রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০১ পূর্বাহ্ন
প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রশ্নের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে বিকল্প খুঁজছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসরোধের সব ধরণের ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ প্রযুক্তি দিয়েই বন্ধ করতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর জন্য প্রযুক্তিবিদদের পরামর্শ নিচ্ছে মন্ত্রণালয়। এছাড়া সহজে এবং সবচেয়ে বেশি ফাঁস হওয়া এমসিকউ পদ্ধতি একেবারেই বাতিলের চিন্তা করছেন কর্মকর্তারা।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলে আসছেন, আগে বিজি প্রেস থেকে ফাঁস হওয়া ছিলো সহজ। পরীক্ষার দুই মাস আগে প্রশ্ন ছাপা হয়। কিন্তু দুই মাস আগে ফাঁস হয় না, পরীক্ষার দিনই অভিযোগ উঠে।
বর্তমান প্রক্রিয়ায় কোনোমতেই প্রশ্ন ফাঁসরোধ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন।
তিনি বলেন, আমাদেরকে নতুন কোনো পদ্ধতির কথা ভাবতে হচ্ছে, যেখানে প্রশ্ন ফাঁসের সুযোগ থাকবে না। সেজন্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
২০১৪ সালে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের পর তদন্ত কমিটি প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে বেশকিছু সুপারিশ করেছিলো। এর মধ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়নের কথা সুপারিশ ছিলো।
নতুনভাবে প্রশ্ন প্রণয়ন ও সরবরাহ নিয়ে সোহরাব হোসাইন বলেন, নতুনভাবে প্রণীত প্রশ্ন হবে অটোমেটেড। আমরা সবার কাছ থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করবো। কমিটি প্রশ্নের মান যাচাই করবে। এরপর প্রশ্ন ব্যাংক হবে, যেন সেখানে সব মানের প্রশ্ন থাকে।
এই পদ্ধতিতে গোপনীয়তা নিশ্চিত হবে জানিয়ে সচিব বলেন, যিনি অ্যাডমিনিস্ট্রেটের দায়িত্বে থাকবেন তিনিও জানবেন না কী সেটে প্রশ্ন হবে। এটা হয়তো পরীক্ষার ১৫ মিনিট আগে প্রশ্ন প্রণয়ন হতে পারে। এটি বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে প্রতিটি পরীক্ষা কক্ষে স্ক্রিন থাকবে। পরীক্ষা শুরুর সময় অর্থাৎ ১০টায় সেটি ওপেন হবে, এতে প্রশ্ন ছাপানোরও প্রয়োজন নেই। পর্দায় দেখে দেখে পরীক্ষা দেবে শিক্ষার্থীরা। এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সুযোগ থাকবে না।
শিক্ষাসচিব বলেন, এই পদ্ধতির বাস্তবায়ন করতে গেলে যে বিশাল সংখ্যার কেন্দ্র সংখ্যা এবং কেন্দ্রের বর্তমানে যে পরিস্থিতি সেটা এখনও ওই পর্যায়ে বাস্তবায়নে যেতে পারিনি। তবে একটা প্রস্তাবনা-পেপার তৈরি করছি। আশা করছি সবাই মিলে বসলে একটা সমাধান আসবে।
এছাড়া বর্তমানের বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে প্রশ্নের প্যাকেটের নিরাপত্তা জোরদারের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান সচিব। তিনি বলেন, যদি কেন্দ্র কমিয়ে আনা যায় তাহলে প্রতিটি কেন্দ্রে প্রতি বিষয়ের জন্য একটি প্যাকেট হবে। সিলগালা খুলে আবারও লাগানো যায়। সিলগালা নয়, এমন টেপ ব্যবহার করা যায় কি-না, যে টেপ খুললো আর লাগানো যাবে না।
এমসিকিউ নিয়েও বিকল্প ভাবছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা সচিব বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের পেছনে এমসিকিউ প্রধান কারণ। এমসিকিউ অন্য উপায়েও নেওয়া যেতে পারে। সে রকম ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে এসএসসি ও এইচএসসির ফলের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এমসিকউ’র কারণে নম্বর তোলা সহজ হয়। আমার মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির ব্যাপারেও চিন্তার অবকাশ রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা প্রথমপত্রের বহুনির্বাচনি অভীক্ষার ‘খ’ সেট পরীক্ষার প্রশ্ন ও ফেসবুকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হুবহু মিল ছিল। পরীক্ষা শুরুর একঘণ্টা আগেই তা ফেসবুকে পাওয়া যায়। ৩ ফেব্রুয়ারি সকালে পরীক্ষা শুরুর প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে বাংলা দ্বিতীয়পত্রের নৈর্ব্যক্তিক (বহুনির্বাচনি) অভীক্ষার ‘খ’ সেটের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় ফেসবুকে।
যার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া যায়। ৫ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা শুরুর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে সকাল ৮টা ৪ মিনিটে ইংরেজি প্রথমপত্রের ‘ক’ সেটের প্রশ্ন ফাঁস হয়। এর সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া গেছে।
৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার পরীক্ষা শুরুর অন্তত ৪৮ মিনিট আগে সকাল ৯টা ১২ মিনিটে ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের ‘খ’ সেটের গাঁদা প্রশ্নপত্রটি হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে পাওয়া গেছে। ৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার বহুনির্বাচনি অভীক্ষার ‘খ’ সেটের চাঁপা প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়।
১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে গণিতের ‘খ-চাঁপা’ সেটের প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়। ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ৫১ মিনিটে হোয়াটসআপের একটি গ্রুপে আইসিটির ‘ক’ সেট প্রশ্ন পাওয়া যায় এবং সকাল ৯টা ৩ মিনিটে ‘গ’ সেটের প্রশ্নও ফাঁস হয়। ১৩ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা শুরু আগেই পদার্থ বিজ্ঞান এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ের প্রশ্নপত্রও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাওয়া যায়।
এছাড়াও বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ছিল বিজ্ঞান গ্রুপের রসায়ন, বাণিজ্য গ্রুপের ব্যবসায় উদ্যোগ এবং মানবিক গ্রুপের পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ের পরীক্ষা। পরীক্ষা শুরুর আগে সকাল ৯টা ৫ মিনিটে রসায়নের ‘খ’ সেট প্রশ্নপত্রটি হোয়াটসঅ্যাপের গ্রুপে পাওয়া যায়। এসব ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষা শেষে হাতে পাওয়া প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে।