বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি: যশোরের ঝিকরগাছা থানা পুলিশ ও ডিবি’র যৌথ অভিযানে সুমাইয়া হত্যার প্রধান আসামী বাপ্পিসহ ৩জন গ্রেফতার হয়েছে। গত ২৫মার্চ সকাল ৬টার সময় ঝিকরগাছা থানাধীন চাঁপাতলা ঝিনুকদাহ মাঠে অজ্ঞাত এক মহিলার গলাকাটা লাশ পাওয়ার সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ লাশটিকে উদ্ধার করে এবং পরিচয় সনাক্ত করে। নিহতের নাম সুমাইয়া আক্তার (২৭), পিতা- রেজাউল,ইসলাম (রেজাড্রাইভার)গ্রাম দক্ষিণ বুরুজবাগান, থানা-শার্শা, জেলা-যশোর। নিহতের পিতা রেজাউল বাদী হয়ে নিহত সুমাইয়ার বয় ফ্রেন্ড বাপ্পিকে সন্দেহ করে এজাহার দায়ের করেন। থানার মামলা নং- ১৫ তাং-২৫/০৩/২০২২ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়। আটককৃতরা হলেন, ঝিকরগাছার কাউরিয়া চৌধুরী পাড়ার আলাউদ্দিনের ছেলে আলামিন হোসেন -বাপ্পি (৩২), মনিরামপুর থানার মৃত আবু বক্করের ছেলে জুয়েল (৩৬) ও ঝিকরগাছার কাউরিয়া চৌধুরী পাড়ার আলাউদ্দিনের স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বেগম (৫৫)।
থানার অফিসার ইনচার্জ সুমন ভক্ত জানান, থানা পুলিশ ও ডিবি’র যৌথ অভিযানে ঘটনায় জড়িত আসামী আঞ্জুয়ারা বেগমকে ১এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসামি আলামিন বাপ্পির রক্তমাখা জামা আঞ্জুয়ারা বেগম পুড়িয়ে ফেলার অবশিষ্ট অংশ উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মেজবাহুর রহমান ও ডিবির এসআই শামীমের নেতৃত্বে একটি একটি চৌকশ দল ৪এপ্রিল ভোর ৫:৫০ মিনিটের সময় সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানাধীন বংশীপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চোরাই পথে সীমান্তবর্তী ভারতে পালানোর সময় প্রধান আসামী আলামিন-বাপ্পিকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বাপ্পি হত্যার দায় স্বীকার করে এবং তার দেওয়া তথ্য মতে হত্যার মিশনে ব্যবহৃত মটরসাইকেলটি লুকিয়ে রাখার দায়ে তার চাচা জুয়েলকে আটক পূর্বক মটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও হত্যায় ব্যবহৃত চাকুটি (ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত) যে দোকান থেকে ক্রয় করেছিল, সেই দোকান হতে চাকুর বক্স উদ্ধারসহ ঘটনার সত্যতা যাচাই করা হয়েছে। আসামীর নিকট থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তিনি আরো জানান, ২০১২ সাল থেকে সুমাইয়ার সাথে বাপ্পির প্রেম সম্পর্ক ছিল, ২০১৫ সালে বাপ্পি বিদেশে চলে গেলে সুমাইয়ার বিয়ে হয় শার্শা থানার লক্ষণপুর গ্রামের আইয়ুব হেসেনের সাথে। সেই ঘরে তাদের ১ টি পুত্র সন্তান হয়। ২০১৮ সালে বাপ্পি দেশে ফিরে সুমাইয়ার মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করে এবং এক পর্যায়ে ১ বছর আগে সুমাইয়া ঘর সংসার ছেড়ে বাপ্পির নিকট চলে আসে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা হয়ে ফিরে গেলেও পুনরায় চলে এসে স্বামী স্ত্রীর মত যশোর শহরে ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকে বাপ্পি ও সুমাইয়া। বাপ্পির সাথে সুমাইয়া মাদকাসক্ত হয়ে একাধিক ছেলের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে সুমাইয়া বলে দাবী করে বাপ্পি। যে কারনে রাগে ক্ষোভে সুমাইয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে গত ২৪মার্চ সুমাইয়াকে ডেকে নিয়ে বেনাপোল পুটখালী এলাকায় গিয়ে ফেনসিডিল সেবন করে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে রাত অনুমান ১০টার সময় চাঁপাতলা ঝিনুকদাহ মাঠে নিয়ে হাতের রগ কেটে ও জবাই করে হত্যা করে সুমাইয়াকে। রক্তমাখা কাপড় বাপ্পির মা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে, এবং বাপ্পির চাচা মোটরসাইকেলটি লুকিয়ে রাখে। বাপ্পি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়, পরে ফিরে আসলে আজ ভোরে তাকে আটক করা হয়।