সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় ৮০০ নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: রিজভী নির্বাচন কবে, সেই ঘোষণা হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকেই : প্রেস উইং মোহাম্মদপুরে সন্ত্রাসী রহিম ও তার ছেলের অত্যাচার নির্যাতনে অসহায় এলাকাবাসী উত্তরা ব্যাংকের এমডি রবিউল হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অপসারনের দাবিতে রাজপথে বিল্পবী ছাত্র জনতা ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৪ হাজার সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে দেখে কেঁদে ফেললেন মির্জা ফখরুল সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ওসমানী জাতীয় স্মৃতি পরিষদ-এর বিশেষ বাণী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খ. ম. আমীর আলী ছাত্র বৈষম্য আন্দোলনে আহতদের জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়ে পাশে বিএনপি নেতা মোঃ সাইফুল ইসলাম নরসিংদীর মনোহরদীতে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানক্লাব ‘নেবুলাস’-এর যাত্রা শুরু
নড়াইলে রুকু শেখ হত্যার প্রায় মাস পেরিয়ে গেলেও গ্রেফতার হয়নি প্রধান আসামী কুদ্দুস ফকির

নড়াইলে রুকু শেখ হত্যার প্রায় মাস পেরিয়ে গেলেও গ্রেফতার হয়নি প্রধান আসামী কুদ্দুস ফকির

বিশেষ প্রতিনিধি: নড়াইলে ভগ্নিপতি কুদ্দুস ফকিরের হাতে সম্মন্ধি রুকু শেখ হত্যার প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এখনও গ্রেফতার হয়নি মূল আসামি। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের মূল আসামী গ্রেফতার না-হওয়ায় এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবারের মধ্যে বিরাজ করছে চরম অসন্তোষ।
মামলার এজাহার নিহতের স্ত্রী মোছাঃ মনোয়ারা বেগমের বক্তব্য থেকে জানা যায়, আমার ননদ চায়না বেগমের সাথে আনুমানিক ৩০ বছর পূর্বে আসামী কুদ্দুসের ইসলামি শরিয়ত মতে বিবাহ হয়। বিবাহের পর থেকেই তাদের মধ্যে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য ঝগড়া ঝাটি চলে আসছে। আসামী কুদ্দুস বিভিন্ন সময় কারণে অকারণে চায়নাকে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করিত। এরই এক পর্যায়ে প্রায় ০৩ বছর পূর্বে চায়না বেগম স্বামীর সংসার ত্যাগ করে চলে আসে। ইদানীং মাস খানিক পূর্ব থেকে কুদ্দুস ফকির চায়নাকে সংসারে ফেরত নিতে চায়। বিষয়টি নিয়ে পারিবারিকভাবে কুদ্দুস ফকিরের বড় ছেলে রফিকুলের বাড়িতে গত ০২/১২/২০২১ তারিখ রাতে সালিসে বসা হয়। নিহতের ছোট বোন জামাই তোতা সালিসে যাওয়ার জন্য রুকু শেখকে সেই বাড়িতে নিয়ে যায়। ঐ সালিসে উপস্থিত ছিলেন কুদ্দুস ফকিরের ছেলে রফিকুল, কুদ্দুস ফকিরের বোন রাফিজা সহ আরো কয়েকজন। সালিসে আলোচনার এক পর্যায়ে রাফিজা বেগমের সাথে নিহত রুকু শেখের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এক পর্যায়ে আসামী কুদ্দুস ফকির সেখানে হাজির হইয়া বলে, চায়নাকে আবার সংসারে ফেরত পাঠাও। এ কথার জবাবে রুকু শেখ বলেÑ তুমি তো চায়নাকে নিয়ে আবারও নির্যাতন করবা। তবে যেতে দিতে পারি যদি তুমি গ্রামের মুরব্বিদের সামনে স্টাম্পে মুচলেকা দেও যে, চায়নাকে নিয়ে আর নির্যাতন করবে না। ইহাতে আসামী খুবই ক্ষীপ্ত হয় এবং বলে ‘‘তোমাকে স্টাম্প দেয়াচ্ছি’’। এসব কথা কাটাকাটির কারণে ঐ সালিসে কোন মীমাংসা না হয়ে যে যার মতো চলে যায়। কিন্তু ঘটনার পরের দিন ০৩/১২/২০২১ ইং তারিখ সকাল বেলায় আমার স্বামীকে কে বা কাহারা নদীর ঘাটে ডেকে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমন করে। ঘটনার সময় আশে-পাশে উপস্থিত ছিলেন হালিম ফকির, হালিম ফকিরের স্ত্রী, আকিজ মোল্লাসহ কয়েকজন দেখতে পায় আসামী কুদ্দুস তাহার হাতে থাকা লোহার তৈরী শাবল দিয়ে খুন করার উদ্দেশ্যে আমার স্বামীর মাথার বাম পার্শ্বে বাড়ি মারিলে মাথা ফেটে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। আমার স্বামী চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটাইয়া পড়িলে আসামী কুদ্দুস আবারও তাহার হাতে থাকা শাবল দিয়ে মাথার ডান পার্শ্বে বাড়ি মারিলে মাথা ফেটে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। আমার স্বামীর আর্তচিৎকারে পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকা হালিম ফকির, পিতাÑ মোতালেব ফকির, হালিম ফকিরের স্ত্রী, আকিজ মোল্যা সহ ১০/১২ জন স্বাক্ষীরা এগিয়ে আসিলে আসামী দ্রুত পালিয়ে যায়। উপস্থিত স্বাক্ষীরা তখন আমার স্বামীকে উদ্ধার করিয়া দ্রুত বড়দিয়া বাজার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। আমার স্বামীর অবস্থা খুবই খারাপ থাকায় স্বাক্ষীরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দ্রুত ঐ দিনই তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকিয়া তাহার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় গত- ০৫/১২/২০২১ তারিখে ডাক্তাররা তাহাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। তাকে নিয়ে এ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রওনা হইলে পথিমধ্যে ইং- ০৬/১২/২০২১ তারিখ রাত অনুমান ০২.৩০ঘটিকা হইতে ০৩.০০ ঘটিকার মধ্যে মাওয়া ফেরি ঘাটে অবস্থানকালে এ্যাম্বুলেন্স এর মধ্যে রুগীর অবস্থার অবনতি ঘটলে আমরা তাকে দ্রুত গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার স্বামীকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত রুকু শেখের সন্তানরা আবেগআপ্লুত হয়ে বলেন, বাবা তো আর ফিরবে না। তবে আমাদের বাবাকে যারা হত্যা করেছে। সেই সব খুনীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক এটাই আমার চাওয়া। এই হত্যার পেছনে যদি কারো ইন্ধন থাকে তা যেনো পুলিশ তদন্ত করে প্রকাশ করে প্রশাসনের কাছে এটা আমাদের জোরদাবী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, অতীতে আসামী কুদ্দুস ফকীর ছিলো রুকু শেখের অত্যন্ত পছন্দের ব্যক্তি। কুদ্দুস ফকিরকে থাকার জন্য নিহত রুকু শেখ তার নিজ বাড়ীতে একটি টিনের ঘরও তৈরি করে দিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ কী এমন ঘটলো যে তার সম্মন্ধিকে একেবারেই এমন নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করলো। এছাড়াও হত্যার সময় রুকু শেখকে কী কারণে নদীর তীরে নিয়ে এমনভাবে আক্রমন করলো? তবে কী এই হত্যার পর লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিলো! সে ক্ষেত্রে এতো সুক্ষ্মভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটানো কুদ্দুস ফকীরের একার পক্ষে কতোটা সম্ভব! প্রশ্ন জাগে এই হত্যাটি পূর্ব পরিকল্পিত কী-না? এই হত্যার পেছনে অন্য আরো একাধীক ব্যক্তির সম্পৃক্ততা রয়েছে কী-না তাও খতিয়ে দেখার অনুরোধ করছে এলাকাবাসী। এছাড়া এলাকাবাসী সাংবাদিকদেরও এই ঘটনার রহস্য উন্মোচনের জন্য বিশেষ অনুরোধ করে। ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। যা নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আরো পর্ব প্রকাশ করা হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সেন বলেন, আসামী কুদ্দুস ফকিরকে গ্রেফতারের জন্য নানারকম চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আসামী তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছে। তার অবস্থান জানার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com