সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৭ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: নারায়নগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান আসন্ন ইউপি নির্বাচনে বন্দরের ৫ চেয়ারম্যানকে পুনরায় নির্বাচিত করার আহবান জানান। যেকোন প্রতীকে হোক উন্নয়নের স্বার্থে বর্তমান ৫টি ইউপি চেয়ারম্যান নিয়ে কাজ করেছি, বাকি কাজগুলো শেষ করতে চাই। ইউপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে সেলিম ওসমানের আহবান। করোনার প্রার্দুভাবের কারণে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন স্থগিত করা হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যেকোন সময়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। অপরদিকে চলতি বছরের শেষদিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন। যে কারণে নিজ আসনের আওতাধীন জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচনী কাজে মাঠে নামার বার্তা দিয়েছেন সদর ও বন্দর আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। গত শনিবার বন্দরে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধিদের এই বার্তা দেন তিনি।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে ৩টি ধাপে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার ৩৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে পাঁচটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ১১জন, মেম্বার পদে ৩৩ জন ও সংরক্ষিত নারী মেম্বার পদে ৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অর্থাৎ ৫ বছর পূর্বে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অর্ধশত জনপ্রতিনিধি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিতহয়েছিলেন। এছাড়া ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচন। একই বছরের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাচন। এদিকে চলতি বছরেই নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার আওতাধীন ৩৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব বৃদ্ধির কারণে এখনো ঝুলে রয়েছে নারায়ণগঞ্জের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। এছাড়া করোনার কারণে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়েও সংশয় রয়েছে। যে কারণে সম্ভাব্য ইউনিয়ন পরিষদ ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশরে নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও দোলাচলে রয়েছে।
এদিকে গত শনিবার বন্দরের কদম রসুল কলেজের নতুন ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেলিম ওসমান জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে অতি উৎসাহি হবেন না। নির্বাচনে মার্কা কি এটা বড় কথা নয়। আপনারা মানুষের জন্য কাজ করুন, মানুষকে ভালবাসুন মানুষ আপনাদের ভালবাসবে। সারাদিনের মধ্যে অন্তত একটা হলেও ভালো কাজ করেন। নারায়ণগঞ্জ নিট শিল্পের নগরী হলেও বর্তমানে ব্যবসার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ মন্তব্য করেন সেলিম ওসমান। এজন্য তিনি সকলকে ধৈর্য্য ধরার আহবান জানান। সেলিম ওসমান আরো বলেন, বন্দরের উন্নয়ন কাজে নামতে হবে। বন্দরের রাস্তাঘাট এই বৃষ্টিতে যা অবস্থা হয়েছে দেখে আমার লজ্জা লেগেছে। কিভাবে এই রাস্তাঘাট উন্নয়ন করা যায় সে বিষয়ে তিনি শীঘ্রই জনপ্রতিনিধিদের মুরব্বীদের নিয়ে মিটিং করবেন বলে জানান। সেলিম ওসমান বলেন, আমরা বন্দরবাসী কোন দল করিনা। বন্দরে কোন রাজনীতি নেই। বন্দরে কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে দিবনা। বন্দরকে আমরা পবিত্র রাখবো। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবো। এটাই আমাদের সাধনা এটাই আমাদের কামনা। জানিনা কখন এই রোগে আক্রান্ত হবো। কখন দুনিয়া ছেড়ে চলে যাব। আগের মতো দাড়িয়ে থাকতে পারিনা। বসে কাজ করতে হয়। শীঘ্রই প্রতিটি ওয়ার্ডে ও ইউনিয়নে তিনি কার্যক্রম শুরু করবেন বলে জানান। কোন ওয়ার্ডে কি সমস্যা সেটা তিনি এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানবেন। এ বিষয়ে প্রত্যেকটা চেয়ারম্যান কাউন্সিলররাও সহযোগিতায় থাকবেন। তিনি এ বিষয়ে বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ ভাই আছে। এসকল কাজে তিনি সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহানগর বিএনপির সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুলেরও সহযোগিতা কামনা করেন। সেলিম ওসমান আরো বলেন, এখানে আওয়ামীলীগের নেতারা আছেন, বিএনপি নেতারা আছেন, জাতীয় পার্টির নেতারা আছেন আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে আসেন আমরা দোয়া করি, আজকে এই অনুষ্ঠানে আমাদের ওয়াদা থাকুক বঙ্গবন্ধুকে আমরা ঠকাবোনা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলবো ইনশাল্লাহ। আমাদের প্রত্যেকটা মানুষই ভাল থাকবে। না খেয়ে থাকবেনা। শান্তিতে থাকবে। আমাদের নারায়ণগঞ্জে হসপিটাল দরকার। বিশ^বিদ্যালয় দরকার। এগুলো করতে হবে। ১৬ মাস যদি কোন উন্নয়ন কাজ না চলে তাহলে তো আমরা বিপদগ্রস্ত হবো। লাঙ্গলবন্দ প্রজেক্ট হলে এখানে পার্কসহ ব্যবসা বাণিজ্য ব্যাপক কিছু হতো। শান্তিরচর প্রায় ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হতো। জানিনা আমরা কি কোন পাপ করেছি। নারায়ণগঞ্জে কোন কাজ আসলে সেটা থমকে যায়। আমাদের ব্রীজের কাজও অনেক ধীরস্থির হয়ে গেছে। এদিকে করোনার এই মহামারীর কারণে যখন নারায়ণগঞ্জ সাধারণ মানুষ কর্মহীন অবস্থায় দুর্যোগে তখন বেশীরভাগ ইউনিয়ন পরিষদগুলোর চেয়ারম্যান মেম্বার এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অনেক কাউন্সিলরের তৎপরতা তেমন একটা দেখা যায়নি বলে। বেশীরভাগ জনপ্রতিনিধিকেই অনেকটা দায়সারা গোছের কাজ করতে দেখা গেছে। বিএনপি ঘরানার জনপ্রতিনিধিদের এই করোনা মহামারীতে যতটা সক্রিয় দেখা গেছে তার তুলনায় সরকার দলীয় এসব জনপ্রতিনিধিদের অনেককে হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অথচ নির্বাচন আসন্ন হিসেবে তাদের সক্রিয়তা থাকার কথা সবচেয়ে বেশী। বেশীরভাগ জনপ্রতিনিধিদের এহেন অসক্রিয়তার নেপথ্যে ভোটহীনতাকে দায়ী করেছেন সচেতন মহল। ৫ বছর পূর্বে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন অর্ধশত প্রার্থী। ভোটহীনতার কারণেই ভোটারদের কদর কমে গেছে। নারায়ণগঞ্জে গেল বারে অর্ধশত জনপ্রতিনিধি বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ায় এবারেও বেশীরভাগ জনপ্রতিনিধি বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। যে কারণে বেশীরভাগ ইউনিয়ন পরিষদেই এবার নেই নির্বাচনী ডামাঢোল। তবে সেলিম ওসমানের ওই বার্তার পরে অভিজ্ঞ রাজনৈতিক মহল মনে করছেন আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলোতে পূর্বের ন্যায় এবারো সরাসরি হস্তক্ষেপ করবেন না সেলিম ওসমান। কারণ সেলিম ওসমানের বলয়ে যারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তাদের বেশীরভাগই জাতীয় পার্টির মনোনীত