নরসিংদীতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ কেস নং–০১/২০–২১) ঘিরে ব্যাপক জালিয়াতি, ভুয়া নামজারি এবং অবৈধভাবে ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। মামলার বাদী গনমাধ্যমকর্মীদের নিকট বুধবার (১৯ নভেম্ব) আঃ রহিম খান শাওনসহ অন্যবাদীরাও দাবি করেছেন-একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিভিন্ন দাগে অতিরিক্ত নামজারি করে অধিগ্রহণের অর্থ হাতিয়ে নিতে সক্রিয় রয়েছে।কীভাবে শুরু জালিয়াতির অভিযোগ অভিযোগে জানা যায়, বিলাসদী মৌজার আর এস দাগ ৩৬৩, ৩৬৪ ও ৩৬৬ মিলিয়ে মোট ৪২.৮৪ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ৩৬৩ নং দাগের মোট ১৩ শতাংশ জমির ৯ শতাংশই বাদী আঃ রহিম খান শাওনের দখলে বাড়িঘরসহ ভোগদখলে রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় চিনিশপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে বাদী জানতে পারেন, তার দখলীয় ভূমি অন্য দাগের দলিল দেখিয়ে দখলহীন মো. কামরুজ্জামান ভূঁইয়া গং এবং কামাল আহম্মেদ নিজেদের নামে নামজারি করে নিয়েছেন। কামরুজ্জামান ভূঁইয়া গং- ৮.৫০ শতাংশ (নামজারি জমাভাগ মামলা নং ৬৪৯১/০৬–০৭,কামাল আহম্মেদ – ৪ শতাংশ (নামজারি জমাভাগ মামলা নং ৮৫৩৫/১০–১১) এভাবে মোট ১৭ শতাংশের ভুয়া নামজারি সম্পন্ন হয়-যা মূল দাগের মোট ১৩ শতাংশ জমির চেয়েও বেশি। আপিল ও সরকারি তদন্তে নামজারির অনিয়ম প্রমাণিত অভিযোগ জানার পর বাদী নরসিংদী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আদালতে দুটি নামজারি আপিল (মো. নং ৪৩১,৪৩২/২১ ইং দায়ের করেন। আদালত সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে সরেজমিন তদন্তের নির্দেশ দেন। ২০২৩ সালের ২১ জুন দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়-আঃ রহিম খান শাওন বৈধ মালিক ও দখলদার-৯ শতাংশ জমিতে-কামাল আহম্মেদ-৪ শতাংশে মালিকানা পাওয়া যায় কিন্তু হানিফা, হোসনা খানম এবং অন্যান্যদের নামে যেসব নামজারি করা হয়েছে-তা দখলবিহীন, ভুয়া এবং দাগের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ, যা বাতিলযোগ্য। অতিরিক্ত নতুন ভুয়া নামজারি তদন্ত চলাকালে আরও দেখা যায়-দাগে জমি না থাকা সত্ত্বেও রাশেদ রানা নামে এক ব্যক্তিকে ২.৫০ শতাংশ জমির নামজারি দেওয়া হয়েছে (জমাভাগ মামলা নং ১৩৭৪১/২৩–২৪, তারিখ ১৪/০৩/২০২৪)।
বাদীর অভিযোগ-২০২০ সালে ৩৬৩ দাগে ৫ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণের পর থেকেই একটি চক্র অতিরিক্ত ভুয়া নামজারি করে সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলনের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এল এ কেইসেও ভুয়া মালিকদের নাম অভিযোগ রয়েছে-এলএ কেস নং ০১/২০–২১-এ প্রকৃত মালিকদের না জানিয়ে ভুয়া মালিকদের নামে অধিগ্রহণের কাগজপত্র প্রস্তুত করা হয়েছিল। এ ঘটনায় বাদীসহ প্রকৃত মালিকরা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করলে বিবিধ মামলা নং ৫৯/২১ গ্রহণ করা হয়। ২০২৩ সালের ২২ মার্চ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আদালতে জমাকৃত যৌথ তদন্ত রিপোর্টে ভুয়া দলিল, দখলহীন মালিকানা ও নামজারির মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় এবং অবৈধভাবে উত্তোলিত অর্থ ফেরত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। পরে বিষয়টি পুনরায় যাচাইয়ের জন্য ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
২০২৫ সালের ২৫ আগস্ট সদর এসিল্যান্ড বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষকে বিরোধপূর্ণ স্থানে উপস্থিত থাকার জন্য নোটিশ দেন। মামলা স্থগিত ও নতুন বিতর্ক ২০২৫ সালের ২৮ অক্টোবর মামলার শুনানির দিন নির্ধারিত থাকলেও বাদীপক্ষের অভিযোগ-পূর্বের তদন্তে জালিয়াতি প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও নতুন তদন্ত প্রতিবেদন দেখানো হয়নি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) আদালতে নামজারী আপীল মোকাদ্দমা দুটি এখনো বিচারধীন এবং সদর সিনিয়র সিভিল জজ আদালতে দে: মো: নং ৬৭১/২১ ও যুগান জেলা জজ ১ম আদালতে দে: মোকাদ্দমা বিচারাধীন থাকার পরও বিচারক মাহমুদা বেগম মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে দুর্নীতি আড়াল করার চেষ্টা করছেন। তবে এ বিষয়ে বিচারক মাহমুদা বেগম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। জেলা প্রশাসকের বক্তব্য নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন এ বিষয়ে বলেন—
বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেউ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবে না।