সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪১ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদে ঘরে ফেরা যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে এবং হয়রানি কমাতে রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনালে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক টিম। গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প। এছাড়াও বিআরটিএ, পুলিশ, সিটি করপোরেশন, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের সমন্বয়ে আছে ভিজিলেন্স টিম। যা পরিচালনা করছেন বিআরটিএর একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। মাঠে রয়েছে ভোক্তা অধিকারের টিমও। যাত্রী হয়রানি কমাতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার এত তৎপরতার পরও ভোগান্তি নিয়েই রাজধানী ছাড়তে হচ্ছে অনেককেই। অনেকটা প্রকাশ্যেই কাটা হচ্ছে যাত্রীদের পকেট।
যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের কাছ থেকে ১০০ থেকে ২০০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া রাখছে কাউন্টারগুলো। তবে বেশিরভাগ যাত্রীর অভিযোগ নির্ধারিত দূরত্বের ভাড়া না রেখে পরিবহনগুলো শেষ স্টপেজের ভাড়া রাখছে। অন্যথায় বলা হচ্ছে টিকিট নেই।
শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে গাবতলীতে যাত্রীর চাপ কিছুটা কম ছিল। এরপরও বেশিরভাগ যাত্রী বেশি ভাড়া রাখার অভিযোগ করেছেন।
প্রবাসী সালমান যাবেন যশোরের বেনাপোল। অথচ তার কাছে রাখা হয়েছে সাতক্ষীরার ভাড়া। জাগো নিউজকে সালমান বলেন, পাসপোর্টের কাজে ঢাকায় আসি দুইদিন আগে, এখন ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু সাতক্ষীরার ভাড়া দিতে হচ্ছে। বেনাপোলের ভাড়া ৫৫০ টাকা, অথচ আজ ৮০০ টাকা দিয়ে টিকিট নিলাম।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ স্বীকার করে সাতক্ষীরা লাইন পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার তানজীল রহমান বলেন, অন্য সময় জায়গা অনুযায়ী ভাড়া রাখা সম্ভব হলেও ঈদের মৌসুমে গাড়িগুলো যাত্রী ছাড়াই ফেরত আসছে। ফলে ঢাকায় ফেরার সময় বাসগুলোর কোনো আয় নেই। এ কারণে শেষ স্টপেজের ভাড়া রাখতে হচ্ছে।
এদিকে, রংপুর রুটের যাত্রী আমিনুল রানা অভিযোগ করেন, সব কাউন্টারে প্রথমে বলছে টিকিট নাই। অথচ চাপাচাপি করলে তারা অতিরিক্ত দামে টিকিট বিক্রি করছেন। রংপুরের ভাড়া ৪৫০-৫০০ টাকা হলেও এখন চাচ্ছে এক হাজার টাকা।
এ বিষয়ে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মোহাম্মদ নাসির বলেন, রংপুরের বাসে আমাদের কোনো সিট ফাকা নেই। টিকিট বিক্রি করার প্রশ্নই আসে না। টিকিট বিক্রি করে যাত্রীদের কোথায় বসাবো।
নির্মাণশ্রমিক মোহাম্মদ হাসান বলেন, যাবো দর্শনা, কিন্তু খুলনা পর্যন্ত ভাড়া রাখা হয়েছে। ৮০০ টাকা দিয়ে টিকিট নিলাম।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চাইলে বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফখরুল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, অভিযোগ এসেছে, আমরা যাত্রীদের নিয়ে অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখেছি।
পাঁচ পরিবহনকে জরিমানা
ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি আদায় ও ভাড়ার তালিকা কাউন্টারের সামনে না ঝুলানোয় পাঁচ পরিবহনকে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এর মধ্যে তিনটি পরিবহনকে এক হাজার টাকা করে এবং অন্য দুই পরিবহনকে ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
অভিযানের নেতৃত্বে থাকা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এখানে এসেছি। এটা মূলত বিআরটিএ’র কাজ, আমরা এডিশনাল হিসেবে এসেছি। যাতে করে যাত্রীকে কোনো হয়রানি পোহাতে না হয়। যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ শুনে আমরা বিভিন্ন কাউন্টারে গিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, গাবতলীর সেলফি পরিবহনকে এক হাজার টাকা, শ্যামলী পরিবহনকে ৫০০, সাথী এন্টারপ্রাইজকে এক হাজার, অরিন ট্রাভেলসকে এক হাজার ও শ্যামনগর পরিবহনকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
গাবতলী আসতেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া
ঢাকা ছাড়ার আগে গাবতলী পৌঁছাতে যাত্রীদের সিএনজি, মোটরসাইকেলে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে। মিরপুর থেকে আসা ব্যাংককর্মী সুমনা করিম বলেন, মিরপুর-১১ থেকে গাবতলী পর্যন্ত আসতে ৩০০ টাকা দিতে হলো।
দক্ষিণবঙ্গগামী বাসে যাত্রীর চাপ কম
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উত্তরবঙ্গে যাত্রীর চাপ আছে, ফলে টিকিট সংকট দেখা দিয়েছে। তবে দক্ষিণবঙ্গগামী বাসে যাত্রী কম।
কোটালীপাড়াগামী স্টার লাইনের কাউন্টার ম্যানেজার মাসুদ রানা বলেন, প্রত্যেকটা গাড়িতে ৭-৮টা সিট ফাঁকা যাচ্ছে। এমন অবস্থা বিগত ৫-৬ বছরের মধ্যে হয়নি। তবে শনি ও রোববার যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে।