রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৮ অপরাহ্ন
ক্রীড়া ডেস্কঃ সিরিজ হাতছাড়া হয়েছিল আগেই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেটা আসলে ছিল বাংলাদেশের জন্য সম্মান বাঁচানোর লড়াই, হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমেছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।হলো না। হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ানো গেল না। সাব্বির রহমান রুম্মন একাই লড়লেন, তুলে নিলেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। কিন্তু তার ওই লড়াকু সেঞ্চুরির পরও ৩৩১ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করে ২৪২ রানের বেশি যেতে পারল না বাংলাদেশ। ৮৮ রানের বড় হারে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৩ ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হলো সফরকারীরা।
ডানেডিনে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৬ উইকেটে ৩৩০ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। হেনরি নিকোলস (৬৪), রস টেলর (৬৯) ও টম লাথামের (৫৯) ইনিংসে ভর করে বাংলাদেশকে বিশাল লক্ষ্য দেয় কিউইরা। নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ৩৩১ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে সব কিছুই যেন ওলটপালট। এলোমেলো বাংলাদেশ শিবিরে জয়ের আশায় গুড়েবালি দিয়ে দেন তিন টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান। আর বাংলাদেশ শিবিরে শুরুর ধাক্কাটা দেন দলে ফেরা টিম সাউদি।এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে তামিম শূন্য রানে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। সৌম্য তো সাউদির সুইং ডেলিভারীতে লাইনে ব্যাট নিতেই ব্যর্থ। বোল্ড হন শূন্য রানে। আর লিটন পায়ের জড়তা কাটাতে না পেরে এলবিডব্লিউ। ৩ ম্যাচে তামিমের রান ৫, ৫, ০। লিটনের ১, ১, ১। সৌম্যর ৩০, ২২, ০।মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর খানিক লড়াই যে আশার প্রদ্বীপ জ্বালানোর মতো। থিতু হয়েও কেউ টিকতে পারেন না। বোল্টের বাউন্সারে আঙুলে আঘাত পাওয়ার পর কয়েকটি শটে ১৭ রান তুলেছিলেন মুশফিক। কিন্তু সিরিজে দ্বিতীয়বারের মতো বোল্টের বলেই শেষ মুশফিকের ইনিংস। মাহমুদউল্লাহ ১ চার ও ১ ছক্কায় ১৬ রান তুলে আউট হন গ্র্যান্ডহোমের বলে। ৬১ রানে নেই ৫ উইকেট। তিনশর ওপরে রান তাড়া করে ম্যাচ হারের জন্য এ পারফরম্যান্সই যথেষ্ট। তবুও দেয়াল হয়ে দাঁড়ান সাব্বির রহমান। সঙ্গী সাইফউদ্দিন। ষষ্ঠ উইকেটে তাদের ১০১ রানের জুটি যেন বলে দিচ্ছিল একটু ধৈয্য্র্ ধরলেই টপকে যাওয়া যেত ৩৩০ এর পাহাড়। সাইফউদ্দিন ৬৩ বলে ৪৪ রানে ফিরলেও সাব্বির আজ মাঠে নেমেছিলেন বড় কিছু করতে। পেরেছেনও। প্রথমবারের মতো তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ৫৯ বলে হাফসেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর পরের ৪৬ বলে সাব্বির পেয়েছেন সেঞ্চুরির স্বাদ।অষ্টম উইকেটে সাব্বিরকে নিয়ে ৬৭ রান যোগ করেন মিরাজ। তার ৩৪ বলে ৩৭ রানের ইনিংসে পরাজয়ের ক্ষতে দেয় প্রলেপ। সাব্বিরের ১১০ বলে ১০২ রানের ইনিংস বুঝিয়ে দেয় পরীক্ষিত ব্যাটসম্যানদের খানিকটা সঙ্গ পেলে জয় হাতের মুঠোয় ছিল!বল হাতে ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে একাই ধসিয়ে দেন সাউদি। ৬৫ রানে ৬ উইকেট নেন এ পেসার। বোল্ট ২টি এবং গ্র্যান্ডহোম পেয়েছেন ১ উইকেট।এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি কিউইদের। ৫৯ রানের মধ্যেই সাজঘরে ফেরেন দুই ওপেনার কলিন মানরো ও মার্টিন গাপটিল। পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে মাশরাফির দারুণ বোলিংয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন ৮ রান করা মানরো।সঙ্গী হারালেও মার্টিন গাপটিল ছিলেন দুর্দান্ত। আগের দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকানো এ ব্যাটসম্যান আজও শুরুটা ভালো করেছিলেন। কিন্তু তাকে থামতে হয় তামিমের ধ্রুপদী ক্যাচে। সাইফউদ্দিনের বলে লং অন সীমানায় ক্যাচ তোলেন গাপটিল। দারুণ বোঝাপড়ায় প্রথমে বল নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন তামিম। শরীর সীমানা অতিক্রম করায় বল ছুড়ে দেন শূন্যে। এর পর মাটিতে বল পড়ার আগেই আবার ক্যাচ নেন তামিম। ৪০ বলে ২৯ রানে থামেন গাপটিল।তৃতীয় উইকেটে জুটি বাঁধেন হেনরি নিকোলস ও রস টেলর। ৯২ রানের জুটি গড়েন ৯৯ বলে। বিপজ্জনক এ জুটি ভাঙেন স্পিনার মিরাজ। ৭৪ বলে ৬৪ রান করা নিকোলস তামিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাজঘরে। টেলর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। রুবেলের লেন্থ বল ডিপ মিড উইকেট দিয়ে উড়াতে গিয়ে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহর হাতে। ৮২ বলে ৬৯ রানের ইনিংস খেলার পথে রেকর্ড গড়েছেন টেলর। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডেতে সবথেকে বেশি রানের মালিক এখন টেলর। ২১৮ ওয়ানডেতে টেলরের রান ৮০২৬। ফ্লেমিং ২৭৯ ওয়ানডে করেছেন ৮০০৭ রান।নিউজিল্যান্ডের রান চূড়ায় নিয়ে যেতে পরবর্তীতে বড় ভূমিকা রেখেছেন টম লাথাম, জিমি নিশাম ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। লাথাম ৫১ বলে ৫৯ ও নিশাম ২৪ বলে ৩৭ রান করেন। বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন গ্র্যান্ডহোম। ১৫ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৩৭ রান করেন এ ব্যাটসম্যান। মিচেল স্ট্যানার ৯ বলে করেন ১৬ রান। শেষ ১০ ওভারে রান উৎসব করেছে কিউইরা। ৪০ ওভারে তাদের রান ছিল ২২৪। সেখানে শেষ ১০ ওভারে তারা তুলেছে ১০৬ রান।বোলিংয়ে বাংলাদেশের প্রত্যেক বোলার ছিলেন বেহিসেবি। মোস্তাফিজ ৯৩ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। রুবেল ৬৪, সাইফউদ্দিন ৪৮, মিরাজ ৪৩ ও মাশরাফি ৫১ রানের খরচায় পেয়েছেন ১ উইকেট।