বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন
মোঃ জহিরুল ইসলাম সবুজ. আগৈলঝাড়া:
দেশ ব্যাপি করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় মাস ব্যাপি লকডাউনে থাকা বরিশালের আগৈলঝাড়ায় কর্মহীন শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়িসহ বিভিন্ন পেশাজীবির কর্মহীনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদের সাথে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এখন তাদের খাদ্য যোগান নিয়ে চরম উৎকন্ঠায় দিনযাপন করছে। সরকারের বরদ্দকৃত খাদ্য সহায়তা বিতরণ চলমান থাকার পাশাপাশি স্থানীয় এমপি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকলেও স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে সরকারের ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের বরাদ্দকৃত খাদ্য শষ্য (চাল) সহায়তা বিতরণে ধীর গতিতে খাদ্য সংকট প্রকট হতে শুরু করেছে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজনের।
প্রশাসনের কাছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারী খাদ্য সহায়তা বন্টনের দাবি জানিয়েছেন কর্মহীন লোকজনসহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানেরা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মোর্শারফ হোসাইন জানান, সারাদেশে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারী ছুটি ঘোষণার পর থেকে শ্রমজীবি মানুষগেুলো কর্মহীন হয়ে পরে। দেশে সরকারী ছুটি ঘোষণার আগেই ওই সকল কর্মহীন অসহায় ও দুঃস্থ মানুষের কথা চিন্তা করে তাদের পাশে খাদ্য সহায়তা নিয়ে দাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রনালয় ২৩ মার্চ থেকে চলতি মাস পর্যন্ত আগৈলঝাড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের জন্য ১শ ১১ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য (চাল) ও ত্রাণ কাজে ব্যবহারের জন্য ৫লাখ ২৭ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন কর্মকর্তা এ পর্যন্ত উল্লেখিত খাদ্য সহায়তার বরাদ্দপত্র প্রদান করেছেন।
সূত্র মতে, সরকারের ওই বরাদ্দকৃত চাল থেকে প্রতি পরিবারের জন্য ১০কেজি করে (চাল) উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে প্রশাসন নিযুক্ত সরকারী কর্মকর্তাগনের নিবির পর্যবেক্ষনের (ট্যাগ অফিসার) মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৫৯ মেট্রিক টন চাল বিতরণের কাজ চলমান রয়েছে। বাকী ৫২মেট্রিক টন চাল গুদামে থাকলেও এখনো বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।
বরাদ্দকৃত চাল দ্রুত বিতরণ না হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন কর্মহীন শ্রমজীবিরাসহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানেরাও।
হিসেব মতে, প্রতি পরিবারের জন্য বিতরণ করা ১০কেজি করে চালের প্যাাকেট হিসেবে চার দফায় ৫৯ মেট্রিক টনের মাধ্যমে ৫ হাজার ৯শ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান চলমান রয়েছে। সে হিসেবে চার দফায় প্রতি ইউনিয়নে মাত্র ১১শ ৮০ প্যাকেট করে খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে পারছেন চেয়ারম্যানেরা। ইউনিয়নের প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে ৩২জন করে চার দফায় খাদ্য সহায়তা দেয়া যাচ্ছে ১শ ৩১ পরিবারকে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ঠ ইউনিয়নের সচিবগন।
সরকারের খাদ্য সহায়তার সাথে জাতির পিতার ভাগ্নে, বরিশাল-১ আসনের এমপি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর আর্থিক সহায়তায় প্রতি পরিবারকে চালের সাথে আলু, ডাল, সাবান, মাস্ক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের জুনিয়র পরিসংখ্যান সহকারী জাহাঙ্গীর হোসেন দরদার জানান, ২০১১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ি উপজেলায় মোট পরিবারের সংখ্যা (খানা) ৩২ হাজার ৮শ ৩৯টি। ওই সকল পরিবারের লোক সংখ্যা ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮শ ৫৬ জন।
পরিসংখ্যান অফিসের হিসেব মতে, চার দফায় খুব কম সংখ্যক মানুষের কাছে সরকারের খাদ্য সহায়তা পৌছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমজীবি লোকজনের পাশাপাশি দীর্ঘদিন যাবত মধ্যবিত্ত পরিবার সদস্যরাও ঘরে আটকা থাকায় চরম খারাপ অবস্থার মধ্যে দিন যাপন করছে। যাদের দরকার অথচ কারো কাছে হাত পাততে পারছেন না ওই সকল পরিবারগুলোতে বর্তমানে চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
১০টাকা কেজি দরে ডিলারের মাধ্যমে চাল বিতরণে (রেশন) লোকজন উপকৃত হলেও তা সীমিত আকার হওয়ায় অধিকাংশ লোকজন চাল প্রাপ্তির ওই সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। জেলা ও পৌর এলাকায় সরকারে খোলা বাজারে ১০টাকা কেজি দরে (ওএমএস) চাল বিক্রির সুবিধা থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে ডিলারের মাধ্যমে খোলা বাজারে ১০টাকা কেজি দরে সরকারের চাল বিক্রির সিদ্ধান্ত না থাকায় চরম বিপাক পরেছে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো।
এ ব্যাপারে ৩নং বাগধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি বলেন, করোনা মোকাবেলায় সরকারের বরাদ্দকৃত খাদ্য দ্রুত বিভাজন দরকার। যে ক’জনের খাবার নিয়ে এলাকায় তাদের বিতরণ করতে যেতে হয় চাহিদার তুলনায় তা খুবই কম। আগামী সপ্তাহে মৌসুমের পাকা ধান কাটা শুরু হলেও ওই ধান থেকে তাদের খাবারের যোগান হতে অন্তত ১৫দিন সময় লাগবে। এই ১৫দিনই মানুষের চরম দুঃসময়। তাই এখনই তাদের খাবার পৌছানো জরুরী।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিতরণ কমিটির সদস্য সচিব আবু সালেহ মো. লিটন বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে এলাকার ইরি-বোরো ধান কাটার ভরা মৌসুম শুরু হবে। ধান কাটা শুরু হলে অনেকের ঘরেই খাবারের অভাব দূর হবে। তখন অর্ধেক মানুষের খাদ্য সহায়তার অভাব কমে যবে। তাই অভাবী মানুষের খাবারের জন্য বরাদ্দকৃত চাল জরুরী ভিত্তিতে বিভাজন করে অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা জরুরী বলে মন্তব্য করেন তিনি। সরকারী খাদ্য দ্রুত বিভাজনের কথা উল্লেখ করে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রনালয়ের কাছে উপজেলার জন্য দ্রুত আরও খাদ্য সহায়তা প্রদানেরও জোর দাবি জানান।