সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৮ পূর্বাহ্ন
ঢাকার কেরানীগঞ্জের বরিশুর এলাকায় স্ত্রী রেশমা আক্তারের সঙ্গে কাতার প্রবাসী যুবকের পরকীয়ার সম্পর্ক রয়েছে এমন সন্দেহ থেকে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করেন স্বামী নুরুল ইসলাম। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার (২২ মে) রাতে রাজধানীর কাকরাইল এলাকা থেকে নুরুলকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। স্ত্রীকে হত্যার পর গ্রেপ্তার এড়াতে বরিশাল ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন শেষে ঢাকায় ফিরে কাকরাইল এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন নুরুল।
সোমবার (২৩ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) ডিআইজি মাহফুজুর রহমান।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন ১৭ মে সকালে রেশমা ও নুরুল ইসলাম দুজনে মিলে তাদের ছেলে মো. ইয়াসিনকে (১০) মাদরাসায় ভর্তি করাতে যান। মাদরাসা থেকে ফেরার পথে ইয়াসিনকে একা তার নানার বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে দুজনে পাসপোর্ট ফটোকপি করতে যান। এরপরই বেলা পৌনে একটার দিকে নুরুল তার শ্বশুরের বাসায় এসে জানায় রেশমাকে তার ভাড়া করা মেসে আটকে রেখে এসেছেন। রেশমার স্বজনরা মেসের দরজা ভেঙ্গে গলাকাটা রক্তাক্ত অবস্থায় লাশ ফ্লোরে পড়া অবস্থায় দেখতে পায়।
পরে নিহত রেশমার বোন বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত মো. নুরুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা ২ বা ৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান বলেন, ১২ বছর আগে নিহত রেশমা আক্তারের সঙ্গে নুরুল ইসলামের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ১০ বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। বিয়ের কিছুদিন পর স্বামীর অনুমতিতে রেশমা জর্ডান চলে যান। জর্ডানে থাকাবস্থায় রেশমার সঙ্গে নুরুল ইসলামের সাংসারিক জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিবাদ তৈরি হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় তাদের সাংসারিক বনিবনা না হওয়ায় তিন মাস আগে রেশমা তার স্বামী নুরুল ইসলামকে ডিভোর্স দেন। গত ২৮ এপ্রিল রেশমা দেশে ফিরে আসলে স্বামী নুরুল তালাক হওয়া সত্ত্বেও তাকে নিয়ে সংসার করার জন্য রেশমা ও তার মা-বোনসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বিভিন্নভাবে আকুতি-মিনতি করতে থাকেন। একপর্যায়ে রেশমাসহ সবাই নুরুলের কথায় রাজি হয়ে গত ১৫ মে আবারও সংসার শুরু করেন তারা।
গ্রেপ্তার নুরুল ইসলাম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রীকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা র্যাবকে জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, সে পেশায় বাবুর্চি। পাশাপাশি বোরকা তৈরির একটি কারখানা ছিল তার। কিন্তু মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকায় সেই কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। জর্ডান ফেরত স্ত্রী রেশমার সঙ্গে আবারও সংসার শুরু করার দুদিনের মাথায় রেশমার সঙ্গে কাতার প্রবাসী এক যুবকের সম্পর্কের সন্দেহসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিবাদের সৃষ্টি হয়।
নুরুল ক্ষুব্ধ হয়ে পরিকল্পিতভাবে তার স্ত্রী রেশমা আক্তারকে ভাড়া বাসায় নিয়ে ধারালো চাকু দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পরপরই নুরুল ইসলাম আত্মগোপনের জন্য প্রথমে বরিশাল, চাঁদপুর হয়ে চট্টগ্রাম যায়। চট্টগ্রামে দুদিন অবস্থান করার পর সেখানেও নিজেকে নিরাপদ মনে না করে পুনরায় ঢাকা হয়ে বরিশাল যাওয়ার সময় র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন।