রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫১ অপরাহ্ন
ক্রীড়া নিউজঃ অবশেষে! এবারের আগে কখনোই বিপিএলের ফাইনাল খেলা হয়নি তামিম ইকবালের। প্রথম সুযোগেই শতরান করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে শিরোপা জিতিয়ে উপলক্ষটা স্মরণীয় করে রাখলেন তামিম। ছবি : মীর ফরিদ
প্রশ্ন : এই ফাইনালে গেইল ছিলেন না কিন্তু গেইলের ব্যাটিং বিনোদন ঠিকই থাকল। কী চিন্তা করে নেমেছিলেন?
তামিম ইকবাল : আমি আসলে খুব টেনশনে ছিলাম। মাশরাফি ভাইয়ের কৌশলও ব্যবহার করছিলাম। জানি না ওনার মনে কী থাকে। কিন্তু সব সময় বলেন যে, ‘আমি জিতব, আমি জিতব।’ পুরো বিপিএলে ওনার থেকে কপি করেই আমি কৌশলটি ব্যবহার করেছি। আজকের দিন পর্যন্ত বলে এসেছি যে, ‘যাই ঘটুক, আমরাই জিতছি, আমরাই জিতছি।’ চেষ্টা করেছি দলের ভেতর ইতিবাচকতা ছড়িয়ে দিতে। আমার মন তো আর কেউ পড়তে পারছে না, তবে শুনতে পারছে যে আমি কী বলছি। সত্যি কথা, এ রকম ইনিংস খেলার কথা চিন্তা করিনি। কিন্তু এটা খুব ভালো পরিকল্পনা করে খেলেছি।
প্রশ্ন : সেই পরিকল্পনাটা কেমন ছিল?
তামিম : যে যখন আমার পার্টনার ছিল, তাকে বারবারই বলছিলাম যে সাকিব আর নারিনকে উইকেট দেব না। পুরো ইনিংসে নারিনকে একটি ছক্কা মারা ছাড়া মনে হয় না আর কোনো ঝুঁকি নিয়েছি। ঢাকার সাফল্যের পেছনে ওদের দুজনেরই সবচেয়ে বড় ভূমিকা। অপেক্ষা করছিলাম পেসারদের জন্য। আর উইকেটও ছিল অবিশ্বাস্য। দুই শ রানও একটা সময় কম মনে হচ্ছিল। ওদের দ্রুত যদি দুই-তিনটি উইকেট না পড়ত, তাহলে আমাদের দুই শ রানও কম হয়ে যেত। বারবারই বলছিলাম যে কয়েকটি উইকেট পড়ে গেলে ‘গেইম উইল চেঞ্জ’। তাই হয়েছে।
প্রশ্ন : দুর্দান্ত দুটো ক্যাচ নিয়েও ম্যাচের মোড় ঘুরিয়েছেন। আপনার কাছে তাও নিশ্চয়ই কম মূল্যবান নয়?
তামিম : অবশ্যই। ফাইনালে যেকোনো ক্যাচই হোক না কেন, হোক সেটি সহজ বা কঠিন, প্রতিটাই বিশাল চাপের ক্যাচ। একটা কথা বলতে হয়, আমি হয়তো বিশ্বের দ্রুততম ফিল্ডার নই। কিন্তু বল দেখে আমি আতঙ্কিত হই না।
প্রশ্ন : চতুর্থ ওভারে একটি ছক্কা মারার পর আপনি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছেন। এরপর দেখা গেছে ওভারপ্রতি দুটো করে ছক্কা মেরেছেন। আন্দে রাসেলের এক ওভারে ২২ রানও নিলেন।
তামিম : আমি আসলে মারা শুরু করলাম রুবেলের ওভার থেকে। এরপর মনে হলো এখন থেকে চালিয়েই যেতে হবে। এটা বোধহয় আমারই দিন ছিল। সব কিছুই লেগেছে। যেটিতে ব্যাটে-বলে খুব ভালো লাগেনি, তাতেও ছক্কা হয়েছে।
প্রশ্ন : ১১টি ছক্কা মারলেন। গতবারের ফাইনালে গেইলও এই রূপেই ছিলেন। ফ্যান্টাসির কোনো ব্যাপার ছিল?
তামিম : সত্যি কথা বললে আমি এখনো ঘোরের মধ্যে আছি। এখনো বুঝতে পারছি না যে আমি কিভাবে ওরকম ব্যাটিং করেছি। সত্যিই জানি না। রুমে গিয়ে হাইলাইটস দেখলে হয়তো বিশ্লেষণ করতে পারব। একটা সময় পর্যন্ত খুবই বিরক্ত ছিলাম, বিজয় (এনামুল) আউট হওয়ার পর। এরপর নিজেকে শান্ত করে নতুন করে শুরু করতে হয়েছে।
প্রশ্ন : প্রথম বিপিএল ট্রফির সঙ্গে প্রথম বিপিএল সেঞ্চুরিও। কতটা সন্তুষ্টির?
তামিম : সেঞ্চুরি করার সুযোগ আগের কয়েক বছরেও এসেছিল। কিন্তু হয়নি। ফ্র্যাঞ্চাইজিরা দলে নেওয়ার সময় একজন খেলোয়াড়ের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করে। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটি ট্রফি জেতার জন্য খুব মুখিয়েও ছিলাম। সেটি পেলামও। আর আমি অনেকবার ৭০-৮০ রানে আউট হয়েছি এমন সময়, যখন ৫-৬ ওভার বাকি। সেই সেঞ্চুরিটা এবার ফাইনালে হওয়ার চেয়ে ভালো কিছু আর হতেই পারে না।
প্রশ্ন : এই সেঞ্চুরি দারুণ স্বস্তিদায়কও নিশ্চয়ই?
তামিম : কেন নয়? আমাদের দেশের খুব বেশি ব্যাটসম্যান তো বিপিএলে সেঞ্চুরি করেনি। তা ছাড়া ঢাকার যে বোলিং অ্যাটাক, তা অনেক আন্তর্জাতিক দলেরও নেই। এই জায়গায় যদি আমি সেঞ্চুরি করতে পারি, তাহলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কেন পারব না? এই সেঞ্চুরিটা আমাকে অনেক কিছু শেখাবে। সেরা ব্যাপার হলো আজকের আগ পর্যন্ত বিপিএলের ফাইনালে বিদেশিরাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। আজ সেই কাজটি করল একজন বাংলাদেশি। এর চেয়ে বড় কিছু আমার কাছে আর হতেই পারে না।