রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একজন বয়স্ক নারী, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হওয়া সত্ত্বেও তিনি জামিন পেতে পারেন বলে মন্তব্য করেছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানির সময় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীর জামিনের বিরোধিতা করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে সময়ের আবেদন করা হলে আদালত বলেন, ‘সাত বছর পর্যন্ত সাজাপ্রাপ্ত যেকোনো ব্যক্তিকে এই আদালত জমিন দিতে পারেন। খালেদা জিয়া পাঁচ বছরের জন্য সাজা পেয়েছেন। তাই তাকে আদালত জামিন দিতে পারেন। তারপর তিনি নারী ও বয়স্ক, তিনি জামিন পেতে পারেন।’
বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট বেঞ্চে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আপিলের শুনানি শুরু হয়। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আপিল গ্রহণের জন্য আবেদন জানালে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রস্তুতির জন্য দুই ঘণ্টা সময় চান। আদালত তখন দুপুর ১২টায় শুনানি শুরুর আদেশ দেন।
দুপুরে শুনানির পর আদালতে খালেদা জিয়ার প্যানেল আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী জামিনের নথি উপস্থাপন করে বক্তব্য দেন। এ সময় আদালত খালেদা জিয়ার আপিল আবেদন গ্রহণ এবং জরিমানা স্থগিতের কথা জানান। পাশাপাশি আদালত ১৫ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতের কাগজপত্র জমা দিতে বলেন।
পরে খালেদা জিয়ার জামিনের ওপর শুনানি শুরু হয়। তখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশিদ আলম খান মামলার নথি দেখে প্রস্তুতির জন্য আদালতে সময় চান। এই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রবিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত শুনানি মুলতবির আদেশ দেন।
দুদকের আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘দুদক আজ সকাল সাড়ে ৯টায় মামলার রায়ের সত্যায়িত কপি পেয়েছে। সেই কারণে আমরা তা দেখতে পারি নাই। কাগজপত্র দেখে এ ব্যাপারে শুনানি করতে হবে। সেই কারণে সময়ের প্রয়োজন।’
এ সময়ই আদালত সাত বছরের নিচে কেউ দণ্ডপ্রাপ্ত হলে হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন দিতে পারেন বলে উল্লেখ করেন। এ সময় আদালত দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘এটা কি শুনানির প্রয়োজন আছে?’
তখন খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘কোনো মামলায় দুদককে পক্ষভুক্ত করা হলে দুদকের প্রভিশন অনুযায়ী তাকে সময় দিতে হয়। আমরা জামিনের বিরোধিতা করছি না। কিন্তু আমি শুনানির জন্য সময় চাইছি।’
এর পর আদালত বলেন, ‘আপনাদের দাবি যুক্তিযুক্ত। এ জন্য আমরা রবিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত শুনানি মুলতবি রাখছি।’
এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।
পরে আদালত থেকে বেরিয়ে খুরশিদ আলম খান গণমাধ্যমের কাছে আদালতের বক্তব্য উদ্ধৃত করেন।
পাশাপাশি আদালতে উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার প্যানেল আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদিনও গণমাধ্যমকে আলাদাভাবে ব্রিফ করেন এবং আদালতের এই বক্তব্য তুলে ধরেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী আবদুর রেজাক খান, খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রমুখ।
এর আগে গত মঙ্গলবার বিকেলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল দায়ের করেন খালদা জিয়ার আইনজীবীরা।
প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিশেষ আদালত। এ ছাড়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। গত সোমবার খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের রায়ের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। এঁদের মধ্যে তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান পলাতক।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।