রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন অভিযোগ করেছে যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশ অমান্য করে দলটির নিবন্ধন ইস্যুতে ইচ্ছাকৃতভাবে কালক্ষেপণ করছে, যা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার এক অপচেষ্টা। মঙ্গলবার আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলেন, নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের আচরণ শুধু আদালত অবমাননা নয়, বরং গণতান্ত্রিক সংস্কার যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।
দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছিল। সেই সময় কমিশন কোনো সুস্পষ্ট কারণ না দেখিয়েই আবেদনটি খারিজ করে। এরপর অভ্যুত্থানের পর দলটি পুরোনো আবেদনের পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে সে সময়ের কমিশন জানায়—নিবন্ধন সংক্রান্ত আইনে ‘পুনর্বিবেচনার’ কোনো বিধান নেই।
এ অবস্থায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট করে। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে আদালত রুলটি ‘অ্যাবসোলুট’ ঘোষণা করে দলটির আবেদনের পক্ষে স্পষ্ট রায় দেন। একই সঙ্গে ৯০ডি ধারা অনুযায়ী গঠনতন্ত্র সংশোধনের পর নিবন্ধন প্রদান করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেন।
আদালতের রায়ের পরেও নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করেন দলীয় নেতারা। তারা জানান, নির্দেশনার পর দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে গত ৩ অক্টোবর দলটি বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশন ডেকে গঠনতন্ত্র সংশোধন সম্পন্ন করে। সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দেওয়ার পরেও কমিশন আবার বিভিন্ন কাগজপত্র চাইতে থাকে। সর্বশেষ গত ১ ডিসেম্বর প্রায় দুই হাজার পৃষ্ঠার প্রয়োজনীয় নথি সরবরাহ করা হলেও এরপরও কমিশন কোনো অগ্রগতি দেখায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাতীয় নির্বাচন এখন দ্বারপ্রান্তে। দলীয় প্রার্থী ও মাঠের সংগঠনগুলো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতিতে রয়েছে। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের সঙ্গেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে আলোচনা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের ‘গড়িমসি’ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনকে নির্বাচনী মাঠ থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে দলের নেতারা বলেন—এটি শুধু অন্যায় নয়, বরং গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে সহায়তা করার সামিল।
দলটির দাবি, নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে তাদের নিবন্ধন অবিলম্বে প্রদান করতে হবে। অন্যথায় “রাষ্ট্রীয় আদালত এবং জনতার আদালতে নির্বাচন কমিশনের বিচার করা হবে”—বলে হুঁশিয়ারি দেয় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতারা আরও জানান, সময় নষ্টের এ চেষ্টার ফলে শুধু রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নয়, বরং পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া, গণভোট ও ভবিষ্যৎ সংস্কার যাত্রা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। তারা নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।