মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর ওয়ারীর একটি বাসা থেকে সজীব হাসান নামে এক যুবকের পাঁচ টুকরা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তার পরকীয়া প্রেমিকা শাহনাজ পারভীনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ওয়ারী থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে।
শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ওয়ারী থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ওয়ারীর কেএম দাস রোডের একটি বাসা থেকে সজীব হাসানের লাশের পাঁচ টুকরা উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শাহনাজ পারভীনকে আটক করা হয়েছে। প্রেমিকা শাহনাজ এখন থানা হেফাজতে রয়েছেন।
এসআই সাইফুল বলেন, হত্যার কথা স্বীকার করেছেন শাহনাজ। এর পরও হত্যার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছেন কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আজ তাকে আদালতে তোলা হতে পারে।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে পুলিশ ওই নারীর রিমান্ড চাইবে। সাইফুলের লাশ মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। নিহত যুবকের পরিবারের লোকজনকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা থানায় যোগাযোগ করেছেন।
নিহত সজীব হাসান শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকূপায়। বাড়িতে তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওয়ারীর ১৭/১ কেএম দাস লেন পানির পাম্প এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে টাকা-পয়সা ও সোনার গহনা বিক্রি করার বিষয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে পরকীয়া প্রেমিকা শাহনাজের ছুরির আঘাতে প্রেমিক সজীব ঘটনাস্থলে নিহত হন।
শাহনাজ স্বামীবাগ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা। তার স্বামী একজন ব্যবসায়ী। তার দুই ছেলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এবং একমাত্র মেয়ে কলেজে পড়েন। নিহত সজীবের সঙ্গে শাহনাজের চার-পাঁচ বছর ধরে অবৈধ সম্পর্ক চলছিল। তারা একটি বাসায় মাঝে মাঝে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হতেন। বৃহস্পতিবারও দুজন দেখা করে শারীরিক সম্পর্ক শেষে টাকা ও সোনার গহনা পাওনা নিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হন। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে সজীব শাহনাজকে চড় থাপ্পড় মারলে শাহনাজ ক্ষিপ্ত হয়ে চুরিকাঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই সজীবের মৃত্যু হয়। মৃতদেহ লুকাতে শাহনাজ মরদেহ পাঁচ টুকরো করেন।
পুলিশ জানায়, শাহনাজ গৃহিণী। তার বাবার বাড়ি চাঁদপুরে। আর গ্রামে থাকা মা-বাবা ও পরিবারের কারও সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল না সজিবের। স্বজনরা জানতেন, ঢাকায় এক বয়স্ক নারীকে বিয়ে করে সংসার করছেন।
পুলিশের ওয়ারী অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুল ইসলাম বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে শাহনাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন, তিন দিন আগে ব্যাগভর্তি কাপড়চোপড় নিয়ে স্বামীবাগের বাসায় স্থায়ীভাবে থাকার জন্য আসেন। স্বামীর বাসা থেকে স্বর্ণালংকার ও টাকা-পয়সাও নিয়ে এসেছিলেন। আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্ক করার চেষ্টা নিয়ে সকাল ১০টার দিকে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে সজিব তাকে লাঠিপেটা করেন। ছুরি দিয়ে আঘাতও করেন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তার হাতে ছুরির আঘাত লাগে। এরপর তিনি ছুরি কেড়ে নিয়ে তাকে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে পাটার ওপর হাত ও পা রেখে ছুরিতে শিল দিয়ে আঘাত করা হয়। এভাবে কনুই থেকে তার দুই হাত ও হাঁটু থেকে পা কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়। রক্তমাখা ছুরি ও শিলপাটা উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তের আগে এ বিষয়ে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্তে ভিন্ন কিছুও বের হতে পারে।’