্ধতিতে চীনের সঙ্গে করা হতে পারে। কাগজপত্রে উল্লেখ রয়েছে—প্রকল্পের মোট ব্যয় ১০ বছরের মধ্যে (২০৩৫-২০৩৬ অর্থবছর পর্যন্ত) পরিশোধের শর্তে পরিচালিত হবে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সম্ভাব্য হিসাব অনুযায়ী, প্রতিটি ফাইটার জেটের মূল্য প্রাক্কলিত করা হয়েছে ৬ কোটি ডলার; ২০টি বিমানের মূল ক্রয়েই বাজেট দাঁড়ায় ১২০ কোটি ডলার (প্রায় ১৪,৭৬০ কোটি টাকা)। তদুপরি, স্থানীয় ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি ক্রয় ও পরিবহন খরচ বাবদ আনুমানিক ৮২ কোটি ডলার (প্রায় ১০,৮৬০ কোটি টাকা) যোগ করা হয়েছে। বীমা, ভ্যাট, এজেন্সি কমিশন, পূর্ত কাজ ও অন্যান্য খরচ যুক্ত হলে মোট ব্যয় ২২০ কোটি ডলারে পৌঁছায়—নথিতে এমনটাই উল্লেখ আছে।

চলতি বছরের মার্চে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনে এক সফরে গেলে এ প্রস্তাব নিয়ে চীনা পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়; এতে চীন ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখায় বলে জানানো হয়। গত এপ্রিলে বিমানবাহিনী প্রধানকে সভাপতি করে এ বিষয়ের তত্ত্বাবধানে ১১ সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠিত হয়। কমিটি খসড়া চুক্তিপত্র পর্যালোচনা, জি টু জি পদ্ধতির উপযোগিতা নির্ধারণ এবং চীনা প্রতিনিধিদের সঙ্গে দরকষাকষি করে চূড়ান্ত মূল্য, পেমেন্টের শর্তাবলি ও চুক্তি চূড়ান্ত করবে। চুক্তিতে বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ, প্রশিক্ষণ, খুচরা যন্ত্রাংশ ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ-এর প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল এ এন এম মনিরুজ্জামান (অব.) বলেন, “বিমানবাহিনীর অনেকদিন ধরেই জঙ্গিবিমানের দাবি রয়েছে এবং তারা কেনার পরিকল্পনাও করছিল। তবে আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে সবার আগে প্রভাব বিশ্লেষণ করা জরুরি—বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের উত্তেজনার প্রেক্ষিতে।” তিনি আরো বলেন, ‘উপযুক্ত প্রয়োজন ও কৌশলগত বিবেচনার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।’

গত মে-র শিরোনামে জে-১০ সিই নিয়ে বিদেশে বিতর্ক উঠে—পাকিস্তান-ভারত সংঘর্ষে পাকিস্তান দাবি করে যে তারা এই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতের রাফায়েল ফাইটার ধ্বংস করেছে; তবে ওই দাবির স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। চীনীয় এয়ারশোতে বাইই অ্যারোবেটিক টিম জে-১০সি প্রদর্শন করেছে—যা জে-১০ সিরিজের একটি উন্নত মডেল হিসেবে পরিচিত।

বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর (বিএএফ) বহরে মোট ২১২টি এয়ারক্রাফট রয়েছে, যার মধ্যে ৪৪টি ফাইটার জেট—এছাড়া ৩৬টি চীনা নির্মিত এফ–৭, ৮টি মিগ-২৯, এবং কিছু ইয়াক–১৩০ লাইট অ্যাটাক বিমানও আছে। জে-১০ সিরিজের অন্তর্ভুক্তি বিমানবাহিনীর আধুনিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে দেখা হবে।

চুক্তি চূড়ান্ত হলে নির্দিষ্ট ধরনের শিক্ষা-প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও রিজার্ভ পার্টস ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে—কিন্তু নথিতে জি টু জি পদ্ধতি এবং চুক্তি শর্তাবলীর ওপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2011-2025 VisionBangla24.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com