বুধবার, ০৪ Jun ২০২৫, ০৮:২৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
আমরা ক্ষমতা নেইনি, দায়িত্ব নিয়েছি: অর্থ উপদেষ্টা নওগাঁয় ভিজিডি কর্মসূচির কার্ড-ধারীদের কাছে থেকে টাকা নিয়ে চাল বিতরণ করার অভিযোগ কুরবানির হাটে অনিয়ম: ইজারাদারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ইউএসএস-এর উদ্যোগে লালমনিরহাটে বৃক্ষরোপণ টানা বৃষ্টিপাতে থানচিতে পাহাড় ধসের শঙ্কা ডিমলায় পশুর হাটে চলছে ইচ্ছে মতো খাজনা আদায়, ৫০০ টাকার খাজনায় ভ্যাট ৫০০ সারা দেশে একযোগে ২৫২ বিচারককে বদলি সিরাজগঞ্জের গাবগাছি হিন্দু পাড়ার রাস্তাটি যেন মরণ ফাঁদ শরণখোলা উপজেলার ৪ নং সাউথখালী ইউনিয়ন বিএনপির কমিটির গঠনে অনিয়ম নিয়ে সংবাদ সম্মেলন জেলে না হয়েও পেলেন সরকারী প্রকল্পের বাছুর: মাঠ সহায়কের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
শিগগিরই ভারত থেকে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি!

শিগগিরই ভারত থেকে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি!

ভারত থেকে এবার হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি করতে চান ব্যবসায়ীরা। এ জন্য তাঁরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন

চেয়েছেন। ব্যবসায়ীদের এই উদ্যোগের পক্ষে মত রয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের।

ব্যবসায়ীদের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রতি কেজি হিমায়িত গরুর মাংসের আমদানি খরচ পড়বে ২৫০ টাকার মতো। অন্যান্য খরচ যোগ করার পর ভোক্তাদের কাছে ৩০০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারত থেকে গরু আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ব্যবসায়ীরা এখন গরুর মাংস আমদানি করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কারণ, বাংলাদেশে গরুর মাংসের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। ভারত থেকে চোরাই পথে গরু এনে এত দিন দেশের মাংসের চাহিদা মেটানো হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করায় চোরাই পথে গরু আসা অনেক কমে গেছে। তাই ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে বৈধ পথে ভারত থেকে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানির অনুমতির বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এ ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুক্তি হচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম অনুযায়ী, কোনোভাবেই ভারত থেকে গরুর মাংস আমদানি নিষিদ্ধ করা যাবে না। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শূকরের মাংস আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তবে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানিতে কোনো বাধা নেই।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি করা হলে বাজারে গরুর মাংসের দাম কমবে। গত ২৬ ডিসেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মতামত দিয়ে বাণিজ্যসচিবকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) এবং ইন্ডিয়া চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ব্যবসায়িক সম্মেলনে বাংলাদেশের অনেক আমদানিকারক ভারত থেকে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানির প্রস্তাব দেন।

তাই আইনকানুনের আলোকে কী করা যায়, সে বিষয়ে ১৫ দিনের মধ্যে মতামত দিতে ট্যারিফ কমিশন, রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, দেশে গরুর মাংসের যে চাহিদা, সেই অনুযায়ী জোগান নেই। তাই চাহিদা বাড়তে থাকলে দামও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে আইনগতভাবে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি করলে ভোক্তাদের সুবিধা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মাংস আমদানির পক্ষে মতামত দিয়েছি। আমরা বলেছি, বিষয়টি যেন তদারক করা হয়। আমরা তো এখন প্রয়োজনে চালও আমদানি করছি, বিষয়টি সে রকমই।’

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে আমেরিকান ডেইরি লিমিটেড, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রির হিসাবে বাংলাদেশে প্রাণিজ আমিষের প্রধান উৎস গরুর মাংসের বর্তমান প্রাপ্যতা বছরে ৭১ দশমিক ৫৪ লাখ মেট্রিক টন। মন্ত্রণালয় এ-ও জানিয়েছে, দেশের অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক বর্তমানে গরু মোটাতাজাকরণ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গরুর মাংস উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত।

অর্থনীতিতে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি করা হলে খুচরা বাজারে দাম কমলেও দেশীয় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ধর্মীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী দেশের মানুষ শরিয়াহ মোতাবেক জবাই করা গরুর মাংস খেয়ে থাকে। পাশের দেশ থেকে গরুর মাংস আমদানি করা হলে জবাইয়ের পদ্ধতিটি নিয়ে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হতে পারে।

তবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহিবুজ্জামান হিমায়িত গরুর মাংস আমদানির পক্ষে মতামত দিয়ে জানান, বাংলাদেশের ভোক্তাদের আগে ‘রেডি ফুড’ খাওয়ার অভ্যাস ছিল না। তবে ভোক্তারা এ ধরনের খাবারে অভ্যস্ত হচ্ছে।

গরুর মাংস আমদানির পক্ষে মত দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের পরিচালক নেছার আহম্মেদ বলেন, গরুর মাংস আমদানি নিষিদ্ধ করা যাবে না। কিন্তু দুগ্ধজাত প্রতিষ্ঠান রক্ষায় শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে।

গত জুলাইয়ে ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে একটি ব্যবসায়ী সম্মেলনে ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের কৃষি ও খাদ্যপণ্য বিভাগের প্রধান মধুপর্ণা ভৌমিক বলেছিলেন, ভারত যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যে কয়েক বিলিয়ন ডলারের গরুর মাংস বিক্রি করে, সেহেতু বাংলাদেশও বড় বাজার হতে পারে।

এদিকে অ্যানিমেল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এ কে এম আলমগীর সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বলেছেন, ভারত থেকে গরু চোরাচালান বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতেই এ দেশে ডেইরি-শিল্প বিকশিত হয়েছে।

বর্তমানে দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকেরা গরু মোটাতাজাকরণ এবং দুগ্ধশিল্পে কাজ করছেন। এর মধ্যে ভারত থেকে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি করলে দেশীয় উদ্যোক্তারা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com